মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লিবিয়ায় নিলামে দাস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে আফ্রিকার তরুণ অভিবাসীরা

এএফপি : | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লিবিয়ায় আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসীদের দাস হিসেবে নিলামের ভিডিও ফুটেজ দেখে বিশ্বনেতারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে হয়ত দেরি করেননি, কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা কয়েক মাস আগেই এ বিপদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যদিও তাতে কেউই কর্ণপাত করেননি।
সাহায্য কর্মী, মানবাধিকার গ্রপ ও বিশ্লেষকগণ বলছেন, তারা যুদ্ধ কবলিত লিবিয়ায় অভিবাসীদের ধর্ষণ, নির্যাতন ও জোরপূর্বক কাজ করানোর ব্যাপারে চিৎকার করে আসছেন।
সিএনএন গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে ত্রিপোলির কাছে তরুণ আফ্রিকান অভিবাসীদের দাস হিসেবে নিলামে বিক্রি করার ছবি তুলেছে। ১৪ নভেম্বর সে ফুটেজ সম্প্রচার করার পর পশ্চিমা ও আফ্রিকান নেতাদের মধ্যে নিন্দার জোয়ার শুরু হয়।
এ ছবি দেখে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুয়েটেরেস মন্তব্য করেছেন ভয়াবহ। আফ্রিকান ইউনিয়ন প্রধান বলেছেন- অপমানজনক। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ নিলামকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ফ্রান্স এ ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
তবে এনজিও ও বিশেষজ্ঞরা বিশ^নেতাদের ভন্ড বলে অভিযুক্ত করেছে।
থিংক ট্যাংক লা আফ্রিক দ্য আইদিস-এর সেনেগালি বিশ্লেষক হামিদু অ্যান বলেন, সাধারণ মানুষের সাথে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, রাজনৈতিক নেতারা প্রত্যেকেই ব্যাপারটি জানেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পশ্চিম আফ্রিকা পরিচালক আলিউন টাইন বলেন, লিবিয়াতে জিম্মিকরণ, সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণ সংঘটিত হচ্ছে। তাছাড়া আমরা অভিবাসীদের দাসত্ব নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছি।
২০১১ সালে মোয়াম্মর গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর লিবিয়া গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে নিপতিত হওয়ার পাশাপাশি ইউরোপগামী সাব সাহারান আফ্রিকানদের এক বিশাল ট্রানজিট কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
ইইউ উদ্বাস্তু স্রোত ঠেকাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সাল থেকে ১৫ লাখেরও বেশি উদ্বাস্তু লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। তবে নেতৃবৃন্দ ভূমধ্যসাগরের অপর পারে আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য সমাধান খুঁজে বের করতে হিমসিম খাচ্ছেন।
এ মাসে লিবিয়ার কোস্টগার্ডদের প্রশিক্ষণ দেয়া নিয়ে ইইউ জাতিসংঘের তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, এর ফলে অভিবাসীদের ভয়ংকর কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
ইইউর সমর্থনে ইতালি এক বিতর্কিত চুক্তির অংশ হিসেবে অভিবাসী বহনকারী বোটগুলোকে বাধা দেয়ার জন্য লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর ফলে জুলাই থেকে ইউরাপে অভিবাসী আগমন ৭০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে যে এ নীতির ফলে অভিবাসীদের লিবিয়াতে ফিরিয়ে নেয়ার পর তারা নির্যাতন, ধর্ষণ, বলপূর্বক শ্রমদান ও চাঁদাবাজির ঝুঁকির শিকার হচ্ছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন বলেন, লিবিয়াতে অভিবাসীরা যে অকল্পনীয় ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সে ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।
ব্রাসেলস থেকে ইইউ জাতিসংঘকে পাল্টা জানিয়েছে যে তাদের কোস্টগার্ড প্রশিক্ষণ অভিবাসীদের জীবন রক্ষায় সাহায্য করছে। এ বছর ভ‚মধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ৩ হাজারেরও বেশি অভিবাসী সাগরে ডুবে মারা গেছে। ইইউ লিবিয়া থেকে ১০ হাজার অভিবাসীকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে সাহায্য করেছে বলে দাবি করা হয়।
লিবিয়ায় শ্রমদাসসহ ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ার পর গাম্বিয়ায় কারামো কেইটা দেশে ফিরে ইউরোপ গমনের ব্যাপারে তরুণদের সতর্ক করার জন্য একটি গ্রæপ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেপ্টেম্বরে এএফপিকে তিনি বলেন, লিবিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গদের কোনো অধিকার নেই। তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন কৃষি খামারে নিয়ে যাওয়া হত যেখানে লিবীয়রা আমাদের দাস হিসেবে বিক্রি করত। আমরা বিনা পয়সায় খামারে কাজ করেছি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী বিষয়ক সংস্থা এপ্রিল রিপোর্টে এমন বাজারের কথা বলে যেখানে অভিবাসীদের বিক্রির পণ্য করা হয়। কয়েকমাস পর চিকিৎসা সেবা সংস্থা মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ার্স -এর প্রধান জোয়ানে লিউ ইউরোপীয় সরকারগুলোর কাছে লেখা খোলা চিঠিতে বিকাশমান অপহরণ, নির্যাতন ও চাঁদাবাজি ব্যবসা সম্পর্কে সতর্ক করেন।
তিনি প্রশ্ন করেন, অভিবাসী স্রোত রোধে তাদের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত ইউরোপীয় সরকারগুলো কি ধর্ষণ, নির্যাতন ও দাসত্বের মূল্য দিতে রাজি? আমরা এ কথা বলতে পারি না যে আমরা এ ব্যাপারে জানতাম না।
অ্যামনেস্টির টাইন বলেন, যে কোনো মূল্যে অভিবাসীদের আগমন রোধের প্রচেষ্টা নেয়া ইউরোপ লিবিয়ার ভয়াবহ পরিস্থিতির মৌলিক দায় বহন করে। এমনকি অন্যরাও। তিনি বলেন, আফ্রিকার দেশগুলো তাদের তরুণদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশে রাখার জন্য কিছু করছে না।
বিশ্লেষক হামিদু অ্যান আরো বলেন, আফ্রিকার মাগরেব দেশগুলোতে ধারাবাহিক বর্ণবাদের পাশাপাশি উন্মোচিত বিপর্যয়ের জন্য আফ্রিকান নেতারা আংশিক দায়ী। এটা চলতে পারে না। তিনি বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সম্মুখীন হয়ে আপনারা তার নিন্দা করছেন না।
এ কেলেংকারি জানাজানি হওয়ার পর ক্ষুদ্র দেশ রুয়ান্ডা লিবিয়া থেকে ৩০ হাজার আফ্রিকানকে গ্রহণ করেছে।
অভিবাসী কমিশনার দিমিত্রিস আভরামোপুলাস বৃহস্পতিবার এএফপিকে বলেন যে ইইউ গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্যার সমাধান বের করার জন্য কাজ করছে।
টাইন বলেন, ২৯-৩০ নভেম্বর আবিদজানে অনুষ্ঠেয় ইইউ-এইউ শীর্ষবৈঠকে দাসত্বের বিষয়টি আলোচ্য বিষয় হিসেবে থাকা প্রয়োজন। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদু ইসুফু ইতোমধ্যেই এ ধারণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে যে কিভাবে মানব পাচার সংগঠিত করা হয় এবং এর পিছনে কে। তিনি বলেন, প্রত্যেককে অবশ্যই তার দায়িত্ব নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মোঃ আনোয়ার আলী ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ২:১৪ এএম says : 0
এখনও এগুলো হয় ?
Total Reply(0)
তামিম ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:৩২ পিএম says : 0
এই ঘটনার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
বশির ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৫:১২ পিএম says : 0
এখন বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোথায় ?
Total Reply(0)
সাজিদ ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৫:১৩ পিএম says : 0
এই পরিস্থিতির জন্য কারা দায়ি ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন