বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এক শহর থেকে আরেক শহর, এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। আজ ঢাকা তো কাল রাজশাহী-চট্টগ্রাম, আবার পরের দিন সিলেট-রংপুর, ময়মনসিংহ। এভাবেই ছুটতে হচ্ছে তাদের। এর ফলে একদিকে যেমন ব্যয় হচ্ছে বিপুল পরিমান অর্থ, অন্যদিকে শারীরিক ও মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এজন্য গত কয়েকবছর ধরেই কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। আবার কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিলে একদিনেই (প্রকৃতপক্ষে এক ঘণ্টা) একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ অথবা ঝরে যেতে পারে বলে এর বিরোধীতাও করেছেন অনেকে। পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের কারণেই আটকে আছে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি। তবে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট লাগব করা উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরী সভা ডেকেছে মন্ত্রণালয়। বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধার কারণে এতদিন আটকে থাকা এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে এই সভা ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ৬ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ এবং ভর্তি পদ্ধতির পলিসি গাইড লাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিষয়ে করণীয় নির্ধারনী সভায় উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এছাড়া বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, সকল সদস্য, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার সব কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান বাধা ছিল। নানা চাপে এবার তারা একমত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী মাসে ভিসিদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত বছর ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করার সময় প্রসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো: আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগবের জন্য গুচ্ছভর্তি পদ্ধতিতে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তার এই নির্দেশ এবারও ভর্তি পরীক্ষায় বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ভর্তি পরীক্ষার জটিলতা দূর করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, অনলাইনে যদি আমরা ঘরে বসে কেনাকাটা করতে পারি, তাহলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারব না? আমরা ভবিষ্যতে সব ভর্তি পরীক্ষাই অনলাইনে করার ব্যবস্থা করব। সন্তানদের দূরদুরান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
চলতি মাসে রাজধানী ঢাকা ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ঘোষণা দেন, আগামী বছর দেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি মৌসুম থেকে চালু হচ্ছে গুচ্ছভর্তি পদ্ধতি। বিদ্যমান সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ভর্তির আদলে নেয়া হবে এই ভর্তি পরীক্ষা। সবগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে ইউজিসি।
ইউজিসির কর্মকর্তারা বলেন, এই বিষয় আরও দশ বছর আগে উদ্যোগ নিলেও প্রথমসারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে শিক্ষার্থীদের। একই দিনে ভর্তি পরীক্ষা পড়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগের দিন একটিতে পরীক্ষা দিয়েই পরদিন অন্যটিতে পরীক্ষায় অংশ নিতে ছুটতে হয় দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, দেড়-দুই মাস সময় নিয়ে পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নিতে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ক্লান্ত হয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চাপ দেয়া ছাড়া আর কোন পথ বাকী নেই। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এমন অভিব্যক্তির পর শিক্ষামন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। বর্তমানে গুচ্ছভর্তি পদ্ধতিতে পরীক্ষায় মাধ্যমে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলগুলো।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের এ কথা আমি শুনেছি। গুচ্ছভিত্তিক ভর্তির ব্যাপারে আমরা সব সময় প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ অভিপ্রায় মানতে আমরা এটি নিয়ে কয়েক দফা চিঠিও দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মধ্যে এক অভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নিতে সম্মত হয়েছে। আশা করি আগামী ভর্তি মৌসুমে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কমন অনুষদগুলোর গুচ্ছভর্তি চালু করা জন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক করে ভর্তির জন্য সুপারিশ ছিল ইউজিসির। এ বিষয়ে আবদুল মান্নান জানান, ব্যবসা অনুষদে ভর্তির বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মীজানুর রহমান ইতিবাচক মত দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তির প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন