সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আ.লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

কুমিল্লা-৫ : বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বুড়িচং (কুমিল্লা) থেকে আলমগীর হোসেন : কুমিল্লা-৫ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া নির্বাচনী আসনটি দুই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ত্রিমুুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের গ্রæপিং থাকলেও চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গ্রেটার ইন্টারেস্টে শেষ পর্যন্ত ঐক্যমত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা ও ওঠান বৈঠক করে গেলেও নীরবে কাজ করছে বিএনপি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে বিএনপিও আশাবাদী, গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি যে খেসারত দিতে হচ্ছে, সে কালিমা থেকে মুক্তি পেতে যে কোনোভাবেই হোক এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেই। আওয়ামী লীগ থেকে আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার জন্য বরাবরের মতো সাবেক আইনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশের আইনমন্ত্রী হয়ে অবহেলিত বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ার জনগণের জন্য সেতু, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভ‚ক্তিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করেছেন। অধিকন্তু, তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন বিধায় দলমত নির্বিশেষে আবদুল মতিন খসরুর নির্বাচনে জয় লাভের আলাদা একটি কারিশমা রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার সোহরাব খাঁন চৌধুরীর সাথে মতিন খসরু গ্রæপের বৈরিতা থাকলেও নির্বাচনের আগেই তা মিটে যাবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবং ব্যারিস্টার সোহরাব খাঁন চৌধুরী দলীয় মনোনয়নের আশাবাদী হলেও না পেলে দল যাকে মনোনয়ন দেন তিনি সে পক্ষে কাজ করে যাবেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ একটি বড় দল বিধায় সেখানে নেতাকর্মীদের মাঝে বৈরীভাব থাকতেই পারে। তবে আওয়ামী লীগ নিয়ে আমজনতার মনোভাব আরো আশাবাদী। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের ড্রেন ভেজা আর বিএনপির ড্রেন শুকনা। ডিপ মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করলে ‘ ‘ভেজা ড্রেন দিয়ে যেমন খুব তাড়াতাড়ি পানি গন্তব্যে পৌঁছে, ঠিক তেমনি আ.লীগের অবস্থা। আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকর্মীরা বিগত প্রায় ১০ বছর খেয়ে অনেকটা ভেজা বা সিক্ত ড্রেনের মতো স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে।
বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ এস এম আলাউদ্দীন।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগ বড় দল তাই নেতাকর্মীদের মাঝে মান-অভিমান থাকতেই পারে। এসব নিয়ে দলের মধ্যে কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি নেই। আসন্ন নির্বাচনে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাবে। এমন নজির এখানকার আওয়ামী লীগ আগেও দেখিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির শওকত মাহমুদ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আবার মনোয়নের আশায় বসে নেই অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ ও শিল্পপতি এ এস এম আলাউদ্দীন।
এদিকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী জাতীয় পার্টির নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তাজুল ইসলাম ও বসে নেই। তিনি বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া জাতীয় পার্টির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তবে তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ, তাজুল ইসলাম অত্র আসনের জাতীয় পার্টি থেকে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বুড়িচং উপজেলায় যেভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, ঠিক তেমনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সাধারণ ভোটারের দাবি, তিনি বুড়িচং উপজেলার অধিবাসী হলেও ব্রাহ্মণপাড়ার জনগণের সাথেও যেন সমানভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যান।
বর্তমানে ওই আসনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বহাল আছে। তবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ওই আসনটি আবারও ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলে ও বিএনপি নীরবে বসে থাকবে না। তাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ত্রিমুখী লড়াই জমে ওঠবে। শেষ হাসি কে হাসবে তা বলা মুশকিল। সাধারণ ভোটারা বলাবলি করছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান লড়াই হবে ফাঁক দিয়ে জাতীয় পার্টি জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ক্ষমতায় জাতীয় পার্টি না থাকলে ও পল্লীবন্ধু এরশাদের আদর্শের কথা এখনো ভুলতে পারেননি বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার সাধারণ মানুষ। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের প্রিয় উক্তি ‘আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, নাঙ্গলের ফলা থেকে ওঠে আসা অতি আন্তরিক আমার ভালোবাসা’ ইত্যাদি উক্তির মর্মার্থবোধ এখনো গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলে আসছে। তাই সাধারণ ভোটারদের সঠিক ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনোরকম হেরফের না হলে ফের জাতীয় পার্টি ওই আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন