হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে কটুক্তি এবং পবিত্র কাবা ঘরকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষ এবং হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাস্থল পাগলাপীর সলেয়াশা ঠাকুরপাড়ার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের কাজও মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। হিন্দু পরিবারগুলো এখন স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে এসেছে। তবে তাদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় রেখে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত দুটি মামলায় মোট ১৫৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়া আলোচিত সেই টিটু এখনও গ্রেফতার হয়নি। হিন্দু পরিবারগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে এলেও পাশ্ববর্তী মুসলিম পরিবারগুলোতে এখনও আতঙ্ক কাটেনি। গ্রেফতার আতঙ্কে ঘটনাস্থলের আশপাশের ৪/৫ গ্রামের মুসলিম পরিবারগুলো এখনও পুরুষ শূন্য রয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গতকালও এসব এলাকায় পুরুষ লোক বাড়ি ফেরেনি। গ্রেফতার আতঙ্কে সকলেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আছে। এসব পরিবারের সদস্যদের মুখে চরম আতঙ্কের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এসব পরিবারে নানামুখী সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এদিকে, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম, পিপিএম সাধারণ মানুষকে হয়রানী করা হবে না জানিয়ে তাদের ঘরে ফেরার আহবান জানিয়েছেন। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারি হাইকমিশনার অভিজিৎ ভট্রাচার্য এবং জাতীয় পাটির মহাসচীব রুহুল আমীন হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারি হাইকমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলেও তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলেননি। তবে জাপা মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, আমরা এ ঘটনায় মর্মাহত। আমি সরকারের কাছে আহবান জানাব একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতে; যাতে অপরাধিদের চহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা যায়। এ ধরনের কর্মকান্ড মেনে নেয়া যায় না।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়টি একটা দুঃখ জনক ঘটনা। ফেসবুকের স্টাটাসটির বিষয়টি আমরা জানার পর তদন্ত করে মামলা নিয়েছি এবং টিটুকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। সংঘর্ষ এবং হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িত নয়, এমন কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা টিটু রায়কে গ্রেফতার করে তার ফেসবুকটা পরেনসিক টেস্ট করে দেখতে চাচ্ছি যে এই ঘটনা সে করেছে কী না। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। যারা নিরীহ লোকজন তাদের গ্রেফতার করা হবে না। তারা নির্ভয়ে বাড়িঘরে থাকতে পারে। যারা সাধারণ মানুষ, নিরপরাধ তাদের বাড়িতে ফেরার আহবান জানাচ্ছি। আমি নির্দেশ দিয়েছি কোন সাধারণ মানুষ যেন হয়রানী এবং গ্রেফতার না হয়। হিন্দু পল্লী এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। তাদের ভয়ের কিছু নেই। সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর মহানবী (সাঃ) ও পবিত্র মক্কা শরীফকে অবমাননা করে ফেসবুকে ছবি আপলোড ও স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামের খগেন্দ্র নাথের পুত্র টিটোর বিরুদ্ধে গঙ্গাচড়া থানায় মামলা দায়ের করেন শলেয়াশাহ লালচাঁদপুর এলাকার আব্দুস ছাত্তারের পুত্র রাজু আহম্মেদ। স্থানাীয় লোকজন টিটোর গ্রেফতারের দাবিতে পাগলাপীরে বিক্ষোভ করে। একই দিনে তাকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া এলাকাবাসী। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার না হওয়ায় শুক্রবার আবারও টিটুকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দেয় এলাকাবাসী। তারা এ নিয়ে মাইকিং ও প্রচারণা চালায়। এরপর সেখানে আরও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জুমআর নামাজের পর শলেয়াশাহ বাজারে কয়েক হাজার মুসল্লী মানববন্ধন করতে থাকে। এতে পুলিশ বাধা দিলে এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে এবং কতিপয় দুস্কৃতিকারী হিন্দুদের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মারা যায়। এসময় ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার পর পুলিশ বাদি হয়ে ২ হাজারেরও অধিক ব্যাক্তিকে আসামি করে সদর ও কোতয়ালী থানায় দুটি মামলা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন