পিরোজপুরের নাজিরপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে’ নামে ব্যতিক্রমী এক কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাজমুল আলম। বিজয়ের গল্প রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকে শিক্ষার্থীদের শোনাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে তিনি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গল্প শোনার ব্যবস্থা করেছেন। প্রাথমিকভাবে উপজেলার আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দু’টি মাদরাসা ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুইদিনব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত বুধবার প্রথম দিনে ১৬টি প্রতিষ্ঠানে এবং বৃহস্পতিবার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে তাদের রণাঙ্গনের গল্প শিক্ষার্থীদের শোনান। এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়েছেন। উপজেলা সদরের নাজিরপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বর্নি মজুমদার বলেন, এবারের বিজয় দিবস উপলক্ষে গতানুগতিক অনুষ্ঠান হবেÑ এমন ধারণাই ছিল আমার। কিন্তু বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়ে দেখতে পেলাম অন্য রকম আয়োজন। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষার্থীদের সামনে আসলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয়া এই মানুষটি তার সেই দিনের গল্প শোনালেন আমাদের। বাবা-মায়ের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ছোটখাটো কিছু ঘটনা শুনলেও এভাবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এমনভাবে কাছে পাননি কখনো। আসমার মতো এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে নাজিরপুর উপজেলার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হাসান ডালিম বলেন, এমন কর্মসূচিতে উপজেলার অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীরাও বেশ উল্লাসিত। তারাও তাদের স্কুলে এমন কর্মসূচি পালনের দাবি জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য, এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ যেন উপজেলার সব স্কুলে চালু করা হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং গল্প সরাসরি একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে শুনে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হতে পারবে। লাহেল মাহমুদ নামে একজন শিক্ষক বলেন, ইউএনও মহোদয়ের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন এবার বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে। এতে শিক্ষার্থীরা বেশ আনন্দিত হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে শুনেছে এবং কোনো প্রশ্ন থাকলে তারা সেটিরও উত্তর জানার চেষ্টা করছে। সত্যিই এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও নাজমুল আলম বলেন, ‘বিজয় দিবসে সাধারণত গতানুগতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। কিন্তু এবার আমি চিন্তা করেছি ব্যতিক্রম কিছু করা যায় কি না। এমন চিন্তা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের চিন্তা আসল। এর ফলে একজন শিশু শিক্ষার্থী মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে সরাসরি শুনতে পেরেছে। এতে করে ওই শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন লাইভলি শুনলো, তেমনি সে এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে। তারা এই গল্প অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দেবে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠবে। নতুন প্রজন্ম আমাদের বিজয় গাঁথা এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সুন্দরভাবে জানতে পারবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন