শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড গরিবদের আইনি সেল

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অসহায়, হত-দরিদ্রদের আইনি সেবা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সুপ্রিম কোর্ট এইড কমিঠি। সারা দেশে জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড সব চেয়ে বেশি আইনি পরামর্শ প্রদান করেছে বলে জানা যায়। প্রতিমাসে ৭৮ জন করে আইনি পরামর্শ দেয় সুপ্রিম কোর্ট এইড। দায়েরকৃত মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি শতকরা ৫৬ শতাংশ। চলতি বছর বিনা বিচারের দীর্ঘ দিন কারাবন্দি রিপনসহ বেশ কয়েকজন লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে কারামুক্তিও মিলে। প্রতিদিনই বাড়ছে তাদের আইনি সেবার মান। দেশের উচ্চ আদালতে লিগ্যাল এইড কমিঠি এখন যেন গরীবদের আইনি সেলে পরিণত হয়েছে। গতকাল রোববার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সাত বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক বন্দিদের তালিকা চেয়ে কারা মহাপরিদর্শককে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস চালু করার ফলে একদিকে যেমন অস্বচ্ছলদের আইনি সেবা পাচ্ছেন অন্যদিকে উচ্চ আদালতের মামলার চাপও কমছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি গরিব-অসহায় মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র যে ভূমিকা অতীত থেকেই রেখে আসছে আমরা সেটি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে আইনজীবীরা প্রায় বিনা টাকায় আইনি সেবা দিচ্ছেন। এটা গরীবদের জন্য বিরাট একটি প্রাপ্তি। তিনি আরো বলেন, এটা মূলত অর্থের অভাবে যারা মামলা পরিচালনা করতে পারে না তাদের নিয়েও কাজ করছে। বর্তমানে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম অনেকাংশ বাড়ছে। গরীব মানুষেরা এখানে এসে যে কোন একটি আইনি সেবা পাচ্ছেন। বলে চলে গরীবদের জন্য একটি আইনি আশ্রয় কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড।
সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইডের কো. অর্ডিনেটর রিপন পৌল স্কু ইনকিলাবকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড গরীব বান্ধব একটি সেলে পরিণত হয়েছে। আমরা অত্যন্ত যত্মসহকারে অসহায় ও নি:সম্বল হত দরিদ্রের সেবা প্রদাণের চেস্টা করা যাচ্ছি। যাতে করে সরকারি এই্ সেবা দেশের তৃণমল পর্যায়ে পৌছানো যায়। সূত্রে জানা যায়, জাতীয় আইন সহয়তা আইন, ২০০০ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট ‘সুপ্রিম কোর্ট কমিটি’ গঠন করা হয়। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনজীবীর ব্যয়ভার বহন করবে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। সরকারের সাথে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ২০১১ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে সহায়তা দিয়ে আসছে। কমিটিতে প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। ২০১৫ সালের ৮ জুন মাসে লিগ্যাল এইডের কাজক্রম পরিচালনার জন্য সুপ্রিমকোর্টে নতুন এনেক্স ভবনে কাজ শুরু করে। সেবা প্রদানের যোগাযোগের জন্য একটি হট লাইন আছে। যে কেউ এখানে এসে তাদের আইনি সেবা পেতে পারেন।
গত ৩১ অক্টোবর গত ২৭ মাসের কাজের পর্যালোচনা হয়। এতে দেখা যায়, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি প্রতিমাসে প্রায় ৭৮ জনকে বিনামূল্যে আইনগত পরামর্শ প্রদান করছে। গত দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৭ শত ৩৭ জনের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। একইসঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টে ৪শত ১৪টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছর প্রায় দুইশ জনকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়। হয়েছে। এছাড়া পাঁচশজনকে আইনগত পরামর্শ দেয়া হয়। শেরপুর থেকে আগত নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, আমরা গবীর মানুষ। এখানে বিনা পয়সায় মামলা চালানোর জন্য আসলাম। তাই মামলার কাগজ জমা দিয়েছি। দেখি যদি বিনা টাকায় মামলাটি নিষ্পত্তি করা যায়। তাতেই সন্তুুষ্ট।
গত ৩০ অক্টোবর কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে গত ২৭ মাসের কাজের পর্যালোচনা হয়। গত ১৮ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়াম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, বিনামূল্যে সরকারি আইনি সহায়তার জন্য ‘লিগ্যাল এইড’ এর কাজকে আরও বেগবান করতে এর শক্তিশালী এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পাওয়া উচিত।
৬৮টি কারাগারে চিঠি: বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সাত বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক বন্দিদের তালিকা চেয়ে কারা মহাপরিদর্শককে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দিদের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠানোর হয়। চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি দেশের উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা নিশ্চিতকরণে কাজ করে চলছে। নিম্ন আদালতে বিচারে জন্য প্রস্তুুত হওয়া মামলাসমূহ সাক্ষ্যগ্রহণসহ নানাবিধ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। ফলে কার্য্যত সাজা হওয়ার পূর্বেই আটক বন্দি দীর্ঘদিন যাবত কারাভোগ করছেন। সরকারি আইনি সেবা সুনিশ্চিত করার তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ ও হালনাগাদ তালিকা প্রয়োজন। ৭ বছরের ঊর্ধ্বে আটক থাকা হাজতিদের তালিকা লিগ্যাল এইডে পাঠালে অস্বচ্ছল হাজতিদের আইনি সহায়তা দেয়া করা সম্ভব হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় নাগরিকদের আইনি সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করা হয়। এ আইনের অধীনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। সংস্থাটির অধীনে দেশের ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি বিনামূল্যে আইনি সেবা নিয়ে কাজ করছে। ২০১৫ সাল সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্ধোধন করনে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mab Siddique ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৩০ পিএম says : 0
বিরাট আশায় আলো দেখলাম। আমি একজন বয়স্ক (৬৬) এখন অভাবগ্রস্ত। আমার ২ দাগ আবাদি জমি একটি ১৬ শঃ আমার দলিলী ক্রয় ১৯৯৩ ইং এবং আরএস রেকর্ড চূড়ান্তসহ ২৮ বছর ভোগদখল। অন্যটি ২৪ শঃ আমার পিতার ১৯৫৩ সনে ক্রয়ী দলিল এবং ৭১ এ পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিকভাবে আমার মা এটি পান এবং আরএস রেকর্ড চূড়ান্ত হয়; জমিটি ৬৮ বছর আমার ভোগদখল। হঠাৎ ৯/৮/২০ তাং একজন জমিতে দখলের চেষ্টা চালালে আমি জানতে পারি এবং বাধা দেই। ১১/৮/২০ থানায় অভিযোগ, ১২/৮/২ এ ১৪৪/১৪৫ মামলা ২৬/৮/২০এ ইউনিয়ন পরিষদে, ২৭/৮/২০ এডিসি (রাজস্ব)এ ১৫০ মিচকেস দায়ের করি। যা সবই চলমান। জানতে পারি আমার কেনা ২৭ বছর অথচ ২০১৫তে ঐএকই জমি আরও কিছু জমির সাথে এসএ রেকর্ড মূলে আমার মায়ের জমিও দলিল করে অতিগোেপনে এলএসটি, ছানি মামলা একতরফা ডিক্রীতে ভূমি নায়েবের ঘুষ বানিজ্য সহায়তায় নামপত্তন করেছে। আইনি পরামর্শে জানতে পারি ঐ রায়ডিক্রী বাতিল করে নাম পত্তন পূনরায় সংযোজন করতে হবে যা মাননীয় হাইকোর্টের এখতিয়ার। তাই আমার ঐকান্তিক চাওয়া যদি আপনারা বা আপনাদের কোনো মহত্ত্ববান আইনজীবী একদম ন্যুনতম খরচে আন্তরিকভাবে উপকারটুকু করে একজন অত্যাচারিত নিপিড়ীতকে সাহায্য করেন তাহলে কৃতজ্ঞ হই। অনেক আশায় - ধন্যবাদ। সিদ্দিকী
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন