সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মনোনয়নে চ্যালেঞ্জের মুখে সিলেটের এমপিরা

সিলেটজুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফয়সাল আমীন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনেই মনোনয়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন এমপিরা। ইতোমধ্যে সবক’টি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজ দলের ভেতরেই পরস্পরের মুখোমুখি। এ নিয়ে আ.লীগের অভ্যন্তরে বিভেদ, বিরোধ তীব্রতায় পৌঁছেছে। এই বিবাদে এখনই মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত-বিব্রত। শোডাউন-পাল্টা শোডাউনে দলের পাশাপাশি নিজের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে স্বস্তিতে নেই মন্ত্রী-এমপিরাও। আ.লীগের ঘরে প্রার্থীতা নিয়ে যতটা না বিরোধ প্রতিপক্ষ বিএনপি অনেক আসনেই রয়েছে স্বস্তিতে। প্রার্থীরা মাঠ ছাড়া থাকলেও কর্মী-সমর্থকরা এ নিয়ে বিভক্ত বা বিব্রত নয়। বেশ কয়েকটি আসনে একক প্রার্থী মাঠে কাজ শুরু করেছেন ইতোমধ্যে। স্থানীয় আ.লীগ নেতারা জানিয়েছেন, এই বিরোধের কারণে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের কড়া মূল্য দিতে হতে পারে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসন। এ আসনগুলোর মধ্য এখন চারটি আওয়ামী লীগের দখলে। আর দু’টি শরিক দল জাতীয় পার্টির।
সিলেট-১ আসনের পরপর দুই বারের এমপি হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবার আবুল মাল আবদুল মুহিত এই আসন থেকে প্রার্থী হবেন কী না সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই জানিয়েছিলেন তিনি আর নির্বাচন করবেন না। এই অবস্থায় এ আসনে তার বিকল্প হিসেবে জাতিসংঘ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি একে আবদুল মোমেন ওয়ার্মআপ করেছিলেন। কিন্তু মোমেনের ওয়ার্মআপে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী সিলেটে তোড়জোড় শুরু করেছিলেন। এ কারণে অর্থমন্ত্রী দুই মাস আগে নিজেই ঘোষণা দেন তিনি এখনো প্রার্থী হিসেবে আছেন। এরপর থেকে সেই আলোচনা কিছুটা কমে গেছে। তবে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ্ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে মিসবাহ্ উদ্দিন সিরাজ তার বলয় নিয়ে পুরোপুরি মাঠে সক্রিয়।
সিলেট-২ আসনেও এবার আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হিসাব। এ আসনে আওয়ামী লীগের ভেতরে প্রার্থীর অভাব নেই। গেল সংসদ নির্বাচনে এই আসনটিকে সমঝোতার ভিত্তিতে ছাড় দিয়েছেন সাবেক এমপি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। এবার তিনি ছাড় দিতে নারাজ। এ কারণে গেল সংসদ নির্বাচনের পর থেকে তিনি মাঠে সক্রিয়। তবে স্বস্তিতে নেই শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ আসনের আওয়ামী লীগের বড় অংশের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থীতা চাচ্ছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের একটি অংশ প্রকাশ্য সভা করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছে। আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ মাঠে কাজ করছে। এ নিয়ে ওই এলাকার রাজনীতিও কিছুটা উত্তপ্ত। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়াও এ আসনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জগলু চৌধুরীও মাঠে নেমেছেন। উপজেলা নির্বাচনে তিনি ওসমানীনগর থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে পরাজয় বরণের পর থেকে তিনি জাতীয় নির্বাচনে মাঠে সক্রিয়। জগলু চৌধুরীর আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এ আসনের আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।
সিলেট-৩ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। পরপর দুই বারের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ আসনের আ.লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী। এ কারণে গেলো কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যেই মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপির বিরোধিতা প্রকাশ্যে করছেন তারা। যেকারনে দল ও জনবিচ্ছিন্নতার পর্যায়ে এই সংসদ সদস্য। নিজস্ব একটি বলয়ই তার ভরসা। চলমান এ অবস্থা উত্তরনে সম্ভব না হলে দলের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে চরম বিরোধিতার মুখে পড়বেন তিনি। এ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ্ উদ্দিন সিরাজ। তিনি সিলেট সদরের পাশাপশি দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জের প্রার্থী হতে চান। মিসবাহ সিরাজ ছাড়াও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান আবু জাহিদ যুক্তরাজ্য আ.লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবও মাঠে সক্রিয়। এ আসনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে এমপি মাহমুদ উস সামাদ বাদে বাকি সবাই একাট্টা ও ঐক্যবদ্ধ।
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কান্ডারী বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ। সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ নিয়ে এ আসন। এ আসনে গেলোবারও আওয়ামী লীগের টিকিট চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ফারুক আহমদ। এবারো ফারুক আহমদ এ আসন থেকে প্রার্থী হতে চাইবেন। একই সঙ্গে এ আসনে অধ্যাপক ফজলুর রহমানও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।
সিলেট-৫ আসনটিকে ছাড় দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। এর মধ্যে রয়েছেন- সাবেক এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, সিলেট জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, কৃষক লীগের আবদুুল মোমিন চৌধুরী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মুনির চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ। এ আসনে এবার আ.লীগের প্রার্থিতাকে ঘিরে নিজেদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
সিলেট-৬ আসনের বর্তমান এমপি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু নিজ এলাকায় স্বস্তিতে নেই তিনি। এ আসনে ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। চলতি বন্যায় এলাকায় সরওয়ার হোসেন নিজ তরফ থেকে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি মন্ত্রী বলয়ের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের বড় অংশের নেতারা সরওয়ার হোসেনের পক্ষে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন