চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অনুমোদন ছাড়াই তিন বছর ধরে আবাদি জমি ও বসত বাড়ির পাশে ইটভাটা চালানো হচ্ছে। উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের পরীর বিল এলাকায় মেসার্স মোহছেন আউলিয়া ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং নামে এই ইটভাটায় অনুমোদন ছাড়াই ইট তৈরি করে পোড়ানো হচ্ছে। এতে আশপাশের প্রতিবেশ ও পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে উৎপাদিত ফসলে।
ভাটার কালো ধোঁয়ায় প্রতিবছরই আশপাশের বাড়ির গাছের ফল নষ্ট হচ্ছে। মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে টিনের চাল। তাছাড়া আবাদি জমির ফসলও ভালো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় প্রভাবশালী মো. সামশুল আলম ও তার ব্যবসায়ীক পার্টনার সাতকানিয়া উপজেলার মো. আবু তাহের ভাটাটি চালাচ্ছেন। অনুমোদন ছাড়া ভাটাটির বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ি কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, ওই ইটভাটার আশেপাশে কমপক্ষে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। চারপাশে রয়েছে কয়েক শ’ একর তিন ফসলি জমি। ইতিমধ্যে ভাটার পাশের জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। আর কিছুদিন পরে ইরি ধানের চারা রোপণ শুরু হবে ভাটার আশপাশ এলাকায়। এছাড়া রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) দুটি সড়ক। একটি সড়ক বটতলী রুস্তমহাট থেকে তুলাতলী হয়ে পশ্চিম বরৈয়ার সঙ্গে সংযুক্ত। অপরটি মোহছেন আউলিয়ার মাজার হতে বারশত কালীবাড়ি ক্যাপ্টেন বখতিয়ার সড়কের সাথে মিলেছে। সড়ক দুটি দিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাকসহ প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে বলে শ্রমিকেরা জানান।
ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে আশেপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়াই তিন বছর ধরে ভাটাটি চললেও বিষয়টি এলাকার কেউই জানেন না। ভাটার পাশের বাড়িতে বসবাসকারী কংসরাজ দত্ত (৪৫) জানান, ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে প্রতিবছরই গাছের ফল নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ঘরে টিনের চালে মরিচা ধরেছে। তাছাড়া আবাদি জমিতে ফসলও ভালো হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশেই একটি চায়ের দোকানি বলেন, ভাটার অনুমোদন আছে কি না তা আমাদের জানা নেই। তবে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গাছে ফুল ফল কিছুই থাকছে না। কাউকে কিছু বলেও লাভ হয় না। এলাকার লোক ভাটাটি চালায়। তাই কষ্ট সহ্য করে থাকি।
মোহছেন আউলিয়া ব্রিক্স নামের ইটভাটার মালিক মো. সামশুল আলম বলেন, ডিসি অফিসে আবেদন করেছি। ভাটার অনুমোদন দিয়েছে কি না জানি না। কাগজপত্র সব আমার পার্টনার সাতকানিয়ার আবু তাহেরের কাছে। এ বিষয়ে জানতে আবু তাহেরের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ ইনকিলাবকে বলেন, ওই ভাটার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন