মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কেশবপুরে অপরিকল্পিত সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কেশবপুর (যশোর) থেকে রূহুল কুদ্দুস : যশোরের কেশবপুর শহরে পৌরসভার অপরিকল্পিত সড়ক ও ড্রেন নির্মাণে দীর্ঘসময়ের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। ফলে ওই বাজরগুলোর ওপর নির্ভরশীল শতশত ব্যবসায়ী ও চার সহস্রাধিক শ্রমিক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে নির্মাণ কাজ দ্রæত সম্পন্নের দাবিতে গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, কেশবপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে হরিহর নদী। এ নদীকে ঘিরে সুপ্রাচীনকালে গড়ে উঠে শহরের ঐতিহ্যবাহী মৎস্য, কাঁচা বাজার, গোশত বাজার, ধান, পাট, গুড়, হলুদ, নারিকেল, বীজ হাটসহ ভ‚ষি মালের আড়ৎদারি ব্যবসা। দিন দিন এ বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটলেও ভালো রাস্তা না থাকায় পথচারী ও হাঁটুরেদের দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এরপরও প্রতি বছরের বন্যায় কমপক্ষে তিন-চার মাস অধিকাংশ বাজারগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকে। ওই বাজারগুলোর প্রবেশ রাস্তার দু’পাশ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ড্রেন না থাকায় রাস্তাগুলো সবসময় থাকে কর্দমাক্ত। এরপরও পানিতে নেমে পৌরবাসীকে বাজার সওদা সারতে হয়। 
পৌরসভার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাজারের এ সমস্যা নিরসনে মধু সড়কের হাবিব সিড হাউজ হতে ধান হাট পর্যন্ত ৩৫০ মিটার রাস্তা আরসিসিকরণ ও চারটি ক্রস ড্রেন নির্মাণে পৌরসভার ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের অধীন ৪১ লাখ ৪১ হাজার ৫১০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৭ মে কাজটি শুরু করে ২০১৮ সালের ৬ মে শেষ করার দায়িত্ব নিয়ে কাজটি পান যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুল মান্নান (জেভি)। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন করতে ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজটি বাগিয়ে নেন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু। ব্যবসায়ী হেলালউদ্দীন জানান, নির্মাণাধীন এ সড়কের সাথে আটটি সংযোগ সড়ক রয়েছে। যা দিয়ে ওই ১০টি বাজারে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারগুলোতে প্রবেশ করে থাকে। এ কারণে এ বাজারের গুরুত্ব অপরিসীম। পৌর কর্তৃপক্ষ সংযোগ সড়ক থেকে আরসিসি সড়কটি দুই-তিন ফুট উঁচু করে নির্মাণ করায় বাজারগুলো থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ কথা বিবেচনা করেই যদি ঠিকাদার দ্রæত কাজ সম্পন্ন করতো তা হলে ওই বাজারে ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নামতো না। কিন্তু সাত মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। এরপরও তরকারি বাজারে ঢোকার একমাত্র রাস্তাটির উঁচু করে ড্রেন নির্মাণের জন্যে ইতোমধ্যে স্কাভেটর মেশিন আনা হয়েছে। এতে জনগণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 
হাট ইজারাদার অহেদুজ্জামান বলেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি পৌর এলাকার ১৩টি সড়ক সংস্কার কাজের উদ্বোধন করার পর সমস্ত রাস্তা একবারেই খুঁড়ে রাখা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজ ধীরগতীতে চলার কারণে এ বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এখানকার উৎপাদিত মাছ ও সবজি অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। যে কারণে তিনি ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 
মাছ বাজার আড়ৎদার সমিতির সভাপতি হান্নান বিশ্বাস বলেন, রাস্তা ও ড্রেন উঁচু করে করার কারণে সংযোগ সড়কের সাথে মাছ বাজার, কাঁচা বাজার, গোশতের হাট, ধান হাট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। অতীতে যেখানে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার পাঁচ থেকে ছয় হাজার মণ মাছ বিকিকিনি হতো। বর্তমান সেখানে এক থেকে দেড় কোটি টাকার এক থেকে দেড় হাজার মণ মাছ বিকিকিনি হচ্ছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় এ মাছ চলে যাচ্ছে অন্য বাজারে। ফলে কাজ না পেয়ে এ বাজারের দুই হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি বাজারটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ দ্রæত সম্পন্নের দাবি জানিয়েছেন। 
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু বলেন, কাজ শুরুর সাথে সাথেই বন্যায় ওই বাজারগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই আবার কাজ শুরু হয়েছে। সুষ্ঠুভাবেই কাজ শেষ করা হবে। আগামীতে ওই বাজারের ইজারাদার অহেদুজ্জামানের বড় ভাই কাউন্সিলর শহীদুজ্জামান শহীদ মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যার কারণে তারা বর্তমান মেয়রের উন্নয়নমূলক কর্মকাÐের বিরোধিতা করছেন। 
কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই বাজার অন্যত্র স্থানান্তরের প্রশ্নই আসে না। ইতোমধ্যে বাজরের উন্নয়নে কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। হাট ইজারাদাররা জামায়াত বিএনপির সাথে আতাত করে তার উন্নয়ন কর্মকাÐে ব্যাঘাত ঘটানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তা ছাড়া সিডিউল অনুযায়ী এখনো কাজ শেষ হতে ছয় মাস বাকি রয়েছে। যে কারণে ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন