রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বরইতলা গ্রাম ঘেরাও করে হত্যা করা হয় ১০৪ গ্রামবাসীকে

কাজিপুর গণহত্যা দিবস

| প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখ শহীদের রক্তের সাথে মিশে আছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের বরইতলা গ্রামের নাম। ১৭ নভেম্বর বর্বর পাকহানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম গণহত্যার শিকার হয়েছিল এই গ্রামেরসহ আশপাশের ১০৪ জন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সম্ভ্রম হারিয়েছিল দুই গৃহবধু। ফেরার পথে পাকবাহিনি জ্বালিয়ে দিয়েছিল পুরো গ্রাম।
১৬ নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা আশেপাশের অপারেশন সেরে ওই গ্রামের ইব্রাহীম আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। রাতেই এক রাজাকারের মাধ্যমে সংবাদটি পৌঁছে যায় কাজিপুর থানায় অবস্থানরত পাকহানাদার বাহিনীর কাছে। ১৭ নভেম্বর ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পাকবাহিনী গ্রামের সুবিধাজনক স্থান পশ্চিম দিকে অবস্থান নেয়। এসময় গ্রাম পাহারারত দুই মুক্তিযোদ্ধার হাতে তিন পাকসেনা আহত হয়। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়। এ অবস্থায় অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে থাকে। গ্রামের পূর্বপ্রান্তে অল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা একটি নালার মধ্যে বসে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এসময় হানাদার বাহিনীর একটি অংশ কতিপয় রাজাকারের সহায়তায় পুরো গ্রামে তান্ডব চালায়। তারা সুন্দরী দুই নববধূকে নিয়ে আদিম উল্লাসে মেতে ওঠে। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে প্রকাশ্যে গণধর্ষণ করে নরপিচাশের দল। এমনকি মসজিদে আশ্রয় নেয়া ইদ্রীস আলী ও করিম বক্সকে পাকসেনারা পবিত্র কোরআন শরিফ পড়া অবস্থায় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। হত্যা করে অসংখ্য নিরীহ গ্রামবাসীকে। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অভিযোগে ২৭ ব্যক্তিকে দড়ি দিয়ে একত্রে পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা হয় গ্রামের ঠাকুরপাড়া এলাকায়। এখবর ছড়িয়ে পড়লে কুড়ালিয়া, বাওইখোলা, চিলগাছা, গজারিয়া, হরিণা বাগবাটি গ্রামের শত শত মুক্তিযোদ্ধা এসে যোগ দেন পাক হানাদার প্রতিরোধে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত চলে বিরামহীন যুদ্ধ। এ যুদ্ধে সাধারন আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়। একপর্যায়ে পাকসেনারা পিছু হটতে শুরু করে। যাবার সময় তারা বেঁধে রাখা ২৭ গ্রামবাসীর ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ২৬ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন। এ গ্রামের আফসার আলী লাশের স্তূপের মধ্যে নিশ্চুপ পড়ে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। সেইদিনের ভয়াল স্মৃতি নিয়ে আজো তিনি বেঁচে আছেন। তিনি বলেন, কিয়ামত কেমন হবে সেটা বাস্তবে দেখিনি, কিন্তু পাকসেনারা ওই দিন যা করেছে সেটা সাক্ষাৎ কিয়ামত। এই সন্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, সুজাবত আলী ও রবিলাল দাস।
এছাড়া গ্রামবাসী সিরাজুল, আব্দুর রহমান, জবান আলী, আব্দুল হাকিম, গোলজার হোসেন, পÐিতা, মামুদ আলী ও তেছের আলী সহ ১০৪ জন নিহত হন। পাকহানাদার বাহিনীর ছয় সেনা ও এক রাজাকার নিহত হয়। গরুর গাড়িতে করে তারা সেই লাশ নিয়ে যায়। পাকসেনারা চলে যাবার পর ওইদিন রাতে গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা মিলে নিহতদের লাশ দাফন করে।
যুদ্ধে নিহত ৮৭ জনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। প্রতি বছর এই দিনে নিহতদের স্বজনের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে ওঠে বরইতলা গ্রামের বাতাস। যুদ্ধ-পরবর্তি বাংলাদেশে নিহতদের স্মরণে বরইতলা চৌরাস্তার পাশে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন