শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সুপ্রিম কোর্ট বারের সব ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্নার আবেদন

হিন্দু নেতাদের প্রতিবাদে সাধারণ আইনজীবীদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ১২:১৪ এএম

সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সব ক্যান্টিনে নিয়মিত গরুর গোশত রান্না এবং বিক্রির আবেদন জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বারের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান বার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত এ আবেদন দেন।

গত মঙ্গলবার কয়েকজন হিন্দু আইনজীবী নেতাদের ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না ও পরিবেশনের প্রতিবাদের পরদিন তিনি এই আবেদন জানালেন। গরুর গোশত রান্না করায় কয়েকজন হিন্দু আইনজীবী আগের দিন প্রতিবাদ জানান। এ ঘটনায় সাধারণ আইনজীবীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। গতকাল বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট বার সদস্যদের আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। এ পরিস্থিতিতে মাহমুদুল হাসান বারের সব ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না ও পরিবেশনের আবেদন জানান।

অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম তার পাল্টা আবেদনে গরুর গোশতের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গরুর গোশত বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বৈধ একটি খাবার। বাংলাদেশের কোনও আইনে গরুর গোশতকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। যুক্তরাজ্যের ‘এগ্রিকালচার অ্যান্ড হর্টিকালচার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’র তথ্য অনুযায়ী, গরুর গোশতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি-৬, বি-১২, মিনারেল, জিংক রয়েছে। এটি প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। গরুর গোশতের পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে এবং দেশের মানুষের প্রোটিন চাহিদা নিশ্চিতে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ৪ দশমিক ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আধুনিক পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে।

আবেদনে আরও বলা হয়, গরুর গোশত অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী তা অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। এছাড়া আমাদের পাশের দেশ ভারতের সব রাজ্যে গরু জবাই ও গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, গোয়া, কেরালা, তামিলনাড়ু, মিজোরাম, মেঘালয়, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে গরু জবাই করা নিষিদ্ধ নয়। এছাড়া ২০১৭ সালে ভারত সরকার প্রাণীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইনে (প্রিভেনশন অব কালচারাল টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট) গবাদি পশু জবাইয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে দেয়।

অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান আবেদনে বলেন, প্রকৃতপক্ষে, কোনও খাবার খাওয়া বা না-খাওয়া মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও রুচীর বিষয়। স্বাস্থ্যগত কারণে বা বিশ্বাসজনিত কারণে কেউ গরুর গোশত অপছন্দ বা নাও খেতে পারেন। তাই বলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে ক্যান্টিনগুলোতে গরুর গোশত রান্না বা বিক্রি হবে না, এ বিষয়গুলো অত্যন্ত অমানবিক। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক পরিশ্রম করেন। তাই আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিতে বার অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে সব ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না ও বিক্রি হওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত কারণে বা বিশ্বাস জনিত কারণে যারা গরুর গোশত খেতে চান না, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা উচিৎ।

উল্লিখিত বিষযগুলো বিবেচনায় নিযে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে সব ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না ও বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের উদ্যোগ নিতে আবেদনে অনুরোধ জানানো হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার আইনজীবী সমিতির ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্নার ঘটনায় ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’র সুপ্রিম কোর্ট শাখার নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানান। একইসঙ্গে ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমিতির বর্তমান কমিটির প্রতি আহবান জানান তারা। আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি বিভাস চন্দ্র বিশ্বাসসহ চার আইনজীবী ওই আবেদন করেন। আবেদনটিতে স্বাক্ষরকারী অন্য আইনজীবীরা হলেন, আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সম্পাদক অনুপ কুমার সাহা, আইনজীবী সমিতির বিজয়া পুনর্মিলনী ও বাণী অর্চনা পরিষদের আহবায়ক জয়া ভট্টাচার্য্য এবং সদস্য সচিব মিন্টু চন্দ্র দাস।

আবেদনে বলা হয়, আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারলাম যে, গত ২৯ ও ৩০ মে রাতে সুপ্রিম কোর্ট বার ক্যান্টিনে গো মাংস রান্না করা হয়, রাতে তা খাবারের জন্য পরিবেশন করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ঐতিহ্যগতভাবেই এর সৃষ্টিলগ্ন হতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকায় কখনোই গো মাংস রান্না ও পরিবেশন করা হয় নাই। তাই সুপ্রিম কোর্ট ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা চান তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Md Riyad Hossain ৩ জুন, ২০২১, ৪:২৯ এএম says : 0
৯০% মুসলিম দেশে গরুর মাংস রান্না করতে আবেদন করতে হয়। অদৌ কি আমরা স্বাধীন
Total Reply(0)
Abdul Alim ৩ জুন, ২০২১, ৪:২৯ এএম says : 0
বাপের বেটা আছে তাহলে বাংলার মাটিতে
Total Reply(0)
ভারপ্রাপ্ত চেতনাবাজ ৩ জুন, ২০২১, ৪:৩০ এএম says : 0
দিন দিন চেতনা চরম আকার ধারণ করছে।
Total Reply(0)
Atik Khan ৩ জুন, ২০২১, ৪:৩০ এএম says : 0
Eto dine shunlam Court cantain ee goror gosto ranna hoi na....Halal food Muslim deshe cholbe na...obak lagee shunle...
Total Reply(0)
Minhaz Alam ৩ জুন, ২০২১, ৪:৩০ এএম says : 0
সুপ্রিম কোর্টের কেন্টিনে গরু মাংস রান্না হবে ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
Najmul Hasan ৩ জুন, ২০২১, ৪:৩০ এএম says : 0
কয়দিন পরে কুরবানী নিশিদ্ধ করা হবে কারন এতে হিন্দুরা কষ্ট অনুভব করবে
Total Reply(0)
Md Nadim ৩ জুন, ২০২১, ৪:৩১ এএম says : 0
হিন্দু নেতার মনে করছে এটা বাংলাদেশ না এটা ভারত। ভারতে যেমন সব জায়গায়ে গরু গোশত খাওয়া যায় না। সে রীত টা তারা বাংলাদেশে করতে চায়। ছাগুরা ভূলে গেছে এটা যে মুসলিম দেশ।
Total Reply(0)
Anwar Hossen Anik ৩ জুন, ২০২১, ৪:৩১ এএম says : 0
মুসলিম দেশে গরুর মাংস রান্নার ক্ষেত্রে আবার আবেদন করতে হয় কেন? দেশে আইন কি হিন্দু নীতিতে চলে??
Total Reply(0)
Yamin Khan ৩ জুন, ২০২১, ৪:৩১ এএম says : 0
সুপ্রীম কোর্টের ক্যান্টিনে গরু, মুরগিসহ সব ধরণের মাংস রান্না করা হোক। সেখানে সব ধর্মের মানুষ খায়। ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি নয়, প্রকৃত মানুষ হতে হবে আমাদের।
Total Reply(0)
মাহমুদ গজনবী ৩ জুন, ২০২১, ১১:১১ এএম says : 0
বাংলাদেশী হিন্দুরা যে আসলে কতোটা সাম্প্রদায়িক এর প্রমাণ হলো এই কর্মকান্ডে। বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাব অসাম্প্রদায়িক দেশ। এটা মোদির ভারত না যে এখানে গরুর মাংস রান্না করা নিষিদ্ধ করা হবে। এখানে গরুর মাংস সহ সব রান্না করা হবে, যার যেটা খাওয়ার সে সেটা খাবে, বাকিগুলো খাবে না। এটা নিয়ে এতো লাফালাফি করার কি আছে? তারা কি বাংলাদেশকে রামরাজ্য পেয়েছে নাকি যে গরুর মাংস রান্না নিষিদ্ধ করবে? এদের স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। বাংলাদেশে থেকে এতো সুযোগ সুবিধা পেয়েও এদের আশ মিটে না। কিছুদিন পর তো কোরবানী নিষিদ্ধ করার ও ইসলামিক কৃষ্টি-কালচার পালন করার বিরুদ্ধে এরা আওয়াজ তুলবে। একটা হোটেলে সব ধরণের খাবার রান্না হবে, এরা গরুর মাংস না খেলেই তো হলো। এখন এটা নিয়ে এরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো পাঁয়তারা করছে।
Total Reply(0)
Ali Hossain ৩ জুন, ২০২১, ১২:১৫ পিএম says : 0
যারা মুসলিম এবং খৃষ্টান,আশা করি তারা গরুর মাংস খেতে পারবেন আর হিন্দু এবং বৌদ্ধরা আশা করি নিরামিষ খাবার খেতে পারবেন। যদিও সুপ্রিম কোর্টের কেন্টিনে গরুর মাংস রান্না করা খাবার পরিবেশনের উপর বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা থাকা জরুরি। পৃথিবীর সকল মানবজাতির খাদ্যের জন্য প্রার্থনা রহিল।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন