এক সময় চীনের দুঃখ হোয়াং হো নদী এখন আশির্বাদে পরিণত হয়েছে। চীনা প্রকৌশলীরা উত্তাল ও খর¯্রােত হোয়াং হো নদীর ভাঙনরোধের ফলে বিশাল চর জেগে ওঠার পাশাপাশি বাড়তি ফসল উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অথচ নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া দ্বীপের ভাঙনরোধে আজও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অপরদিকে হাতিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নাজুক পর্যায়ে পৌছেছে । উপজেলা হেড কোয়াটারসহ কতিপয় স্থানে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহ হলে অবশিষ্ট ৯৮শতাংশ অঞ্চল অন্ধকারে রয়েছে ।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাতিয়া মূল ভূখন্ডের নলচিরা, উত্তরাঞ্চলের হরণী ও চানন্দী ইউনিয়নে প্রতি বছর গড়ে ৮/১০ কিলোমিটার জনবসতি মেঘনায় নিমজ্জিত হচ্ছে। এছাড়া চরকিং, সোনাদিয়া এবং দক্ষিণে জাহাজমারা ইউনিয়নের মোক্তারিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে নলচিরা, হরণী ও চানন্দী ইউনিয়নে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাতিয়ার ঐতিহ্যবাহী আফাজিয়া আগামী বর্ষা মৌসুমে মেঘনায় বিলীন হবার প্রহর গুনছে। চলতি শুস্ক মৌসুমে ভাঙনরোধ করা না হলে প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলটি হারিয়ে যাবে ।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৩ সালে হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের পশ্চিমপার্শ্বে ভাঙন কবলিত সোয়া দুই কিলোমটিার এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বøকবাঁধ নির্মিত হয়েছে । এতে করে পুরো এলাকা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে উপরোন্ত বøকবাঁধ এলাকার পশ্চিম দিকে বিশাল চর জাগছে । তমরদ্দি এলাকায় ভাঙনরোধে সফলতায় প্রেক্ষিতে নলচিরা, হরণী ও চানন্দী ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকায় বøকবাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবী ।
অপরদিকে হাতিয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ চাহিদা ৭ মেগাওয়াট। এ যাবত ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে প্রায় জোড়াতালি দিয়ে আধা মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এতে হাতিয়া পৌর এলাকার মাত্র ৪০ভাগ এলাকায় সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও অবশিষ্ট বিশাল এলাকা অন্ধকারে রয়েছে । হাতিয়া বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওছখালীস্থ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আরো দুইটি ডিজেল চালিত জেনারেটর স্থাপন করা হচ্ছে । এতে করে মাত্র দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে । অর্থাৎ হাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা বরাবরের ন্যায় অন্ধকারে থেকে যাবে ।
উল্লেখ্য, হাতিয়া উপজেলার পূর্বপার্শ্বে সন্ধীপ উপজেলার অবস্থান। সন্ধীপ উপজেলায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ চলছে । চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশ বাড়িয়া থেকে সন্ধীপের গুপ্তছড়া পর্য্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সাগর তলদেশে সাব মেরিন ক্যাবল স্থাপন শুরু হয়েছে। ১০০শত কোটি টাকা ব্যয়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপিত হলে চলতি বছর সন্ধীপ উপজেলা জাতীয় গ্রীডের সাথে যুক্ত হবে । এতে করে সাগর বেষ্টিত সন্ধীপ উপজেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে। অপরদিকে হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া মূল ভূখন্ড নলচিরা এলাকার দূরত্ব ১৭ কিলোমটিার। এরমধ্যে মাত্র ছয় কিলোমিটার অংশে নদীর গভীরতা মাত্র ২৫/৩০ মিটার । অবশিষ্ট ১১ কিলোমিটারে অসংখ্য চার জাগছে । অর্থাৎ সন্ধীপের চেয়ে এখানে সাব মেরিন ক্যাবল স্থাপন কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়ও কম হবে । হাতিয়া নদী ভাঙনরোধ তৎসহ সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলায় ধান, মৎস, রবিশস্য, ও শাকসবজী উৎপাদনে মডেল হিসেবে আতœপ্রকাশ করবে ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়া আসনের এমপি আয়েশা ফেরদৌস ইনকিলাবকে জানান, ২০১৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে হাতিয়া মূল ভূখন্ডের নলচিরা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে হরনী ও চাঁনন্দী ইউনিয়নের আট কিলোমিটার এলাকায় বøকবাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে ২টি ডিপিপি প্রস্তুত করা হয় । বর্তমানে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অপরদিকে হাতিয়ায় সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আমি মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রীর সাথে একাধিকবার কথা বলেছি। আশা করি হাতিয়ার সাত লক্ষাধিক অধিবাসীর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের সম্মতি প্রদান করবেন ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন