গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ১০টি মসলা চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্যোগে গোপালগঞ্জে পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মৌরি, জাউন, শোলক, ফিরিঙ্গি, কালোজিরা, ধনিয়ার ও মেথির উপযোগিতা যাচাইয়ে প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এসব প্রদর্শনী প্লট থেকে মসলার বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে বলে পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচএম খায়রুল বাশার জানিয়েছেন। পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি সূত্রে জানাগেছে, এ বছর গোপালগঞ্জে ১৪ বিঘা জমিতে বারি ১ জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ১৬ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ৮ বিঘা জমিতে রারি ১ জাতের রসুন, ১০ বিঘা জমিতে বারি ১ জাতের ধনিয়া, ৪০ বিঘা জমিতে বারি ১ জাতের কালোজিরা, ৫ বিঘা জমিতে রারি ১, ২, ৩ ও ৪ জাতের হলুদের চাষ করা হয়। প্রতি হেক্টরে রসুন ৭ টন, হলুদ ২৫ টন, কোলোজিরা ১ টন, ধনিয়া ২ টন উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া মৌরি, জাউন, শোলক, ফিরিঙ্গি, ও মেথির উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে। মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, স্থানীয় ও দেশী জাতের তুলনায় বারি উদ্ভাবিত রসুন ও পেঁয়াজের ফলন খুবই বেশি। রসুন ও পেঁয়াজের সাইজ বড়। বারি উদ্ভাবিত রসুন ও পেঁয়াজের আবাদ করে আমি লাভবান হয়েছি। আমার দেখাদেখি আগামীতে আমাদের অঞ্চলে এ জাতের পেঁয়াজ রসুনের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাসপুর গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, বারি উদ্ভাবিত কালোজিরা ও ধনিয়ার ফলন ভালো হয়েছে। এ জাতীয় মসলা আবাদ অত্যন্ত লাভ জনক। আমাদের মাঠের কৃষক এটা বুঝতে পেরেছে। কৃষক আগামী বছর আমদের এলাকায় মসলা ফসল সম্প্রসারণ করবে। পিরোজপুর- গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফেরদৌসি রহমান বলেন, গোপালগঞ্জে কৃষি মূলত ধান ও পাটের উপর নির্ভরশীল। ধান পাট আবাদ করে কৃষক লাভের মুখ দেখছিলো না। এ জেলার কৃষককে লাভজনক মসলা, তেল, গম, ডাল, ফল জাতীয় ফসল আবাদে উদ্বুদ্ধ করেতে আমদের প্রকল্প ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু করে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাতের বীজ আমরা কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছি। কৃষক আমদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ, বীজ, সার, ছত্রাক নাশক নিয়ে মাঠে প্রয়োগ করে সেনা ফলাচ্ছেন। ধান ও পটের পরিবর্তে এ জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করে কৃষক ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। অধুনিক চাষাবাদে তাদের আর্থ সমাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। পিরোজপুর- গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচএম খায়রুল বশার বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত মসলা জাতীয় ফসল আবাদে গোপালগঞ্জে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এ বছর মৌরি, জাউন, শোলক, ফিরিঙ্গি ও মেথি গোপালগঞ্জের সামান্য কিছু জমিতে পরীক্ষা মূলক প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এতেও অর্জিত হয়েছে আশা ব্যাঞ্জক সাফল্য। এটি গোপালগঞ্জের কৃষির জন্য সুসংবাদ বয়ে এনেছে। লাভজনক মসলা উৎপাদনে কৃষকের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে গোপালগঞ্জে লাভজনক মসলা উৎপাদন সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন