আবদুল আউয়াল ঠাকুর
গণতন্ত্র প্রত্যাশী জনগণের পক্ষের কোনো শক্তি বললে হয়তো এর ভিন্ন অর্থ হতে পারত। সে কথা থাক। সন্ত্রাস দমনে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়ার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরকারী খোদ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তায় ঘাটতি রয়েছে। আর এ কারণে বিশ্বের অনিরাপদ ৩০টি বিমানবন্দরের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার কার্গো বিমানের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ব্রিটেন। অভিযোগ উঠেছে সরকারি দলের মাস্তানদের বিরুদ্ধে। ব্যাপারটিকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৪ সালে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর থেকে সরকার তার ভাষায় জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে যেভাবে ‘তৎপরতা’ দেখিয়ে আসছে এবং কথিত জঙ্গি দমনের নামে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে যেভাবে নিমর্ূূলের চেষ্টা করছে সে প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের এ সিদ্ধান্ত প্রমাণ করছে কথিত সন্ত্রাসীরা সরকারের ভিতরই রয়েছে। অবশ্যই এ কথা স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়ে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এই প্রথম। পরিস্থিতি কতটা গুরুতর হলে একটি দেশ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা বোধকরি বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না। বলা হচ্ছে, পরিস্থিতির কার্যকর উন্নতি না হলে সিদ্ধান্ত আরও কঠিন হতে পারে। এদিকে ঢাকা এবং লন্ডনের মধ্যে কার্গোবাহী বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার অনুরোধ জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরুনকে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ মার্চ ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি দিয়েছিলেন তার জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সহযোগী দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী চিঠিটি লিখেছেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিদেশি সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা শাহজালালের বর্তমান নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে। এদিকে নীতিনির্ধারকদের সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সিরিজ আলোচনা সত্ত্বেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের অবস্থানের এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকায় বসে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছেন। বিমানবন্দরকে ঘিরে যেসব সিন্ডিকেট রয়েছে বিশেষত কার্গো ভিলেজে শাসক দলের বিভিন্ন নেতার যে আধিপত্য সেটি ঠেকাতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভূমিকার বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে যুক্তরাজ্য। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের নেতৃত্বাধীন টিমের সঙ্গে বেসরকারি বিমান চলাচল মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের যে বৈঠক হয়েছে তাতে ব্রিটেনের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তা না হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারচেয়েও বেশি ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতায় নতুনত্ব কিছু নেই। অনেক দিন ধরেই এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। ৮ মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি লিখেছেন তাতে তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে, ‘সর্বশেষ মূল্যায়নে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ধারাবাহিকভাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি মিসর ও সোমালিয়ায় বিমানে হামলার পর এটি আমার কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়’। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মূলে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী এবং যথাযথ নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণের লক্ষ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাই’। তিনি আরো লিখেছেন, ‘বিমানবন্দরে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি দূর করার লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে একটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে আমি নির্দেশ দিয়েছি’। বিষয়টিকে আপাতদৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রী যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন তার প্রমাণ ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ। চিঠি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, ব্রিটেনের দেয়া শর্ত মানতে সরকারে কোনো আপত্তি নেই। প্রকৃত অবস্থা কী বা কোনদিকে যেতে পারে তা হয়তো বুঝতে আরো একটু সময় লাগবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থা হলো কীভাবে এবং এ জন্য কারা দায়ীÑ সে কথা এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো মহল থেকেই বলা হয়নি। এ কথা বোধহয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, সরকার যে ধরনের দুর্বলতায় ভুগছে এ ক্ষেত্রেও হয়তো তার বাইরে নয়। সে কারণেই সরকার-প্রশাসনে যেভাবে রাজনীতিকরণ, দলীয়করণ অথবা যে ধরনের প্রবণতা সক্রিয় রয়েছে তারই হয়তো বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এখন দেখা যাচ্ছে, গৃহীত কর্মপন্থার কারণে নিরাপদ তো হয়ইনি বরং নিরাপত্তাহীনতার প্রসঙ্গ এখন দেশের বাইরেও উঠছে। এদিকে কথিত নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে বিপন্ন দশায় পড়েছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে কথাই বলছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা ওই সময়ের মোট পোশাক রফতানির ১১.৩৯ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এ বাজারে প্রায় ২০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের ওই সময়ের চেয়ে ২৬.১০ শতাংশ বেশি। বিদ্যমান বাস্তবতা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাজ্যের বাজারে পণ্য রফতানিতে নিশ্চিতভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিজিএমইএ সভাপতি। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এ বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়–ক তা কাম্য নয়। তিনি বলেছেন, এতদিন শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে সরাসরি পণ্য পাঠাতে পারলেও এখন সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে পাঠাতে হবে। এতে খরচ ও সময় দুটোই বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা করেছেন। ফলে রফতানি হ্রাস পাবে এবং বাজার হাতছাড়া হতে পারে বলেও তিনি ধারণা করছেন। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে আমাদের শাক-সবজি ও হিমায়িত চিংড়ি রফতানিতেও বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চিঠি এবং বিমানবন্দর পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এটা বলা যায়, দুনিয়াব্যাপী বাংলাদেশের যে বদনাম হলো তাতে কিন্তু অন্য কারো কোনো ভূমিকা নেই। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ কথা বলা বোধহয় কোনো বিবেচনাতেই বাড়তি বলে মনে হবে না যে, এতটা বদনাম বাংলাদেশ এর আগে আর কখনো কুড়োয়নি। বিশ্বের বিপজ্জনক ৩০টি বিমানবন্দরের সঙ্গে আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তুলনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, কথিত সন্ত্রাসীরা মূলত সরকারের ভিতরেই অবস্থান করছে এবং তারা এতটাই ভয়াবহ যে আন্তর্জাতিক মহলও তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এর পরিমাণ কত তা নিয়ে নিত্য নতুন তথ্য বলা হচ্ছে। পরিমাণের আলোচনায় নানা প্রসঙ্গ থাকতে পারে। কারণ এই রিজার্ভ নিযে সংশ্লিষ্টরা মাঝে-মধ্যেই গর্ব করতেন। তারা মনে করেন এটা সুস্থ ও গতিশীল অর্থনীতির আলামতবাহী। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করে আসছেন। তারা মনে করেন শুধু রিজার্ভ কোনো ইতিবাচক নয়। তবু ধরে নেয়া ভালো, টাকা আছে এটাই বা কম কথা কি? কথায় বলে, টাকা থাকলে বাঘের চোখও মেলানো যায়। যদিও বাঘের চোখ মেলানো সংক্রান্ত একজন সাবেক আমলা তার আত্মজৈবিকমূলক বইয়ে বলেছেন, কেউ তো আর বাঘের চোখ দেখেনি। ফলে যা কিছু বাঘের চোখ বলে চালিয়ে দেয়া যায় সেটাই সঠিক বলে বিবেচিত হয়। যাই হোক এখনকার অবস্থা হলো সেই ‘গর্বে’র রিজার্ভেও হাত পড়েছে। সেটি হয়তো অন্য বিবেচনাতে দেখা যেত যদি বিষয়টি অন্তত প্রচলিত নিয়মে হতো বা হতে পারত। যা ঘটেছে তাতেও হয়তো একটা বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে তবে তা সুনামের নয়, দুর্নামের। ঘটনার পর অনেক দিন এটা জনগণ জানতে পারেনি। ক্ষোভে-দুঃখে সরকারের অর্থমন্ত্রী যখন বাংলা বলতে ভুলে গেছেন তখন কিন্তু সরকারেরই একজন খুব চুপিসারে বলছিলেন, অন্য কোথাও জানানো হয়েছিল। বিবিসিতে এতটুকু কথাই এসেছে। এর আর কোনো বিবরণ নেই। তাই বলা যাবে না অন্য কোথাও বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তার বিবরণ দেয়া সম্ভব নয়। এতে এটুকু অন্তত বলা যায়, এ নিয়ে পদত্যাগী গভর্নর এবং অনেকে যা বলছেন তার সঙ্গে হয়তো কোথাও ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লোপাট হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে অনেক কথাই হচ্ছে এবং হবে এটাই স্বাভাবিক। যে প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, ব্যাপারটিকে কিন্তু আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। গত কয়েক বছরে হলমার্ক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে এটিএম বুথ কেলেঙ্কারি পর্যন্ত অর্থ জালিয়াতির অনেকটা পথ হেঁটেছে দুর্বৃত্তরা। মাত্র কদিন আগে এটিএম জাল-জালিয়াতির সঙ্গে ধরা পড়া বিদেশি যখন দেশীয় রাঘববোয়ালদের কথা বলছিল তার কদিন পরই দেখা গেল দেশীয় রাঘববোয়ালদের নামের পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশিত হলো। অন্য সময় হলে হয়তো তদন্তকারীদের সূত্র উদ্ধৃত করে এটিএম জালিয়াত চক্রের নামও প্রকাশিত হতো। এক্ষেত্রে কেন তা হয়নি বা হতে পারেনি সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাবার কোনো অবকাশ নেই। এখানেই মূল প্রশ্ন। এযাবৎকাল দেশের অর্থ যারা লোপাট করেছে তাদের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন কোনো প্রমাণও কিন্তু নেই। আমাদের আইটি খাতকে অনেক শক্তিশালী মনে করা হয়। এ খাতে বিপুল অর্থ ব্যয়িত হচ্ছে। প্রকাশিত রিপোর্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার সময়ে সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। এখন যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে কার্যত তা অনুমান অথবা অন্য কোনো ভিত্তির ওপর। এমন কথাও বলা হচ্ছে, প্রকৃত আসামিদের ব্যাপারে কিছুই করা হচ্ছে না। আবার যাদের নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে তারাও নাকি তদন্তে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পদত্যাগী গভর্নরের পদত্যাগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তিনি অন্তত চুরির সঙ্গে জড়িত এমন সন্দেহ জনমনে নেই। তার দায়দায়িত্ব এবং ঘটনা চেপে যাওয়ার ব্যাপারটি সন্দেহের ঊর্ধেŸ নয়। হয়তো এ ব্যাপারে তারও কিছু একান্ত কথা থাকতে পারে, যা জানতে হয়তো আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। যাই হোক, কথা হচ্ছে ক্যাশ টাকা লোপাটের বিষয়টি নতুন নয়। এর সঙ্গে প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততার সন্দেহও নতুন কিছু নয়। আর এসবই হচ্ছে বা হতে পারছে নিরঙ্কুশ দলীয়করণের কারণে। এ ক্ষেত্রেও বলা যায় দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে তারা নয় বরং যাদের অশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেছে তারাই এখন জনগণের মাথায় বাড়ি দিতে শুরু করেছে। বর্তমান আমলে সরকার এমন এক শ্রেণিকে পেলে পেলে গড়ে তুলেছে যারা হয়তো সরকারের কিছু বিশেষ নির্দেশ পালনে মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক। তবে তারা জনগণের কোনো তোয়াক্কা যে করছে না এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এরা দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নে সম্পৃক্ত ও কখনো কখনো সহযোগী। এমন ঘটনা বাংলাদেশে কখনই ঘটেনি যে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরণের সঙ্গে যুক্তরা থানা পুলিশকে ভয় করেনি। এখন সেটি হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে থানা-পুলিশই বরং তাদের সমিহ করছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছে। এ অবস্থার মূল কারণ নিয়ে না ভেবে আপাত সমস্যার দিকে চোখ দিয়ে কোনো লাভ নেই। একে আইওয়াশ বলা ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাবের রাজশাহী ব্যুরো চিফ রেজাউল করিম রাজু সময়ের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সম্প্রতি এক জম্পেশ আড্ডায় নানা বিষয় নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় ওঠে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনজীবী, নেতা চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকার, সাংবাদিক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরো বেশ ক’জন। আলোচনায় দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্নীতি, হয়রানি, আইনশৃঙ্খলাও স্থান পায়। হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন বিশেষ করে শিশুহত্যা নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করা হয়। কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম। আলোচনায় পুলিশ জনগণের বন্ধু না শত্রু এমন প্রশ্ন ওঠে। একজন প্রশ্ন করেন, এমন একটি থানা দেখান যে তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি বা হয়রানির অভিযোগ না আছে। রয়েছে ওয়ান স্টú সার্ভিস। কিন্তু সাধারণ মানুষ সেখান থেকে কতটুকু সার্ভিস পাচ্ছে? টাকা ছাড়া একটা জিডি হয় না। জিডি লিখে নিয়ে গেলেও বলা হয় এটা হয়নি। প্রাসঙ্গিক আলোচনার পর মুখ খোলেন সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, খালি খালি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এককভাবে দোষারোপ করেন কেন? পুলিশের অতীত ইতিহাস তো এমন নয়। মোদ্দাকথা, আমাদের অসুস্থ রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে সবখানে। আমাদের সর্বত্র বাজে অবস্থা। এই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার মতে, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে থানার ওসির ভূমিকা দলের ছায়া সভাপতি-সেক্রেটারির। মন্ত্রী-এমপির আশীর্বাদপুষ্টদের কথামতো না চলায় কত ওসি-এএসআইদের নাজেহাল হতে হয়েছে তার খবর কি আপনারা রাখেন? দলের জন্যও অর্থের জোগান দিতে হয়। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত অনেক চাহিদা মেটাতে হয়। পুলিশকে দলের লাঠিয়াল বাহিনী করলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বোধকরি এই আলোচনা আর দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই হয়তো এর সঙ্গে একমত হবেন। এক্ষেত্রেও মূল বিবেচ্য হচ্ছে, জনগণের স্বার্থ দেখার পরিবর্তে জনগণের ঘাড়ের উপর চেপে বসার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার কারণেই গোটা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। এক ধরনের আস্কারার গোপন বার্তা কোনো না কোনোভাবে দুর্বৃত্তদের কাছে রয়েছে। সেটাই হচ্ছে আজকের সময়ের সবচেয়ে বড় ও মুখ্য সমস্যা।
জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়ার নেতিবাচক পরিণতি হিসেবে বর্তমান অবস্থাকে শনাক্ত করাই সঙ্গত। কার্যত ভোটাধিকার হরণের মধ্যদিয়ে জনগণের মত প্রকাশের প্রাথমিক ইউনিটের ওপর যে আঘাত এসেছে তারই প্রতিফল হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা। মূলত জবাবদিহিতার অভাবেই সামগ্রিক নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সমাজে মারাত্মক নৈরাজ্য বাসা বেঁধে বসতে শুরু করেছে। এর নিরসন করতে হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন