শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বাড়তি দামেও মিলছে না বাচ্চা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় হুমকির মুখে ঘাটাইলের পোল্ট্রি শিল্প

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা
বহুজাতিক কোম্পানির কবলে পড়ে ধ্বংসের মুখে পড়েছে ঘাটাইলসহ টাঙ্গাইল জেলার পোল্ট্রি শিল্প। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, এই জেলায় রেজিস্ট্রিকৃত লেয়ার খামার সংখ্যা ১২৬৯ ও ব্রয়লার খামার সংখ্যা ১৬৭৮টি। অন্যদিকে জেলা পোল্ট্রি শিল্প রক্ষা মালিক সমিতির তথ্য মতে, এ জেলায় ছোট-বড় খামার আছে ৩০ হাজারের বেশি। তাদের মতে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ মাংস ও ডিমের চাহিদার জোগানদাতা এই জেলা। কিন্তু বর্তমান সময়ে বহুবিধ আগ্রাসনের কবলে পড়ে স্ব-উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রান্তজনের এই শিল্প এখন ধ্বংসের পথে। বিগত দিনে খাদ্যে ও ডিমে সিন্ডিকেট হলেও এবার তারা বেছে নিয়েছেন অন্য পন্থা। পোল্ট্রি শিল্পের অন্যতম উপাদান হলো একদিন বয়সী বাচ্চা। তাদের মতে, বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে একদিন বয়সের বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এদিকে বাড়তি দাম দিয়েও বাচ্চা পাচ্ছেন না খামারিরা। চাহিদার তুলনায় বাচ্চা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার কারণে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ খামারিরা। কোম্পানিগুলো নিজেরাই মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য জারি রেখেছে কৃত্রিম সংকট। যার ফলে স্ব-উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রান্তজনের এই শিল্প এখন ধ্বংসের পথে। ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই একদিন বয়সী বাচ্চার জন্য হাহাকার। খামারিরা জানান, দুই মাস আগে একদিন বয়সের ব্রয়লার বাচ্চার দাম ধরা হতো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এখন সেই বাচ্চার দাম ধরা হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আগে লেয়ার বাচ্চার দাম ধরা হতো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এখন সেই বাচ্চার দাম ধরা হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। খামারিরা আরো জানান, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত একদিন বয়সের বাচ্চাগুলো আইন ভঙ্গ করে মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য নিজেদের খামারে ব্যবহার করছে। এতে করে বাজারে বাচ্চার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রান্তিক খামারিরা দাম বেশি দিয়েও চাহিদা মোতাবেক বাচ্চা পাচ্ছে না। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী, গোপালপুর, ভূঞাপুর ও মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। তাদের আরো অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে বাচ্চার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো নিজেরা মাংস ও ডিম উৎপাদনে নিয়োজিত হচ্ছে। যার ফলে একসময় তৃণমূলের খামারগুলো বাচ্চার অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে তারা বাজারে ডিম ও মাংসের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ইচ্ছামাফিক মুনাফা করতে পারবে। সরকারের দুর্বলতা আর আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দিনের পর দিন সরকারের চোখের সামনেই এই চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে বলেই তারা মনে করছেন। ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী আঞ্চলিক পোল্ট্রি ফিড ডিলার যুব উন্নয়ন সমিতি লিঃ-এর সভাপতি আব্দুল মালেক মুক্তি জানান, নানা সংকটের মধ্য দিয়ে একজন খামারিকে দিন পার করতে হয়। ভাইরাসজনিত রোগব্যাধির জন্য খামারিকে ২৪ ঘণ্টাই সজাগ থাকতে হয়। এ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। অধিকাংশ খামারি এই যুদ্ধে পরাজিত। তারপরেও যে দু-একজন জয়ী হয় বা যখনই এই শিল্পের একটু সুদিন আসে তখনই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নতুন নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হয়। তিনি আরো বলেন, এর জন্য অন্যতম দায়ী সি.পি কোম্পানি। বহুবার এই সি.পি কোম্পানির বিরুদ্ধে খামারিরা আন্দোলন করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ভূঞাপুর উপজেলার লেয়ার পোল্ট্রি মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর বলেন, ভাইরাসজনিত রোগে অনেকগুলো খামারের মুরগি মারা গেছে। যেসব খামারের মুরগি মারা গেছে তারা নতুন করে বাচ্চা উঠাবে কিন্তু বাজারে কোনো কোম্পানির বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চা না পাওয়ায় ওই খামারিদের পথের ফকির হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী গ্রামের লেয়ার মুরগির খামারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুই মাস আগে বাচ্চার অগ্রিম টাকা দিয়ে এখনো অনেক খামারি চাহিদা মোতাবেক বাচ্চা পাননি। কোম্পানির কাছে জানতে চাইলে বলে উৎপাদন কম। কিন্তু তা সত্য নয়। আমাদের কাছে খবর আছে সি.পি অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে সিন্ডিকেট করে তাদের ইন্ট্রিগেশন প্রোগ্রাম আবার চালু করে মাংস ও ডিম উৎপাদন শুরু করেছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের মহাসচিব খন্দকার মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি তুলেছি এই বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসনের হাত থেকে এই শিল্পকে রক্ষার জন্য। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সরকার আমাদের দাবি আমলে নেয় না। আমরা খামারিরা দেশের মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আমরা মনে করি, দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বহুজাতিক কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। যেমন পার্শ¦বর্তী দেশ ভারত করেছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিনয় কুমার নাগ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সরকারিভাবে একদিন বয়সের বাচ্চা উৎপাদনের কার্যক্রম চালু হয়েছে, যা দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। যেসব বহুজাতিক কোম্পানি এসব কাজে জড়িত হাইকোর্টে একটি মামলা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। সরকার পোল্ট্রি শিল্প রক্ষায় যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। অচিরেই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন