বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আ.লীগের শিখর বিএনপির কবীর মুরাদ নির্বাচনী প্রচারণায় তৎপর

মাগুরা ১ : সদর ও শ্রীপুরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাগুরা থেকে সাইদুর রহমান : একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাগুরায় নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে। আর এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বসে নেই, শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচারনা। মাগুরা সদর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে মাগুরা-১ সংসদীয় আসন। এ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডাঃ এম এস আকবরের মৃত্যুতে আসনটি শুন্য হয়। শুন্য এ আসনে ভোটার বিহীন উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আব্দুল ওহহাব সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে তখনই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল মাগুরা- ২ আসনের বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মরহুম আছাদুজ্জামানের পুত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরসহকারি একান্ত সচিব এড. সাইফুজ্জামান শিখর মনোনয়ন পাচ্ছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্তে মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আব্দুল ওহহাব মনোনয়ন পান। এরপর থেকে সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা-১ আসনে আগামীতে প্রার্থী হবেন এ লক্ষ নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকেন। তিনি মাগুরা স্টেডিয়াম আধুনিকিকরণ, মাগুরার রামনগর থেকে আবালপুর পর্যন্ত সড়ক চার লেন, মাগুরায় রেললাইন স্থাপনের উদ্ভোধনসহ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা গত সরকার বিরোধী আন্দোলনের কারণে মামলায় জড়িয়ে পুলিশি নির্যাতনে পলাতক থাকে, তখন ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা শ্রীপুর এলাকায় ব্যাপক সভা সমাবেশ করে নিজের অবস্থান তৈরীতে ব্যাস্ত থাকেন। পরবর্তীতে নির্বাচনের গুঞ্জন শুরু হলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে দলের নেতা কর্মীদের দায়িত্ব নিতে পারবেন না, এমন ঘোষনা দেয়ার পর এ আসনের সংসদ সদস্য এটিএম আব্দুল ওহহাব নড়ে চড়ে ওঠেন। তিনিও এলাকায় শুরু করেণ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণাসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে তার সাথে দলীয় নেতাদের তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। তিনি এলাকার ব্রিজ-কালভার্ট রাস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছেন। এবার তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ দিকে সাইফুজ্জামান শিখরের সাথে বিভিন্ন কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যোগ দিচ্ছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুমার কুন্ডু বলেন, মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগসহ অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীরা তরুন নেতৃত্ব চাচ্ছে। আর এ কারণে সাইফুজ্জামান শিখরকে তিনি যোগ্য বলে মনে করেন। এ আসনে আলীগের আর যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা হচ্ছেন, জেলা আওয়ামী লীগেরসহ সভাপতি সাবেক মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু নাসির বাবলু, সাবেক জেলা পরিষদের প্রশাসক এড. সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরসহ সভাপতি পংকজ সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের তরুন নেতা সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা আমীর ওসমান, শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিয়া কুতুবুল্লাহ হোসেন কুটি, সাবেক ছাত্র নেতা কাজী রফিকুল ইসলাম। মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকের নাম শোনা গেলেও প্রচার প্রচারনায় সাইফুজ্জামান শিখর এবং বর্তমান সংসদ সদস্য এটিএম ওহহাব ছাড়া কাউকে দেখা যাচ্ছেনা।
এদিকে আগামী নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে বিএনপির সক্রিয় প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কবীর মুরাদ ছাড়া তেমন প্রার্থী দেখা যাচ্ছে না। আর যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে সাবেক ছাত্র নেতা মনোয়ার হোসেন খান বিগত আন্দোলনের সময় ঢাকায় অবস্থান করলেও মাগুরার মঘির ঢালে প্রেট্রোল বোমায় ৫ জন নিহত ঘটনার মামলার আসামী হিসেবে দীর্ঘদিন বিদেশে রয়েছেন। তবে তিনি মনোনয়ন প্রার্থী এবং দল তাকে মনোনয়ন দিলে সে নির্বাচনে জয়লাভ করবে বলে জানান। সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা মনোয়ার হোসেন খান বিদেশে থাকলেও সার্বক্ষনিক যোগাযোগ এবং মাগুরা- ১ আসন থেকে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে টেলিফোনে জানান। অপর দিকে ইতিপূর্বে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল আখতান খান কাফুর প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন। তবে ইকবাল আখতার খান বিগত আন্দোলন সংগ্রামে সম্পুর্ন নিরব ভুমিকা পালন করে। তিনি সরকারি দলের নেতা কর্মীদের সাথে আতাত করে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে দলীয় নেতা কর্মীদের উপেক্ষা করে নিজের ইমেজ নষ্ট করে ফেলেছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। বারবার দল বদল বিপদে আপদে নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ খবর না রাখায় দলে তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে যারা সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের মধ্যে বিগত আন্দোলন সংগ্রামের সময় একমাত্র কবীর মুরাদ মাগুরা জেলা বিএনপি সভাপতি হিসেবে বেশ কিছু নেতা কর্মীকে সাথে নিয়ে মামলা হামলা পুলিশি নির্যাতনের মধ্যে কর্মকান্ড চালিয়ে যান। প্রায় দেড় ডজন মামলা ঘাড়ে নিয়ে নিদারুন কষ্টের মধ্যে দিন কাটান। একদিকে মামলার আর অপরদিকে পুলিশি নির্যাতনে দিশেহারা হয়ে কর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। ২০১৪ সালে যখন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে তার বিদ্যুৎ লাইন ও পানি বন্ধ করে দেয়া হয় তখন সারা দেশের মধ্যে কেবল মাত্র বগুড়া এবং মাগুরায় ৩৬ ঘন্টা হরতাল পালন করা হয়। মাগুরার কর্মসুচিতে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নেতৃত্ব দেন কবীর মুরাদ।
তাছাড়া বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত থেকে দলের জন্য কাজ করে গেলেও তেমন কোন মূল্যায়ন পায়নি। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন এ আশা করছেন। আর এ আশা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গনসংযোগ দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহনসহ নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সাহায্যসহযোগীতা করে যাচ্ছেন। এ আসনে দলের বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী, সাবেক যুব নেতা বর্তমান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আহসান হাবীব কিশোর আশাবাদি দল তাকে মনোনয়ন দেবে এবং সে দলকে ভাল কিছু উপহার দিতে পারবে। এ ছাড়া মনোয়ার হোসেন খান, শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বদরুল আলম হীরো মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মাগুরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এড. হাসান সিরাজ সুজা ও জাসদের এক অংশের সাধারণ সম্পাদক এটিএম মহব্বত আলী এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন