কিছুদিন আগেও এখানে বসতি ছিল, ছিল কোলাহল। গাছের পাতায় পাতায় ছিল সবুজের সমারোহ। ছিল একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশু শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। অথচ এসব আজ শুধুই স্মৃতি। গত বন্যায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সবকিছু। এলাকাবাসী ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে পাশের বাজারের একটি টিনশেড ঘরে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস। সরেজমিন দেখা যায়, নদীতে পানি কমে যাওয়ায় তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটির সামন্য অংশ ভেসে উঠেছে। গত বন্যায় তিস্তার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে তীর থেকে প্রায় ৩০ ফুট নিচে তলিয়ে যায় বিদ্যালয়টি। এতো দিন এর অস্তিত্ব দৃশ্যমান ছিল না। এখন ভেসে ওঠা বিদ্যালয়ের একাংশ দেখার জন্য উৎসুক দর্শনার্থীদেরও ভিড় লেগেই আছে। বিদ্যালয় থেকে চেয়ার, টেবিল ও আসবাবপত্র আগেই সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। মাঝে বেশ কিছুদিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নয়ারহাট বাজারে তরকারি বিক্রির একটি শেডে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেডটিতে জায়গা না হওয়ায় শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থায়নে পাশেই একটি টিনের ঘর তুলে চারপাশে পুরোনো টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। সেখানেই এখন গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। উপজেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে এই ভবনে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে তিনজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলে, ‘আমাদের চোখের সামনে প্রিয় স্কুলটি নদীতে ভেঙে তলিয়ে গেছে।’ চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলে, ‘ আগের স্কুলঘরটি পাকা ছিল। আমরা খুর সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করেছি। আর এখন ছোট একটা ঘরে কষ্ট করে ক্লাস করতে হয়।’ তৃতীয় শ্রেণীর রাশেদা আক্তার বলে, ‘আর কতো দিন আমাদের এত কষ্ট করে ক্লাস করতে হবে। আমরা আগের মতো নতুন স্কুল চাই। পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ১২ আগস্ট থেকে বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের কবলে পড়ে। এক পর্যায়ে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নানা সঙ্কটের মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুরত জামাল মিয়া বলেন, অনেক চেষ্টার পরেও ভাঙনের হাত থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যায়নি। একটি টিনশেড ঘরে এত শিক্ষার্থীর ক্লাস করা খুবই কষ্টকর। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, নদীতে ভেঙে যাওয়া বিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে নতুন করে করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন