সাইদুর রহমান, মাগুরা থেকে : মাগুরা জেলার লিচু পল্লী হিসেবে খ্যাত সদর উপজেলার হাজরাপুর, মিঠাপুর, ইছাখাদা, খালিমপুর, হাজিপুরসহ ৩০ গ্রামে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে এলাকার কৃষকরা। পরিবেশ পক্ষে থাকায় গাছে লিচুর ব্যাপক মুকুল দেখা দেয়। ইতিমধ্যে ফল ধরতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিটি গাছে বিপুল পরিমাণ লিচুর ফল দেখা যাচ্ছে। কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে সংশ্লিষ্ট চাষীরা লিচুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে। গত বছরের ক্ষতি এবার পুষিয়ে যাবে এমটাই আশা তাদের। প্রতি বছরই এখানকার চাষীরা লিচু বিক্রি করে লাভবান হয়ে থাকে। গত বছর বিরূপ আবহাওয়া আর কৃষি বিভাগের উদাসিনতায় এলাকার চাষীরা ফলন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। মাগুরা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে মাগুরা ঝিনাইদহ সড়কের ইছাখাদা পৌঁছিলেই চোখে পড়ে রাস্তার দুপাশে সারি সারি লিচু বাগানে থরে থরে ধরে থাকা লিচুর এ মনোরম দৃশ্য। এ লিচু পল্লীতে দেড় হাজার লিচু বাগান রয়েছে। লিচু চাষে অনেক চাষীর ভাগ্য বদলে দিন দিন অন্যেরা উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসায় এলাকা লিচুর চাষে বিপ্লব ঘটে। এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় লিচুমেলা। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে ব্যাপারিরা। সমাগম হয় বিপুল সংখ্যক মানুষের। মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর, রাঘবদাইড়, হাজিপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর, ইছাখাদা, খালিমপুর, রাউতাড়া, মির্জাপুর, বামনপুর, আলমখালী, বীরপুর, বেরইল, লক্ষ্মীপুর, আলাইপুর নড়িহাটিসহ ৩০ গ্রামের চাষীরা গত ২১ বছর ধরে বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিচুর আবাদ করে আসছে। মাগুরার চাষীরা বেদানা, মোজাফ্ফর, চায়না থ্রী ও বোম্বাই জাতের লিচুর চাষ করে। যা ক্রেতাদের কাছে খুবই প্রিয়। আর এ কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা এখানকার লিচু আগে ভাগে কিনে পরিচর্যা করে অন্যত্র বিক্রি করে লাভবান হয়। এ কারণে এলাকার লিচু জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রতি বছর ব্যাপারীরা লিচু কিনতে ভীড় জমায়। এলাকা হয়ে ওঠে জমজমাট। ট্রাক ট্রাক লিচু এখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যায় ব্যাপারিরা। তবে ইতিপূর্বে প্রতি বছর লিচু মেলা অনুষ্ঠিত হলে ও গত দু’বছর রাজনৈতিক কারণে লিচু মেলা করা সম্ভব হয়নি বলে জানান লিচু মেলার আয়োযোকরা। তাছাড়া এলাকার লিচু চাষের মূল হোতা ওলিযার রহমান সম্প্রতি মারা গিয়েছে। এর ফলে আগের মত লিচু মেলা হবে কিনা তা নিয়ে কৃষকদের সংশয় রয়েছে। জনৈক লিচু চাষী জানান, তার বাগানে ৫০টি লিচু গাছের প্রতি গাছে ৪ হাজার করে লিচু উৎপাদন হয় যা ৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। লিচু চাষীরা জানান, বিগত বছরগুলোর মত এবারও ব্যাপকভাবে লিচুর ফুল ও ফল ধরে। আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষি বিভাগের তেমন সহযোগিতা না পেলেও উৎপাদন ভালো হবে। তারা জানান, লিচুর পরিচর্যা এখন নিজেরাই করা শিখে ফেলেছে। তবে বৃষ্টি না হলে লিচুর আকার ছোট হবে। ফলে কৃষকরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত আশাতিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে। এমন ধারণা পোষণ করেছেন এলাকার চাষিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন