শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পীরগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

অতি-বর্ষণে ভূমিধসের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে মো. আবুল খায়ের : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে অতি বর্ষণ হলে উপজেলার বেশ’কটি গ্রামে ভূমিধসের আশঙ্কা করছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। বেশ কয়েকটি স্থানে মাঝে মাঝে মৃদু কম্পনের ফলে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে বলেও ভুক্তভোগীরা জানান। সরেজমিন পরিদর্শনে এলাকাবাসী জানান, টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর এবং গন্ধর্বপুর গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে পরিবেশ নীতি লঙ্ঘন করে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের বড় রকমের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু মানুষ। ফলে অইসব এলাকায় ভ‚মিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এতে ক্ষতিগস্ত হতে পারে পাঁচ ইউনয়নের অর্ধলক্ষ সাধারণ মানুষ। উপজেলার চতরা, বড় আলমপুর, টুকুরিয়া, চৈত্রকোল, মদনখালী ও পাঁচগাছি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, প্রতাবশালী এক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় কেবলমাত্র টুকুরিয়া ইউনিয়নে করতোয়া ঘেঁষা গ্রামগুলো ছাড়াও গন্ধর্বপুর, গোপিনাথপুর, টিওরমারী, বিছনা, মোনাইল গ্রামে ২০টি পয়েন্টে দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভিত্তিতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই বালুমহালগুলো থেকে প্রতি বছর প্রায় ছয় কোটি টাকা আয় করা হয়। যা থেকে কানাকড়িও সরকারি রাজস্ব খাতে জমা হয় না। দীর্ঘদিন থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভ‚গর্ভস্থ গর্তের সৃষ্টি হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ওই বালুমহালের আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার একর আবাদি জমি ও জনবসতি এলাকা।
সূত্র মতে, ওই বালুমহালগুলোতে প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক প্রতিদিন জনপ্রতি গড়ে ৩০০ টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা আয় করেন। ভ‚মিধস সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এলাকাবাসী ৫০০ শ্রমিকের সাময়িক আয়ে সন্তুষ্ট। বালু উত্তোলনকারীদের তাদের সঙ্গে কথা বলা হলে পরিবেশ বিপর্যয় বা ভ‚মিধস বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে জানান।
অন্যদিকে পরিবেশবিদদের মতে, জনবসতি এলাকায় শ্যালোমেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন পরিবেশ আইনের পরিপন্থী এবং ভ‚গর্ভস্থ সম্পদ ও নদী সম্পূর্ণ সরকারি। তাই এই সরকারি সম্পদ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা বা ভোগ করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এত কিছুর পরও আইনগত কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি পীরগঞ্জের বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে। তাই অভিজ্ঞ মহল জেলা প্রশাসক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের উচ্ছেদ করে পীরগঞ্জে সরকারিভাবেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন করা সম্ভব। তাদের মতে, পীরগঞ্জের উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল ঘেঁষে প্রবাহমান করতোয়া নদী শুধুমাত্র ড্রেজিংয়ের অভাবে উপজেলাবাসীর ভাগ্যে অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। করতোয়ায় চর পড়ে তার গতি পথ পরিবর্তীত হয়ে অনেক জনবসতি এবং আবাদি জমি বিনষ্ট হয়েছে। রংপুর ও দিনাজপুর জেলাকে বিভক্ত করে প্রবাহিত করতোয়ার গতিপথ বদলে যাওয়ায় প্রতি বছর মানচিত্রও বদলে যাচ্ছে এই দুই জেলার। এদিকে করতোয়ার নাব্যতা কমে যাওয়ায় প্রতিবছরই কমবেশি বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে উপজেলার করতোয়া ঘেঁষা গ্রামগুলো। কিন্তু সরকারি উদ্যোগেই করতোয়া ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা, বন্যা মোকাবেলা, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন করা সম্ভব। এতে সরকারের একদিকে যেমন বাৎসরিক কোটি কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, পাশাপাশি এলাকায় ভ‚মিধসসহ বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও কমে যাবে বহুলাংশে। সেই সঙ্গে কৃষি জনপদ পীরগঞ্জে ও নদী ভাঙনজনিত কৃষি ক্ষতি রোধ করে এলাকাবাসীর ভাগ্য বিপর্যয় রোধও সম্ভব হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন