শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

রূপগঞ্জে সড়ক-মহাসড়কে উড়ছে ধুলা বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় বাড়ছে রোগবালাই
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে খলিল সিকদার : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কে ওড়ছে ধুলা। পথে বেরুলেই মনে হবে এ যেন ধুলার রাজত্ব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধুলায় রয়েছে বিষাক্ত সব বস্তু। আর সে ধুলা মিশে যাচ্ছে বাতাসে। নিশ্বাসে প্রবেশ করছে শরীরে। ফুসফুসে সে বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে ভয়াবহ সব অসুখ। এরপরও ধুলা নিরোধে কোনো উদ্যোগ নেই কারো। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলার প্রকোপ বাড়াবে আরো শতগুণ। তবু রূপগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কের ধুলা নিধণে কার্যত ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। রূপগঞ্জের অভ্যন্তরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোলাকান্দাইলের চৌরাস্তার চিত্র দেখলে আঁতকে উঠবেন যে কেউ। এ ছাড়াও উপজেলার মুড়াপাড়া, কাঞ্চন মায়ারবাড়ি টোলপ্লাজা, ভক্তবাড়ি, মুশুরি, হাবিবনগর, তারাবো চৌরাস্তা ও বাজার, ইছাখালির মোড়, বেলদি এলাকার বাসিন্দারা ধুলার যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে আছেন কোনোমতে। ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ার ভুলতা, গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় সামান্য বাতাসে ঝড়ের পরিবেশ দেখা গেছে। নির্মাণ কাজের খোঁড়াখুঁড়ির ধুলা রয়ে গেছে রাস্তায়। যানবাহন ও লোক চলাচলের কারণে এখানে কুয়াশার মতো পুরো এলাকা ছেয়ে যায় ধুলায়। স্থানীয়রা কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় ধুলার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। রাস্তার উন্নয়ন, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ নানা বাহানায় এখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে চার-পাঁচ বছর ধরে। স্থানীয়দের জীবিকার তাগিদে রোজই রাস্তায় বের হতে হয়। গত কয়েক বছরে এসব এলাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও দেখা গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে বলে জানা যায়। সেই সঙ্গে চোখের ও কানের সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জের বাতাসে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বস্তুকতা, ক্ষুদ্র বস্তু ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বেড়েই চলেছে দিন দিন। বিশেষ করে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরীর বাতাসে ক্ষতিকর এসব উপাদানের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর চারপাশে গড়ে ওঠা ইটভাটা, নির্মাণকাজ, যানবাহন, শিল্পকারখানা ও বালুমহাল এ এলাকার বাতাস দূষণের মূল কারণ। দূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে যে, রাজধানীসহ এর আশপাশের জেলারগুলোতে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বায়ুর শহরে পরিণত হয়েছে। শীর্ষে রয়েছে ভারতের প্রাচীন শহর দিল্লি। ঢাকার পরেই রয়েছে পাকিস্তানের করাচি ও চীনের বেইজিং। তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। এসব বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব আলম প্রিয় বলেন, আবাসন এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ইটভাটা নির্মাণে গুরুত্বারোপ, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং অপরিকল্পিতভাবে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধকরণ। সেই সঙ্গে সকাল-দুপুর-বিকেলে তিন দফা নির্মাণাধীন রাস্তাাঘাটে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা, প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন রাস্তায় বালু, মাটিসহ নানা ধরনের সামগ্রী পরিবহনের সময় মালামাল ঢেকে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার জাইদুল ইসলাম জানান, বায়ু দূষণের ফলে ফুসফুসের রোগসহ শ্বাসপ্রশ্বাসের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। এ জন্য দায়ী বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস সবচেয়ে বেশি দিল্লির বাতাসে; যা স্বাভাবিক ক্ষতিকর মাত্রার থেকে ৭৩ দশমিক ৩ ভাগ বেশি। গবেষকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ঢাকার বাতাসে অ্যামোনিয়া রয়েছে ৫১ দশমিক ৬ ভাগ বেশি। তিনি আরো জানান, ধুলায় মিশ্রিত থাকা কিছু রাসায়নিক উপাদান যেমন ধুলাযুক্ত বাতাসে সীসা, ইউরিয়া, প্যারাবিন, থ্যালেট থাকে যা পানিতে মেশে না। এগুলোর কারণে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘদিন শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে গিয়ে ধীরে ধীরে ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করে এসব উপাদান। চিকিৎসকরা জানান, এ ক্ষেত্রে শিশু এবং বয়স্করাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া পাবলিক পরিবহনের ড্রাইভার ও তার সহকারী, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, রিকশা-ভ্যান চালকরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকেন। পরিবেশ অধিদফতরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হক জানান, বর্ষায় দেশের প্রধান শহরগুলোর বাতাস বেশ ভালো অবস্থায় থাকলেও শীতে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং এই সময়েই উন্নয়ন কর্মকান্ডের চাপ থাকে বলে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে ওঠে। বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি রীতিমতো আতঙ্কজনক। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ঘরে-বাইরে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে অনুরোধ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন