রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সাথে শিক্ষকদের একাংশ জড়িত এর চাইতে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে?

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে আমি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছি বলে অনেকের ধারণা আমার কর্ম জীবনের পুরাটাই বুঝি কেটেছে সাংবাদিকতা পেশায়। এ ধারণা পুরাটা সঠিক নয়। ‘পুরাটা সঠিক নয়’ বলাতে আবার মনে হতে পারে এর মধ্যে পুরাটা না হলেও আংশিক সত্য রয়েছে। আসলে আমি সাংবাদিকতার সাথে জড়িত হই ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংস্থা তমদ্দুন মজলিসের সূচিত ভাষা আন্দোলনের জড়িত হওয়ার কারণে বাস্তব প্রয়োজন বোধে, পেশাগত বিবেচনায় নয়।
ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে কথা উঠলে অনেকেরই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঊনিশ শ’ বাহান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারীর রক্তাক্ত ঘটনাবলীর ছবি। অনেকের তো ধারণা ভাষা আন্দোলন ছিল ঊনিশ শ’ বাহান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারীর একটি ঘটনা। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই সেরকম ছিল না। ভাষা আন্দোলন মোটেই ঊনিশ শ’ বাহান্নোরের একুশে ফেব্রুয়ারীর একটি দিনে সীমাবদ্ধ ছিল না। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার যে আন্দোলন ভাষা আন্দোলন নামে ইতিহাসে খ্যাত হয়ে আছে তা শুরু হয় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পরই ঊনিশ শ’ সাতচল্লিশের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস কর্তৃক ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে। এই পুস্তিকায় তিনটি নিবন্ধ স্থান পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞানের তরুণ শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদের। এর প্রথম প্রবন্ধে তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের মূল দাবী তুলে ধরা হয় এভাবে : (ক) পূর্ব পাকিস্তানের সরকারী অফিস আদালতের ভাষা হবে বাংলা। (খ) পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা।
ভাষা আন্দোলনের দাবীতে পুস্তিকা প্রকাশ করেই বসে ছিলেন না অধ্যাপক আবুল কাসেম। এই দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে অধ্যাপক ও ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে এইসব দাবীতে একের পর এক সভা করে যাচ্ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালেই ভাষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশের সাহিত্যিক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী অধ্যাপকদের স্বাক্ষরসহ সরকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করার ব্যবস্থা করা হয়। ঐ একই বছরে আন্দোলন পরিচালনার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ণ বিজ্ঞানের অধ্যাপক নুরুল হক ভুঁইয়াকে কনভেনর করে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ নামের একটি ছাত্র সংস্থা জন্ম লাভ করে। এই সংস্থা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মজলিসের সূচিত ভাষা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। এ সময় মজলিস ও ছাত্র লীগের যুগপৎ সদস্য শামসুল আলমকে কনভেনার করে দ্বিতীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এই সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র প্রথম সফল হরতাল পালিত হয়। রেল শ্রমিকেরা এ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে সেদিন চট্টগ্রাম থেকে কোন ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হতেই পারেনি।
ঢাকার পরিস্থিতি ছিল আরও সাংঘাতিক। ঢাকার সেক্রেটারিয়েট ভবনের চারদিক থেকে আন্দোলনকারীদের দ্বারা ভোর থেকে ঘেরাও হয়ে থাকার ফলে অনেক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সেদিন সেক্রেটারিয়েটে প্রবেশ করতেই পারেননি। তখন সেক্রেটারিয়েট ভবনের চারদিকে পাকা দেয়াল ছিলনা। ছিল কাঁটা তারের বেড়া। অনেক আন্দোলনকারী কাঁটা তারের বেড়া ডিংঙ্গিয়ে সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে ঢুকে পড়ে উপস্থিত মন্ত্রী ও সচিবদের উপস্থিতির প্রতিবাদ জানান।
পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জ করাতে তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবুল কাসেমসহ অনেকে আহত হন। আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে অলি আহাদ, শেখ মুজিব-সহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তারের খবর ঢাকা শহরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে জনসাধারণের মধ্যে বিক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। অচিরেই সমগ্র সেক্রেটারিয়েট এলাকা বিক্ষুব্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এবং সর্বত্র অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা চলতে থাকে ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ মার্চ পর্যন্ত। এতে ভীত হয়ে পড়েন তদানীন্তন প্রাদেশিক প্রধান মন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন। কারণ ১৯ মার্চ তারিখে কায়েদে আজম জিন্নার ঢাকায় আসার কথা। তিনি এসে ঢাকায় এই অরাজক অবস্থা দেখলে নাজিমুদ্দিনের প্রতি তাঁর মনোভাব ভাল থাকার কথা নয়। তাই নাজিমুদ্দিন নিজে উদ্যোগী হয়ে সংগ্রাম পরিষদের সকল দাবীদাওয়া মেনে নিয়ে চুক্তিস্বাক্ষর করেন। ফলে পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হয়ে আসে।
পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ সাহেব ঐ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। খাজা নাজিমুদ্দিন তাঁর স্থলে গভর্নর জেনারেল হন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আততায়ীর হাতে নিহত হলে নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। সেই সময় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসাবে পালিত হতো।
১৯৫২ সালের জানুয়ারী মাসে পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হিসাবে ঢাকা সফরে এসে প্রধান মন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পলটন ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলে বসেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। যে নাজিমুদ্দিন নিজে ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ বাংলা রাষ্ট্রভাষাসহ ভাষা আন্দোলনের সকল দাবী দাওয়া মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন, তার এই বক্তব্যকে ভাষা সংগ্রামীরা চরম বিশ্বাসঘাতকতা বিবেচনা করে ২১ ফেব্রুয়ারীতে নাজিমুদ্দিনের ঐ বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এবং এই দাবীকে কেন্দ্র করে তমদ্দুন মজলিস, ছাত্র লীগ, আওয়ামী লীগ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নিয়ে ছাত্র লীগের কাজী গোলাম মাহবুবকে কনভেনার করে সংগ্রাম পরিষদ নতুন করে গঠিত হয়।
এর পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা। একুশে ফেব্রুয়ারী তারিখে ভাষা সৈনিকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের উপর গুলী বর্ষণ করে সালাম, বরকত প্রমুখ ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাভাষা বিরোধী সরকারের নেতারা তাদের নিজেদের অজান্তেই এমন জঘন্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বসেন যার ফলে তাদের বাংলা বিরোধী ষড়যন্ত্রের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এই ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আমরা ১৯৪৮ সালের আন্দোলনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে আমাদের এই ধারণা দৃঢ় হয় যে, আন্দোলনের সাফল্যের জন্য নিজস্ব মুখপত্র প্রয়োজন। ভাষা আন্দোলনের সেই অঘোষিত মুখপত্র ছিল সাপ্তাহিক সৈনিক, যা ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয়। সেই সূত্রেই সাংবাদিকতার সাথে আমার যোগাযোগ শুরু। তবে সাপ্তাহিক সৈনিক এর মাধ্যমে আমার সাংবাদিকতার শুরু আদশিক ও আন্দোলনের নিরিখে হলেও সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা তো আর মিথ্যা হয়ে যায়নি। সেদিন সৈনিক-এ আমার যারা সহকর্মী ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন শাহেদ আলী, সানাউল্লাহ নুরী, মোস্তফা কামাল প্রমুখ। পরবর্তীকালে তারা যেমন বহু দৈনিকে-এ কাজ করেছেন, তেমনি আমারও সৌভাগ্য হয়েছে দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক নাজাত, দৈনিক আজাদ, এমনকি ইংরেজী দৈনিক পিপল-এ এবং অবশেষে দৈনিক ইনকিলাব-এ কাজের।
সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সত্তে¡ও আমার আগাগোড়াই গভীর আগ্রহ ছিল আরেকটি পেশার প্রতি। সেটি শিক্ষকতা। এর পেছনে ছিল আমার পারিবারিক পটভূমি। আমার মরহুম পিতা খুব কম শিক্ষিত হলেও তিনি ছিলেন খুবই ধর্মভীরু এবং সেই সূত্রে তিনি প্রত্যেক দিন ভোরে পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পবিত্র কোরআন পড়াতেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষা-বিস্তারেও তাঁর ছিল আন্তরিক আগ্রহ। পাড়ার একমাত্র মকতবটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনিই। এবং তা প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর নিজের দেয়া জমিতেই। সেটি এখন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সেই নিরিখে আমার মরহুম পিতার স্বপ্ন ছিল আমি বড় হয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মকতব (পরবর্তীতে প্রাইমারী স্কুলের) প্রধান শিক্ষক হই। এই লক্ষ্যে আমি যে বছর হাই মাদ্রাসা (ম্যাট্রেকুলেশনের সমমানের) পরীক্ষা দেই, সে বছর তিনি আমাকে আমাদের তৎকালীন মহকুমা শহর রাজবাড়ী নিয়ে গিয়েছিলেন মহকুমা শিক্ষা অফিসার (স্কুল ইন্সপেক্টরের) অফিসে আমাকে প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে। আমাদের পাড়ার প্রাইমারী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক হিসাবে আমার আব্বার সঙ্গে মহকুমা শিক্ষা অফিসারের সুসম্পর্ক ছিল বলে এ বিষয়ে তিনি খুব আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু দু:খের বিষয় সেদিন স্কুল ইন্সপেক্টর সাহেব মফস্বলে যাওয়ায় তিনি অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে আমার প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকুরী পাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে হলো। পরবর্তীকালে অবশ্য প্রমাণিত হয়, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতার চাকুরীর সুযোগ থেকে আমি বঞ্চিত হলেও পরবর্তীকালে শিক্ষকতার লাইনে আরও বড় সুযোগ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। হাই মাদ্রাসা ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে দেখা গেল বাংলা ও আসামের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পরীক্ষা পাস করেছি। ফলে আমি মাসিক ষোল টাকার স্কলারশীপ তৎসহ (টুইশন ফি ও হোস্টেলের সীট রেন্ট মাফ) তৎকালীন ঢাকা গভর্নমেন্ট ইন্টার মিডিয়েড কলেজে (বর্তমানে সরকারী নজরুল কলেজ) ভর্তি হবার পর সুযোগ পেলাম। সেখান থেকে ১৯৪৭ সালে প্রথম বিভাগে আই-এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর আমি ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়ি। ফলে আমার ছাত্র-জীবনে দীর্ঘ বিরতির পর-১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় থেকে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে এম এ পাস করি।
এরপর আমার সরকারী চাকরী পেতে আর কোন অসুবিধাই হয়নি। সমাজ কল্যাণ বিভাগে সরকারী চাকুরী পাই চট্টগ্রামে। এক বছর সরকারী চাকুরী করার পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে সমাজকল্যাণ বিষয়ে ডিগ্রী কোর্স খুললে সেখানে অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পাই। চট্টগ্রামে আমার বিদায় উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেয়া হয় তাতে সকলেই সরকারী চাকুরী বাদ দিয়ে প্রাইভেট কলেজে যোগদানের সিদ্ধান্তে সকল বক্তা পরোক্ষে আমার বোকামীর জন্য নিন্দাই জানান। কিন্তু শিক্ষকতার প্রতি আমার আগ্রহের ফলে এসব আমি নীরবে হজম করি। পরবর্তীতে রাজন্দ্র কলেজও এক পর্যায়ে সরকারী কলেজ হয়ে যায়। তখন আমি পুনরায় ফরিদপুর থেকে ঢাকা চলে আসি ফরিদপুর সরকারী কলেজে আমার বক্তৃতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করায়। এর পর এক পর্যায়ে ঢাকা আবুজর গিফারী কলেজে আমার সাবজেক্ট খুললে সেখানে জয়েন করি। কিন্তু তখনও প্রাইভেট কলেজে সরকারী অনুদান নিয়মিত হয়ে না উঠায় আমার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব সঙ্গীন হয়ে দাঁড়ায়। তবু আমি শিক্ষকতার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহের কারণে সেখানেই থেকে যেতে চেষ্টা করি। এরপর এক পর্যায়ে আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে পরিচালক পদে জয়েন করি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন ধর্ম মন্ত্রী হযরত মাওলানা আবদুল মান্নানের আগ্রহে দৈনিক ইনকিলাব-এ জয়েন করি।
আমার ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়ে এত বিস্তারিত এ লেখার উদ্দেশ্য আমি যে সব সময় শিক্ষকতাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি তা প্রকাশ করা। আমার মতে পৃথিবীতে কোন লোকের জন্ম নেয়ার জন্য পিতামাতা কৃতিত্বের দাবীদার হলেও তাকে মানুষেরমত মানুষ করে তোলার কৃতিত্বের দাবীদার শিক্ষক সমাজ। পত্রিকার খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সাথে এক শ্রেণীর শিক্ষক জড়িত। যে শিক্ষকদের প্রধান ভূমিকা মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলা, তাদের কেউ যদি প্রশ্ন ফাঁসের মত জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত হতে পারে তার চেয়ে দু:খজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে? এই ঘটনা জানার পর আমি যে দুটি কলেজে প্রায় চৌদ্দ বছর শিক্ষকতা করেছি, সে কথা মনে হওয়ায় লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন