মোহাম্মদ আবদুল গফুর
ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কেলেঙ্কারি অথবা চলমান ইউপি নির্বাচন নিয়ে লিখব এবার। দুটি বিষয়ই বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল নিয়ামক বিবেচনা করা হয়। সে নিরিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কেলেঙ্কারির ঘটনা ব্যাংক গভর্নরের গোচরীভূত হওয়ার পরও দীর্ঘদিন ধরে তা চেপে রেখে গভর্নরের বিদেশ ভ্রমণে বের হওয়া তার ওপর ন্যস্তগুরু দায়িত্ব সচেতনতার প্রমাণ বহন করে না। এ ঘটনা নিয়ে বিদেশি একটি রাষ্ট্রে আলোচনা চলায় দেশে এ নিয়ে যখন তোলপাড় শুরু হয় তখন গভর্নর ড. আতিউর রহমান নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পেশ করেন। ভাবটা এমন যেন পদত্যাগপত্র পেশ করেই এত বড় কেলেঙ্কারির দায়দায়িত্ব থেকে তিনি মুক্ত হয়ে গেলেন।
এরপর যদিও এ ব্যাপারে সরকার একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তবুও তাতে প্রকৃত তথ্য কতটা জানা যাবে সে বিষয়ে জনমনে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিদায়ী গভর্নরের ভাষ্য মতে, তার পদত্যাগপত্র দাখিলে প্রধানমন্ত্রী নাকি খুব দুঃখিত ও মর্মাহত হয়েছেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যেভাবে তার পদত্যাগের ঘটনাকে সাহসের এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রশংসা করেছেন তাতে রিজার্ভ কেলেঙ্কারি ঘটনায় গভর্নরের দায়িত্ব প্রমাণিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাব-এ প্রকাশিত ‘রাকেশ আস্তানাকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রহস্যময়তা’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠেও বোঝা যায় এ বিষয়ে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করা কতটা কঠিন ব্যাপার হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: রাঁজকোষ হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা চুরির পর ভারতীয় আইটি ব্যবসায়ী রাকেশ আস্তানার নিয়োগ নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, অর্থমন্ত্রী তার কাজের পরিধি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তখন সেই রাকেশ আস্তানাকে নিয়ে স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংক রহস্যজনক ভূমিকায় নেমেছে। কে এই রাকেশ আস্তানা? ভারতীয় এই নাগরিককে কার সুপারিশে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি সেক্টরে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। এ নিয়ে যখন গণমাধ্যমে তোলপাড় চলছে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করে অন্য সুর তুলেছে। তাদের দাবি, রাকেশ আস্তানা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের পরামর্শক। অথচ রাকেশ আস্তানার সরবরাহকৃত নতুন সফটওয়্যার ইনস্টলের আদেশ এবং একই সঙ্গে তাকেই পরামর্শক নিয়োগের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিক্ষুব্ধ হন বলে জানা গেছে। তারা রাকেশের সফটওয়্যারের কারণে নিরাপত্তার পরিবর্তে দেশের আর্থিক খাত নতুন করে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘আইটি কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাকেশ আস্তানাকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দেয়া হচ্ছে । নতুন করে ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় আইটির বিষয়টি তদন্ত করছেন না রাকেশ আস্তানা। আইটি দলের সহায়তায় তাকে এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন ফজলে কবীর। যোগদানপত্রে স্বাক্ষরের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন গভর্নরের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা এ কথা জানান।
জাতীয় অর্থনীতিকে সুষ্ঠু পথে পরিচালনার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে বিরাট ভূমিকা পালন করার কথা তার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কেলেঙ্কারির ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে এ সম্পর্কিত প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের কঠোর শাস্তির নিশ্চয়তা বিধান জাতীয় অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থেই আজ সময়ের দাবি। এ দাবি পূরণে সরকার কতটা আন্তরিক যথাশীঘ্রই তার প্রমাণ পাওয়ার প্রত্যাশায় আপাতত এখানেই এ বিষয়ের আলোচনার ইতি টানছি।
দ্বিতীয় আর যে বিষয়টি নিয়ে আজ লেখার ইচ্ছা ছিল সেটি হচ্ছে চলমান ইউপি নির্বাচন। নির্বাচন যে জাতীয় পর্যায়ের হোক, সেটা পৌর পর্যায়ের বা অথবা ইউপি পর্যায়ের হোক, সব ক্ষেত্রেই তার মূল্য অপরিসীম। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং তাকে জোরদার করে তোলার ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যবধানে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তান আমলে দেশে গণতন্ত্র ছিল না বললেই চলে। দেশ তখন প্রধানত বেসামরিক ও সামরিক আমলাদের খেয়ালখুশি মতো চলত। আর সে কারণেই রাজনীতিকদের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। অন্যদিকে শাসক গোষ্ঠীর লক্ষ্য ছিল জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের ওপর বেসামরিক ও সামরিক আমলা শাসন চালিয়ে যাওয়া। ফলে রাজনীতিকদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার দাবি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। জনগণের স্বাধিকার চেতনা পশু বলে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে একাত্তরে টিক্কা বাহিনী জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে জনগণ জান কবুল করে সশ¯্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নয় মাসের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।
দুঃখের বিষয়, যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ঐতিহাসিক অবদান ছিল, সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তার প্রথম সরকারের আমলেই দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একটি মাত্র সরকারি দল রেখে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করা হয়। যে দলটি দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করে সেটি ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সমাসীন রয়েছে। ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কব্জা করার পর তারা ইতিপূর্বে পৌরসভায় যেভাবে জবরদস্তি নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে, বর্তমান চলমান ইউপি নির্বাচনেও সেই একই পন্থা অনুসরণ করে চলেছে। এ পন্থায় যে দেশে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠর জন্য সকল পর্যায়ে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন যে একেবারেই অপরিহার্য শাসক শ্রেণী যতদিন সেটা না বুঝবে ততদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মহন লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, এ কথা বলাই বাহুল্য। সুতরাং এ লক্ষ্যে শাসকশ্রেণীর মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
এবার আসা যাক আজকের আলোচনার মূল বিষয়ে। কার বা কাদের বুদ্ধিতে জানি না বাংলাদেশের বর্তমান সরকার শাসনতন্ত্রের মূলনীতি বিষয়ক অধ্যায় থেকে “সর্ব শক্তিমান আল্লাহতায়ালায় গভীর আস্থা ও বিশ্বাস” তুলে দিয়েছেন এবং সর্বশেষ পরিকল্পনা মোতাবেক সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে তুলে দেয়ার জন্য পাঁয়তারা করছে বলে জানা গেছে। এ করে তারা ইসলামবিদ্বেষী কোনো বিদেশি শক্তির মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলেও দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে চরম ক্ষোভ-হতাশার মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন। শুধু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীই নয়, ইতিহাসসচেতন শিক্ষিত সমাজও এতে রীতিমতো বিক্ষুব্ধ।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, উপমহাদেশের জনগণের একদা ইসলাম নামের কোনো ধর্মাদর্শের সাথে পরিচয় ছিল না। সপ্তম শতাব্দীতে আরবের বুকে ইসলামের অভ্যুদয়ের পর প্রধানত তার সাম্য ভ্রাতৃত্বের আদর্শের কারণে তা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার আগেই সমুদ্রপথে বাংলাদেশের সঙ্গে আরব সওদাগরদের বাণিজ্য সম্পর্কের সুবাদে আরব সওদাগরদের সাথে আসা ইসলাম প্রচারকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে বহু বিচ্ছিন্ন মুসলিম জনপদ গড়ে উঠতে থাকে। ইসলামের সাথে যোগাযোগের পূর্বে এদেশে ছিল জাতিভেদ লাঞ্ছিত ব্রাহ্মনবাদী সমাজ ব্যবস্থা। মধ্যে একপর্যায়ে গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত অহিংসার বাণী যুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মের বিপুল বিস্তার ঘটলেও পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণাবাদীদের প্রতি বিপ্লবের ফলে উপমহাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা উত্তরের চীন, তিব্বত পূর্বে বার্মা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ দিকে শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যারা দেশ ত্যাগে সমর্থ হয় না তারা অগত্যা হিন্দু ধর্মের নি¤œতম পর্যায়ে নাম লিখিয়ে কোনোমতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়াস পায়। এ পর্যায়েই উপমহাদেশের জনগণের সাথে ইসলামের যোগাযোগ শুরু হয়। সাবেক বৌদ্ধদের অনেকেই ইসলামের সাম্য ভ্রাতৃত্বের আদর্শ গ্রহণ করে। একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগে এদেশের নির্যাতিত জনগণের অনেকেই ইসলামের সাম্য-ভ্রাতৃত্বের উদ্বুদ্ধ আদর্শে হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, আরব দেশ থেকে শুরু করে উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত একটানা মুসলিম জনপদ থেকে বহুদূরে উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের একটি বিশাল মুসলিম জনপদ গড়ে উঠার মূলে ছিল আরব সওদাগরদের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রপথে প্রাচীন যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেভাবেই হোক উপমহাদেশের পূর্বঞ্চলে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ও বিস্তার না ঘটলে বাংলাদেশের মত একটি বিশাল মুসলিম জনপদ গড়ে উঠতে পারত না এবং পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসন অবসানে ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব হতো না।
ইতিহাসের এই বাস্তবতার নিরিখে বলা যেতে পারে, ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা সম্ভব হয় তার মূলে ছিল এতদঞ্চলে ইসলামের ব্যাপক প্রসার এবং তার পরিণতিতে উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে এক বিশাল মুসলিম জনপদ গড়ে ওঠা। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, আমরা আজ যে বাংলাদেশ নামের একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক তার মূলে রয়েছে এ রাষ্ট্রের শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের ইসলামের অনুসারী হওয়া। রাষ্ট্রের এই বিপুলসংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালায় গভীর আস্থা ও বিশ্বাস পোষণ করেন এবং তাদের ধর্ম ইসলাম। এই নিরিখে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে “সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালায় বিশ্বাস” যেমন স্বাভাবিক তেমনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ছিল সংযোজন স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক।
এদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে যারা সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তারাও ভোটের প্রয়োজনে জনগণের কাছে যাওয়ার সময় তারা যে ইসলামে বিশ্বাসী তা প্রমাণ করতে সদাসচেষ্ট থাকেন এবং তাদের রাজনৈতিক প্রচারপত্র বা পোস্টারের উপরের দিকে বড় হরফে লেখা শোভা পায় ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’। সংবিধান থেকে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালায় বিশ্বাস’ তুলে দেয়ার পর জনগণের কাছে সমর্থন লাভের প্রয়োজন প্রচারপত্রে ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ ব্যবহার করার মধ্যে যে এক প্রকার কপটতা ও সুবিধাবাদিতা স্ববিরোধিতা প্রমাণিত হয় এটাও তারা ভুলে যান সম্ভবত সেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে। একেই হয়তো বলে গরজ বড় বালাই।
এখানে আরেকটা কথা বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে। যারা সেক্যুলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী তারা ইদানীং একটা নতুন কথা বলা শুরু করেছেন। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এটা বলে তারা সম্ভবত দাবি করতে চান যে, জনগণের সর্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সেক্যুলার আদর্শ অনুসরণ প্রয়োজন। আসলে এটা একটা অবাস্তব চিন্তাধারা। সেক্যুলারিজম বলতে যদি সম্প্রদায়নিরপেক্ষতা বুঝায় তা সম্ভব একমাত্র ধর্মে গভীর বিশ্বাসে। ইসলামের সোনালি যুগে খোলাফায়ে রাশেদার দ্বিতীয় খলিফার আমলে মিশরের এক অমুসলিম বালককে গভর্নর নন্দন অন্যায়ভাবে চপেটাঘাত করার পর বিচার চেয়ে খলিফার কাছে অভিযোগ এলে তিনি সব কিছু শোনার পর ওই অমুসলিম বালককে বলেন, যেভাবে তোমাকে চপেটাঘাত করেছে সেভাবে তাকে চপেটাঘাত করবে। সে সময় খলিফা মিনারের গভনর্রকে ভর্ৎসনা করে বলেন, তোমরা কবে থেকে মানুষকে দাস বানানো শুরু করেছ, অথচ ওদের মায়েরা ওদের স্বাধীন হিসেবে জন্ম দিয়েছে?
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলামী আদর্শে গভীর বিশ্বাসী হওয়ার কারণে এদেশে সহজে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না। অথচ সেক্যুলার আদর্শের দাবিদার প্রতিবেশী দেশে কোনো না অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক অত্যাচার হয় না, এমন আসা খুব কমই যায়। অবশ্য সে দেশে ধর্মে গভীর বিশ্বাসী যারা ও তারা যে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে জীবন দিয়ে তার প্রমাণ রেখে গেছেন মহাত্মা গান্ধী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন