বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মোটরসাইকেলে কর্মসংস্থান

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নলছিটি (ঝালকাঠি) উপজেলা সংবাদদাতা : নলছিটি উপজেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদের শত শত বেকার যুবক মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগে এক শ্রেণির অপরাধীচক্র মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
জানা যায়, নলছিটি উপজেলা সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে এক শ্রেণির বেকার যুবক মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। তারা একসময় বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে রাস্তাঘাটে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। অনেকের নাম ছিল পুলিশ প্রশাসনের তালিকায়। তারা এলাকায় ঢুকলেই মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হতো। এদের নামে নানা ধরনের অপবাদ ছিল। অনেকেই সেই অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে নিজস্ব উদ্যোগে মোটরসাইকেল যোগে যাত্রী পরিবহন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। নলছিটি উপজেলার শতশত বেকার যুবক মোল্লারহাট, তালতলা, নাচনমহল, রানাপাশা, মানপাশা, দপদপিয়া, বরিশাল শহর, বাকেরগঞ্জ, রাজাপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের নিজস্ব পোশাক, গাড়ি রাখার স্থান না থাকার কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল মালিকদের।
নলছিটি উপজেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে শতশত যুবক দিন-রাত যাত্রী পরিবাহনে ভাড়ার মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকেন। এতে প্রতিদিন মোটরসাইকেল মালিকের জমা, তেল ও মবিলের খরচ টাকা বাদ দিয়ে গড় পাঁচ-ছয় শ’ টাকা আয় করেন। ওই টাকা দিয়ে জীবিকার তাগিদে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার পরিচালনা করতে হয়। উঠতি বয়সের যুবকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে প্রতিদিনই বিভিন্ন রুটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে এক শ্রেণির যুবকরা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলা অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবী মোটরসাইকেল, টমটম, ডাইসু ড্রাইভার। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের তালিকা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করছিল। প্রতিদিন নতুন নতুন ড্রাইভার মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার কারণে পুলিশের খাতায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের সঠিক সংখ্যা জানা নেই। যাত্রী পরিবহনকারী মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের নিয়ে একাধিক সংগঠন থাকলেও কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এখানের ড্রাইভারগণ খেয়াল-খুশিমতো মোটরসাইকেল রাখা, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ভাড়া নির্ধারিত না থাকার কারণে যাত্রীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ওই সকল মোটরসাইকেল ড্রাইভার এখন সকলেই সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের লোক পরিচয় দিচ্ছেন।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা মোটরসাইকেল চালানোর স্বার্থে সবাই আওয়ামী লীগের লোক। স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, যাত্রী পরিবহনকারী ড্রাইভারদের নির্ধারিত পোশাক, মোটরসাইকেল রাখার স্থান, নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট থাকা অত্যান্ত জরুরি। তিনি আরও বলেন, ফিল্ড থেকে অফিসে আসার পথে, এক পথচারী যাত্রীপরিবহনের মোটরসাইকেল মনে করে গাড়ি থামিয়ে নলছিটি শহরে আসতে চায় এবং ভাড়া টাকা কত জিজ্ঞাসা করেন। তবে ড্রাইভারদের নির্ধারিত পোশাক থাকলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। তাই ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের পোশাক সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ ব্যাপারে বারইকরণ গ্রামের মোটরসাইকেল ড্রাইভার মো. সোহেল (২০) জানান, এখানের অধিকাংশ মোটরসাইকেল ড্রাইভার জীবিকার তাগিদে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। তবে সরকারি আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মোটরসাইকেল কেউ চালায়ই না। নলছিটি থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম সুলতান মাহমুদ বলেন, উপজেলার উঠতি বয়সের ছেলেরা মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে।
এ বয়সে তারা নানা অপরাধে জড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। নাচনমহল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেশের অধিকাংশ অপরাধ মোটরসাইকেল দ্বারা সংঘঠিত হচ্ছে। নলছিটি উপজেলার যুবকরা মাদকের কারণে বিপথগামী করছে। তাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তারা যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটের ভালো-মন্দ খবর রাখেন। নলছিটি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল শরীফ জানান, দক্ষিণাঞ্চলের শতশত মানুষ মোটরসাইকেল দ্বারা যাত্রী পরিবহন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তারা বেকারত্বের কারণে সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করত। এখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় আগের চেয়ে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন