এমএস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা সদর-কধুরখীল-চৌধুরীহাট জিইসি সড়কের দূরবস্থার কারণে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল দূরের কথা জনচলাচলেও কষ্ঠ সাধ্য হয়ে উঠেছে। অথচ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কলেজ, মাদ্রাসা, উচ্চ বালক বিদ্যালয় ও বালিকা বিদ্যালয়, প্রাথমিক সরকারি ও বেসরকারি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াত রয়েছে। এছাড়া চাকরিজীবী, শ্রমজীবীসহ গ্রামীণ জনপদের প্রায় ২০-৩০ গ্রামের শিশু, মহিলা, পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ হাজারো প্রতিবেশী মানুষের যাতায়াতে সড়কটিই ভরসা। ফলে প্রায় সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যাত্রী সাধারণ। ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী জানান, মিথ্যা ও চাটুকারী প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসতে ভাসতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর আর ভরসা করা যাচ্ছে না। টেক্সিতে চড়ার অবস্থা ছিল না এমন ব্যক্তিরা প্রতারণার ছোঁয়ায় আজ পাজেরো হাঁকাচ্ছে, একি কম গৌরবের বিষয়? এখানকার লাখো জনতা যেখানেই যাক যেন তাদের কোন দায়ই নেই। তবুও নাকি তাদের গর্ব হয় উন্নয়ন নিয়ে। যেখানকার সড়কে ‘হাঁটতে গেলে পা ভাঙ্গে-আর যানবাহনে চড়তে গেলে ভাঙ্গে কোমর’ এমন দুর্ভোগের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন দেশের কোথাও নেই। এরপরও এখানকার চাটুকারদের নিয়ে উন্নয়নের বর্ষপূর্তিও পালন করতে দেখা যায়। আজীবন শুনে এসেছি উন্নয়নের জন্য ১ম শর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি। কিন্তু বোয়ালখালী ক্ষেত্রে যেন তার উল্টো। সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদর-মুরাদ মুন্সীর হাট হয়ে কধুরখীল খোকার দোকান পর্যন্ত জিইসি সড়ক ও কধুরখীল খোকার দোকান হতে চৌধুরীহাট পর্যন্ত ইপি সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ না করার কারণে বিটুমিন পিচ ওঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ সড়কে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগে আছে। বর্ষা মৌসুমে পানি আর কাদায় এ সড়ক একাকার হয়ে যানবাহনতো নয়ই হেঁটে চলাচলও দায় পড়ে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এ সড়ক হয়ে কধুরখীল জলিল আম্বিয়া কলেজ, কধুরখীল ইউনাইটেড মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, আল-কুরআন একাডেমি, কধুরখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় ডজন খানেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়–য়া কয়েক হাজার কোমল মতি শিশুর আসা-যাওয়ায় দুর্ভোগের স্বীকার হয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। এছাড়াও পূর্ব গোমদ-ী, কধুরখীল, চৌধুরীহাট, ইমাম নগর, মধ্যম কধুরখীল, সৈয়দপুর, ছৈয়দনগর, বড় দীঘির পাড়, লালার দীঘির পাড় ও চরণদ্বীপ ইউনিয়নের হাজার হাজার জনসাধারণ নগরী ও উপজেলা সদরে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলেও অতি কষ্টে চলাচল করতে হয়। এসব অঞ্চলের রোগীদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এ সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত সিএনজি টেক্সী, টেম্পো, কার-মাইক্রো, মিনি বাস চললেও প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। সড়কে সৃষ্ট গর্তে পড়ে কোন গাড়ি একবার আটকে গেলেই হলো যেন সারা দিনের ক্ষেপ। এ ছাড়া যাত্রীবাহী গাড়ি প্রায় সময় নষ্ট হওয়াতো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পৌরসভা সদর থেকে চৌধুরী হাট পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা একেবারে নাজুক। এমনিতেই যানচলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে তো আর কথা নেই। সড়কের এ অবস্থার কারণে কয়েক দিন পরপর গাড়ি নষ্ট হওয়ার ফলে যা ইনকাম করি তার সিংহ ভাগ মেরামতের কাজে চলে যায়। ফলে নিয়মিত পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে হয়ে যায়। কধূরখীল আল-কুরআন একাডেমি’র সিনিয়র শিক্ষক ও হোস্টেল সুপার মাও. আবু সাঈদ, হিসাব রক্ষক মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, তাহফিজুল কোরআন বিভাগের সপারভাইজার মো. বদিউল আলম বলেন, যানচলাচল দূরে থাক হেঁটে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গনের শুরুতে সংস্কার না করায় সড়কের এ বেহালদশা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে উদাসীন। তারা এলাকার উন্নয়ন বাদ দিয়ে নিজ স্বার্থোন্নয়নে ও পকেট পুজারিতে ব্যস্ত। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির পাশে নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও এখানকার জনপ্রতিনিধিদের কিছু আসে যায় না। এলাকাবাসী এসব অর্থব প্রতিনিধির ভরসা ছেড়ে দিয়ে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ ও সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযেগিতা কামনা করেছেন। বোয়ালখালী উপজেলা প্রকৌশলী সুজিত কান্তি মজুমদার বলেন, প্রয়োজনীয় চাহিদা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে জরুরিভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সড়কটি সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন