শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

রাউজানে ১ মাসে ৭ বাল্যবিয়ে রোধ

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের রাউজানে এক মাসে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেল ৭ নারী শিক্ষার্থী। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন রেজা এসব বিয়ে বন্ধ করে দেন। বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া পাঁচ নারী শিক্ষার্থী এখন স্কুলে পড়াশোনা করছে। রাউজান উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর, বুধবার বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পায় রুপা আকতার (১৭) নামের রাউজান কলেজের একাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের এক ছাত্রী। সে ডাবুয়া ইউনিয়নের হাসানখীল গ্রামের সাহাবুদ্দিনের কন্যা। বিদ্যালয় সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্ম হয় ১৩-০৯-২০০০ইং। রুপার সাথে একই এলাকার মাওলানা আব্দুল জব্বারের পুত্র জিসানের বিয়ে ঠিক হয়। গত ৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার উম্মে হাবীবা মায়া (১৫) নামের এক দশম শ্রেণীর ছাত্রী নিজের বাল্যবিয়ে রুখতে স্বহস্তে লিখিত আবেদন পত্র নিয়ে ছুটে যান রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আবেদনপত্রে লিখেন তার নাম উম্মে হাবীবা মায়া, পিতা: আবু বকর, মাতা: রাশেদা আকতার। সে দলই নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বয়স ১৫ বছর ৮ মাস। আবেদনপত্রে ছাত্রীটি মর্মস্পর্শী ভাবে উল্লেখ করেন, “আমি বাল্যবিবাহের শিকার। তাই আমাকে বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা করে পড়ালেখার সুযোগ দিলে আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকিব। আমি পড়ালেখা করে দেশের সেবা করতে চাই।” গত ১৭ নভেম্বর, শুক্রবার বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পায় রুবা আকতার (১৬)। সে উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পাঠানপাড়া এলাকার মৃত নজু মিয়ার কন্যা। তার সাথে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার এরশাদের বিবাহ ঠিক হয়। ইউএনও শামীম হোসেন রেজা অনুষ্ঠানে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে অভিভাবদের কাছ থেকে মুচলেখা নেয়। মেয়েটির আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইউএনও তার সকল দায়িত্বভার গ্রহণ করে। গত ২৬ নভেম্বর রবিবার বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে রক্ষা পায় জান্নাতুল ফেরদৌস (১৫) নামের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। সে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মো. জাহিরুল আলমের কন্যা ও গশ্চি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। তার সাথে পার্শ্ববর্তী পাহাড়তলী ইউনিয়নের দেওয়ানপুর এলাকার মো. ইদ্রিসের পুত্র মো. ইউনুছের বিয়ে ঠিক হয়।
সংবাদ পেয়ে ইউএনও শামীম হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্য বিবাহ থেকে মেয়েটিকে রক্ষা করেন। তিনি মেয়ের অভিভাকদের কাছ থেকে ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না দেয়ার শর্তে মুচলেখা নেন। গত ২৭ নভেম্বর মঙ্গলবার বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে রক্ষা পায় জেরিন সুলতানা (১৩) নামের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সে জাহাঙ্গীর আলমের কন্যা ও কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। তার সাথে বিয়ে ঠিক হয় নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন এলাকার মো. রাজা মিয়ার ওমান প্রবাসী পুত্র মো. হাসানের সাথে। ২৯ নভেম্বর, বুধবার রাউজানে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পায় সামিয়া মাহামুদ পায়েল নামের নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রীর ও সামিয়া আকতার হোসনা (১৪) নামের রাউজান ছালামত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীসহ দুজন।
সামিয়া মাহামুদ পায়েল উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পটিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাহামুদুল হকের কন্যা। তার সাথে বিয়ে ঠিক হয় একই এলাকার আলহাজ আব্দুল মালেখের পুত্র জালাল উদ্দিন রুমির সাথে। সামিয়া আকতার হোসনা ময়মনসিংহ জেলার গরিপুর থানার বাসিন্দা মো. মুসলিম খাঁ’র কন্যা। তার সাথে বিয়ে ঠিক হয় নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর থানার বাসিন্দা আব্দুল রাশেদের পুত্র মো. মোজাম্মেল হোসেনের। এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন রেজা বলেন, ‘রাত বা দিন নেই, বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া মাত্র আমি বা আমার যে কোন কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী ১ জুলাই বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন