শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

শালবনবিহার ও জাদুঘরে আয় বাড়লেও কমানো হয়েছে পরিচর্যা ব্যয়

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন : কুমিল্লার ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম কোটবাড়ির ময়নামতি শালবনবিহার ও জাদুঘরে বছরজুড়েই দেশি-বিদেশি পর্যটক আর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। প্রতি অর্থবছরে দর্শনার্থী টিকেট বিক্রি করে প্রত্মতত্ত¡ প্রতিষ্ঠানটির আয় বেড়েই চলেছে। তবে আয় বাড়লেও চলতি অর্থবছরে প্রত্মতত্ত¡ অধিদফতর কুমিল্লার এই প্রত্মতত্ত¡ প্রতিষ্ঠানের পরিচর্যা ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে কম বরাদ্দ দিয়ে ব্যয়ের খাত পরিচালন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের। গত তিন বছরে কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধবিহার ও জাদুঘর ঘিরে সরকারের রাজস্বখাতে আয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
কমিল্লা শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে কোটবাড়ি। এখানে রয়েছে শালবনবিহার ও ময়নামতি জাদুঘর। প্রায় ৩৭ একর জায়গাজুড়ে শালবনবিহার বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। সমতল থেকে যার উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। বুদ্ধ রাজাদের সময় সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দিতে এই শালবন বৌদ্ধবিহার স্থাপিত হয়। আর ময়নামতি জাদুঘরে রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্মতত্ত¡ অধিদফতরের আওতায় রয়েছে ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান দু’টি। প্রতিদিন শতশত দেশি পর্যটক-দর্শনার্থী ছাড়াও বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে ঐতিহাসিক শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক আর দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর থাকে শালবনবিহার ও ময়নামতি জাদুঘর। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শালবনবিহার ও জাদুঘরের টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৬৭ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে তা দাঁড়ায় ৯৫ লাখ টাকার উপরে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর অর্থাৎ গত বছরের জুন পর্যন্ত আয় দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২৩ লাখ টাকা। যা বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শালবনবিহার ও ময়নামতি জাদুঘরের টিকিট বিক্রিতে এসেছে ৪৫ লাখ টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের আয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত কর্মকর্তারা।
কিন্তু কুমিল্লার এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান দুইটির আয় বছর বছর বৃদ্ধি পেলেও চলতি অর্থবছরে এসে প্রত্মতত্ত¡ অধিদফতর এটির পরিচর্যা ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছেন। অথচ যেসময় প্রতিষ্ঠান দুইটি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে হিমশিম পোহাতে হতো তখন ব্যয় বরাদ্দ বেশি ছিল। আর যখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হচ্ছে তখন কমিয়ে দেয়া হয়েছে ব্যয় খাতের বরাদ্দ। অতিরিক্ত হারে ব্যয় বরাদ্দ কমানোর ফলে প্রতিষ্ঠান দুইটি পরিচর্যা সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি প্রত্মতত্ত¡ অধিদফতর থেকে পাঠানো আয় ও ব্যয় বরাদ্দের তালিকায় দেখা গেছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য বই ও পত্রিকার বিল বাবদ চার হাজার টাকা এবং বীজ ও উদ্ভিদ কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। অথচ যখন বিহার ও জাদুঘর থেকে আয় ছিল ২২ লাখ টাকা তখন ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার টাকা। আবার যে বছর আয় ছিল ৬৬ লাখ টাকা সেই সময় ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যেখানে এক কোটি ২৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে সেখানে ব্যয় বরাদ্দ ছিল মাত্র ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে আয় এসেছে ৪৫ লাখ টাকার উপরে। বাকি ছয় মাসে এটি এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। অথচ চলতি অর্থবছরে ব্যয় বরাদ্দ দেখানো হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠান দুইটির নিয়োজিত কর্মকর্তারা মনে করছেন, ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ এভাবে কমিয়ে আনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কম বরাদ্দ দিয়ে ব্যয়ের খাত পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
কুমিল্লা ময়নামতির শালবন বিহার ও জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, চলতি অর্থবছরে বই ও পত্রিকার ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে মাত্র চার হাজার টাকা। অথচ সারা বছর পত্রিকার বিল চার হাজার টাকায় হয় না। সেখানে বই পুস্তক কেনাটা তো দুরূহ ব্যাপার। বীজ ও উদ্ভিদ কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু ৩৭ একর জায়গায় এত কম বরাদ্দে বীজ ও উদ্ভিদ কেনা পরিচর্যার কাজ পরিচালনা করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই শালবন বৌদ্ধবিহার ও জাদুঘরের মতো দু’টি ঐতিহাসিক বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যয় বরাদ্দ না কমিয়ে বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন প্রতিবছরই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিস্কারের জন্য এখানে খনন কাজ হয়ে থাকে। এখানকার প্রাপ্ত প্রত্মসম্পদগুলো বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে খননে আবিষ্কৃত অনেক প্রত্মসামগ্রী, নিদর্শন জায়গার অভাবে জাদুঘরে প্রদর্শন করা যাচ্ছেনা।
এদিকে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটকরা পা রাখছেন স্থানটিতে। শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর দেখভালের কাজে বর্তমানে মাস্টাররোলে চাকরি করছেন ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কাস্টোডিয়ান ও সহকারী কাস্টোডিয়ান পদে রয়েছেন দুই কর্মকর্তা। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে পাঁচজন রয়েছেন প্রেষণে। ২০১৫ সালের জুন থেকে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ২০ জন আর্মড ব্যাটালিয়ন আনসার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। তবে অনেকটা নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে জাদুঘরের বিপরীতে গাছগাছালি আর ছোট-বড় টিলায় বেষ্টিত ‘শালবন’ নামের জায়গাটি। এখানে প্রায়ই চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে শালবন নামের এ স্থানটি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু বন বিভাগ থেকে কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই গাছগাছালি ঘেরা শালবনে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন