শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কাতার সঙ্কটের কারণে উপসাগরীয় জোট বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা

জিসিসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে দোহার যোগদান

এএফপি : | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৪৫ এএম, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

 তিক্ত বিরোধ অবসানের ক্ষীণ আশার প্রেক্ষাপটে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) বার্ষিক সম্মেলনের প্রাক্কালে কাতার ও তার সাথে বিবদমান প্রতিবেশী দেশগুলোকে একত্র করতে সোমবার কুয়েতে উপসাগরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে কাতার সঙ্কটের কারণে জিসিসি জোট বিলুপ্ত হতে পারে।
বৈঠকে বক্তৃতার সময় কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ খালেদ আল সাবাহ জিসিসি টিকিয়ে রাখতে সদস্য দেশগুলোর দৃঢ়সঙ্কল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, জিসিসি হচ্ছে একটি অব্যাহত প্রকল্প যার মধ্য দিয়ে সদস্য দেশগুলোর একটি ঐক্যবদ্ধ জোটের লক্ষ্য পূরণ হবে।
জিসিসি প্রধান আবদুল লতিফ আল-জায়ানি সভাকে বলেন, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সাথে এ অঞ্চলের সমস্যা মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলোকে সংহতি ও ঐক্য জোরদার করতে হবে।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল -থানি জিসিসি শীষর্ বৈঠকে যোগ দেবেন। কিন্তু শীর্ষ বৈঠক শুরুর ২৪ ঘন্টা আগে সোমবারও এটা স্পষ্ট হয়নি যে সউদী আরব, ইউ এ ই ও বাহরাইন এতে যোগ দেবে কিনা।
এ তিনটি দেশ ও মিসর গত ৫ জুন কাতারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাদের অভিযোগ যে গ্যাস সমৃদ্ধ কাতার ইসলামী জঙ্গিদের সমর্থন করে ও সউদী আরবের প্রধান শত্রæ শিয়াপন্থী ইরানের সাথে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ। তবে কাতার এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জিসিসির ৩৬ বছরের ইতিহাসে এটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক সঙ্কট যা ৬ দেশীয় এ সংগঠনের ভবিষ্যত সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। কুয়েত এ বিরোধ নিরসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
কুয়েত যখন মঙ্গল ও বুধবার দু’দিন ব্যাপী জিসিসি সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত তখন বিশ্লেষকরা বলছেন যে সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ অচলাবস্থার শিকার।
নিরপেক্ষ কুয়েতী রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালেহ আল সাঈদী বলেন, সঙ্কট অত্যন্ত গভীর এবং ভীষণ জটিল। তবে আমার ধারণা যে কুয়েত ন্যূনতম পক্ষে এ বিরোধ বন্ধ, বিরোধের আরো অবনতি না ঘটা ও তার আরো বিস্তৃতি রোধের আশা করছে।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট হিসেবে ১৯৮১ সালে জিসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। কাতার, বাহরাইন, সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউ এ ই), ওমান ও কুয়েত এর সদস্য।
কাতার সউদী নেতৃত্বাধীন আরব জোটকে দোহায় শাসক পরিবর্তনের উস্কানি দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
জিসিসি শীর্ষ বৈঠকে কাতারের আমির ছাড়া আর কারা উপস্থিত থাকবেন তা এখনো জানা যায়নি।
ওমান বলেছে, তারা সম্মেলনে সুলতান কাবুসের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পাঠাবে। সুলতান কাবুস সাধারণত শীর্ষ বৈঠকগুলোতে যোগদান করেন না।
অন্য সদস্য দেশগুলো কাকে পাঠাবে তা এখনো ঘোষণা করেনি। তবে কিছু কুয়েতী মিডিয়া সউদী বাদশাহ সালমান যোগদান করতে পারেন বলে খবর দিয়েছে।
হুমকির মুখে শক্তিশালী জোট
সোমবার সউদী আরব ও কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেন। জুন মাসে ক‚টনৈতিক সঙ্কট শুরুর পর এটাই তাদের প্রথম দেখা। ওমানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউসেফ বিন আলাউই বৈঠকের সময় তাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন ইউ এ ই, বাহরাইন ও কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ। কাতারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে সউদী আরব ও তার মিত্ররা দেশটির বিরুদ্ধে পানি, স্থল ও আকাশ পথে অবরোধ আরোপ করে এবং তা প্রত্যাহারে ১৩ দফা শর্ত আরোপ করে। এ সব দাবি পূরণ না হলে অক্টোবরে বাহরাইন কাতারের জিসিসি সদস্যপদ স্থগিত করার প্রস্তাব করে।
বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, এ সঙ্কট এক সময়ের শক্তিশালী এ জোটটিকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। কুয়েত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ -এর প্রধান সামি আল-ফারাজ বলেন, বর্তমান সঙ্কট অব্যাহত থাকার প্রেক্ষিতে জিসিসি জোটের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যতদিন ইরানের পরিবর্তে কাতার শত্রæ থাকবে ততদিন জিসিসি অস্তিত্বশীল থাকবে না।
অর্থনৈতিক ্ঐক্যের জন্য দীর্ঘবিলম্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যর্থতাও জোটের ভবিষ্যতকে হুমকিগ্রস্ত করতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলো একটি কাস্টমস ইউনিয়ন, একটি অভিন্ন বাজার, এক মুদ্রা ও এক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অনুমোদন করলেও এগুলোর অধিকাঙ্কই বাস্তবায়ন হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন