পীরগঞ্জ (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : রংপুরের পীরগঞ্জে দীর্ঘ একযুগ পর বাবা-মাকে খুঁজে পেয়েছে ঢাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া ছালমা খাতুন (১৯)। সে উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী শ্যামপুর গ্রামের সাহাদৎ হোসেনের ছোট মেয়ে । জানা গেছে, গত ২০০৭ সালের কোনো এক সময়ে সংসারে অভাব-অনটনের কারণে মাত্র সাত বছর বয়সে ছালমাকে তার বড়ভাই সাইফুল ইসলাম ও নিকটাত্মীয় রাসেদুজ্জামান তাদের পূর্বপরিচিত ঢাকার উত্তরার ব্যবসায়ী বাসা-৭২, রোড-২.১ সেক্টর ১২ জামান সাহেবের বাসায় কাজের জন্য রেখে আসেন। সেখানে সে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিন বছর কাজ করে। ওই বছরের ১৪ আগস্ট সকাল ১০টায় সালমা খাতুন উত্তরার জামান সাহেবের বাসা থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এরপর টানা ৯ বছর পর ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর অনেকটা নাটকীয়ভাবে তার বাবা-মা’র কাছে ফিরে আসে। এ ব্যাপারে ছালমা খাতুন ও তার বাবা-মার সাথে কথা হলে তারা জানায়, ঢাকা উত্তরার ব্যবসায়ী জামান সাহেবের বাসায় কাজ করার সময় তারা ছালমাকে প্রায়ই মারপিট করত, ঠিকমতো খেতে দিত না, এমনকি গ্রামের বাড়িতেও যেতে দিত না। তার বাবা-মা দেখা করতে গেলে তাদের সামনে একাকী কথা বলতে দিত না। এভাবে দীর্ঘ দিন শারিরীক নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে গত ২০০৯ সালের ১৪ আগস্ট সকাল ১০টায় বাসার দারোয়ানের সহযোগিতায় ছালমা জামান সাহেবের বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
বিষয়টি জামান সাহেব সালমার পরিবারকে জানানোর পর তারা ঢাকায় গিয়ে ছালমাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ব্যর্থ হয়ে তার বড়ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে উত্তরা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যার জিডি নং-৭৯৪ তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০০৯। ছালমা আরো জানায়, উত্তরার বাসা থেকে পালানোর পর সে ভুলক্রমে টঙ্গী বাজারে চলে যায় ও কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন তার বয়স মাত্র ৯ বছর। পথচারী ও স্থানীয় লোকজন তার নামপরিচয় জানতে চাইলে সে শুধু নাম ছালমা, বাবার নাম সাহাদৎ, মায়ের নাম ছানোয়ারা ও বাড়ি রংপুরের শ্যামপুর ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না। তখন লোকজন ছালমাকে স্থানীয় আবদুল আজিজ নামের এক মেম্বারের বাসায় রেখে আসেন। আজিজ মেম্বার মেয়েটিকে তার নিকট রেখে তার আপনজনদের খুঁজতে থাকেন। দীঘদিনেও ছালমার কাউকে খুঁজে না পেয়ে তারই পরিচিত টঙ্গীর আবু তাহের মোল্লার বাসায় কাজের জন্য পাঠান। সেখানে সে পাঁচ বছর কাজ করে। বর্তমানে তার বয়স ১৯ বছর ।
অবদুুল আজিজ মেম্বারের মনে আবারো ইচ্ছা জাগে, মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার। তিনি ছালমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তার পরিবারকে খুঁজতে। দীর্ঘ ১০দিন রংপুর, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের যেখানেই শ্যামপুর গ্রামের কথা শুনেছেন, সেখানেই গিয়ে খুঁজেছেন। অবশেষে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী শ্যামপুর গ্রামে গত ২১ অক্টোবর খুঁজে পান ছালমার বাবা-মাকে। তিনি ছালমাকে তুলে দেন তার বাবা-মার হাতে। প্রায় একযুগ পর মেয়েকে পেয়ে আত্মহারা হয়ে যান বাবা-মা। ছালমা বলেন, আজিজ মেম্বারের অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখেছেন। জামান সাহেবের কথা উঠতেই ছালমা বলে, ওরা অমানুষ ওদের মনে কোনো দয়ামায়া নেই, ওই বাসার প্রতিটি লোক আমার উপর নির্যাতন করেছে, আমাকে অনাহারে রেখেছে, আমি তাদের বিচার চাই, পুলিশ যেন তাদের বিচার করে। এলাকার সাধারণ মানুষও এমনটাই দাবি করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন