শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) থেকে শিহাব মল্লিক : আজ ২৬ নভেম্ববর। ’৭১-এর এই দিনে ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রামে পাক হানাদর বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল দেশের সূর্যসন্তান ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনটিকে কামান্না দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অজোপাড়াগাঁ ‘কামান্না’। অবস্থানগত সুবিধার কারণে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গ্রামটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাটি গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ নভেম্বর রাতে শৈলকুপাকে শত্রæ মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ৪২ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরেন। তারা কামান্নার মাধবচন্দ্র ভৌমিকের পরিত্যক্ত বাড়িতে অবস্থান নেন। ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধার দলনেতা ছিলেন শৈলকুপার আলমগীর ও শ্রীপুরের আবু বকর। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর স্থানীয় রাজাকাররা ঝিনাইদহ মাগুরার পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। এদিন মুক্তিযোদ্ধারা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোর রাতের দিকে মাগুরা ও শৈলকুপা থেকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান স্থল চারিদিকে ঘিরে ফেলে। শুরু করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। অতর্কিত আক্রমণে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধারা হতচকিত হয়ে যান। তারপর প্রস্তুতি নিয়ে পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পাওয়ার আগেই শত্রুর গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়েন। হানাদারদের ভারি অস্ত্র-সস্ত্রের সামনে মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেল ও স্টেনগান নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান একে একে ২৭ জন শহীদ হন। বাকি ১৩ জন যোদ্ধা আত্মগোপন করেন। ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছামেনা বেগম, তিনি একটি গর্তের ভেতর সাত-আটজন মুক্তিযোদ্ধাকে রেখে উপরে খড় বিছিয়ে লুকিয়ে রাখেন। পাকসেনারা চলে গেলে তারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। হানাদাররা যাওয়ার সময় গ্রামটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধে আহত এক মুক্তিযোদ্ধাকে পানি খাওয়াতে গেলে বৃদ্ধ রঙ্গ বিবি ও ফনিভ‚ষন কুন্ডু নামের দুই গ্রামবাসীও নরঘাতকদের হাতে শহীদ হন।
এ ছাড়াও হানাদারদের রাতভর বিক্ষিপ্ত এলোপাতাড়ি গুলিতে কয়েক গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন। পরদিন সকালে ভোরের আলো ফুটে উঠার আগেই পাক হানাদাররা গ্রাম ছেড়ে শৈলকুপায় চলে আসে। সকালে খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে জনতা এসে ভিড় জমায় তারা এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশগুলো একত্রে করে কামান্না হাইস্কুলের পাশে দাফন করেন। পাঁচটি গণকবরে ২৭ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। শহীদের রক্তস্নাত পবিত্র স্থানটি সংরক্ষণ বা স্মরণীয় করে রাখার মতো কিছুই নির্মিত হয়নি। তাদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি এ এলাকাবাসীর। মিনারের গায়ে লেখা আছে ২৭ বীর শহীদের নাম। তারা হলেন- মোমিন, শহিদুল, কাদের, ছলেমান, রাজ্জাক, ওয়াহেদ, রিয়াত, আলমগীর, মতলেব, আলী হোসেন, শরিফুল, আলিমুজ্জামান, মনিরুজ্জামান, আনিচুর, তাজুল, মাছিম, রাজ্জাক, কওছার, সালেক, আজিজ, আকবর, সেলিম, হোসেন, রাশেদ, গোলজার, অধীর ও গৌর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন