কুমিল্লা উত্তর সংবাদদাতা : “ওরা ৫ জন অপরাধ জগতের স্বঘোষিত স¤্রাট”। তারা এলাকার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাংগা বাজারসহ আশপাশ এলাকার অপরাধ জগৎকে ৫ বছর ধরে তারাই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এ অঞ্চলের মানুষ এই মুকুটহীন ৫ সন্ত্রাসীর নামে ভীতসন্ত্রস্ত। তারা সরকারি দল আওয়ামী লীগের নামধারী বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। দুর্ধর্ষ এ ৫ জন সন্ত্রাসীর অধীনে ৫০ জনের এক সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট গ্রুপ রয়েছে। এহেন অপরাধ নেই যা তারা করছে না। এই সন্ত্রাসী বাহিনী মেঘনা নদীতে ১৫টি বালুমহাল ও বিভিন্ন পণ্য বহনকারী ট্রলার থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করে থাকে ১০ লাখ টাকার উপরে। এসব অপরাধ রাজ্যকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ৫ বছরে চালিভাংগা গ্রামের মানসুর, মোঃ হানিফ, হাবিবুল্লা ও ফরাজিকান্দি গ্রামের আনার মিয়াসহ ৭টি হত্যাকা- সংঘটিত করেছে। সন্ত্রাসের ওই ৫ জন নায়কের বিরুদ্ধে একাধিক খুনের মামলা আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে গত মাসের ১৬ ফেব্রুয়ারি। সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করায় ওইদিন চালিভাংগা বাজারে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে যুবলীগ কর্মী মোঃ আবদুল্লাকে। শত শত মানুষ এ দৃশ্য দেখলেও প্রতিবাদ করার সাহস করেনি। আর যারা প্রতিবাদ করেছে তারাও আবদুল্লার মতো খুনের শিকার হয়েছে। ভয়ঙ্কর এ ৫ জন সন্ত্রাসীর নাম কাইয়ুম, হুমায়ুন, মিজান, ছানাউল্লাহ ও দাইয়ান। তারা চালিভাংগা ও নলচর গ্রামের বাসিন্দা। এই সন্ত্রাসীরা একের পর এক রোমহর্ষক হত্যাকা- সংঘটিত করে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তুলেছে এ অঞ্চলে। তারা এ অঞ্চলের একক অধিপতি। অপরাধ জগতের মুকুটহীন স¤্রাট। তারা এখন পুরো এলাকা দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ভয়ঙ্কর ৫ জন সন্ত্রাসী কিলারের ছবি সংবলিত পোস্টার এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় লাগিয়ে দিয়েছে। পোস্টারে ওই ৫ সন্ত্রাসীর ফাঁসি দাবি করা হয়েছে। পোস্টারে সন্ত্রাসী কাইয়ুম ৩ খুনের আসামি, ছানাউল্লাহ ৫, মিজান ২, দাইয়ান ২ ও সন্ত্রাসের গডফাদার হুমায়ুন ৪ খুনের আসামি উল্লেখ রয়েছে। সন্ত্রাসীদের হাতে একের পর এক খুনের ঘটনায় এলাকার রাজনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সুশীল সমজের নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এসব কিলারকে গ্রেফতার করে অইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিন চালিভাংগা বাজারসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে ও লোকজনের সাথে কথা বললে এসব তথ্যচিত্র ফুটে উঠে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চালিভাংগা ইউনিয়ন থেকে সন্ত্রাসী মোঃ হুমায়ুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর থেকে এই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। গড়ে তুলে ৫ সদস্যের আরেকটি “অপরাধ পরিকল্পনা কমিটি”। এরপর সন্ত্রাসের গডফাদার হুমায়ুনের নেতৃত্বে শুরু হয় অপরাধ জগতের রাজ্য পরিচালনা। শুরু হয় ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি। মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন শত শত বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ট্রলার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা যাতায়াত করে থাকে। এসব নৌপথের পরিবহন থেকে দৈনিক ৩/৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে হুমায়ুন-কাইয়ুম বাহিনী। এছাড়াও মেঘনা নদীতে ১৫টি বালুমহাল থেকে দৈনিক চাঁদা তুলে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। অব্যাহতভাবে চাঁদাবাজি করে গত ৫ বছরে সন্ত্রাসের ৫ নায়ক একেকজন কোটি টাকার মালিক বনেছেন। সন্ত্রাসীদের এসব অপকর্মের যে প্রতিবাদ করে তার ওপর নেমে আসে বর্বরোচিত হামলা-মামলা, অত্যাচার-নির্যাতন আর খুন। সন্ত্রাসীরা এখানকার অপরাধ রাজ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকার প্রতিবাদী লোকদের একের পর এক হত্যা করে জনমনে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে তাদের একক আধিপত্য গড়ে তুলে। ফলে এ এলাকা এখন এক সন্ত্রাসের ভয়াল জনপদে পরিণত হয়েছে। এদিকে তাদের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চালিভাংগা বাজারে প্রকাশে যুবলীগ কর্মী মোঃ আবদুল্লাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। নিহতের ভাই বাদী হয়ে ১৮ জনকে আসামি করে মেঘনা থানায় মামলা দায়ের করেছে। চাঞ্চল্যকর আবদুল্লা হত্যার সাথে জড়িত অভিযোগে মেঘনা পুলিশ গাফফার ও রনি নামের দুই দাগি সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। মেঘনা থানার ওসি ইনকিলাবকে বলেন, এলাকা এখন শান্ত আছে। এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম বলেন, একটি অশুভ শক্তি এই সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। আমার বিশ্বাস দলমত নির্বিশেষে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একদিন এর সমুচিত জবাব দেবে। এ সময় বেশি দূরে নয়। সেক্রেটারি রতন সিকদার বলেন, সন্ত্রাসীরা যেভাবে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে চাঁদাবাজি আর খুনের নেশায় মরিয়া হয়ে উঠেছে তাতে করে এলাকার মানুষ এখন এক অজানা খুন আতঙ্কে আছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসের গডফাদার হুমায়ুনসহ মূল ৫ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা ছাড়া এলাকায় শান্তি ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, জনগণ ক্ষেপে গেলে পরিস্থিতি সমাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। চালিভাংগা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ অবিলম্বে এসব দাগি সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। সেক্রেটারি নুরুল আমিন সন্ত্রাস ও কিলিং মিশনের গডফাদার হুমায়ুনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, তা না হলে এলাকার জনগণ মাঠে নামলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে সন্ত্রাসীদের কোনো জায়গা নেই। তাদের কারণে দল বদনামে পড়েছে। সন্ত্রাসের গডফাদার হুমায়ুনকে দল থেকে অবিলম্বে বহিষ্কারেরও দাবি জানান। চালিভাংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুনের বক্তব্য নেয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব সন্ত্রাসের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে সন্ত্রাসের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন