ফুলপুর (ময়মনসিংহ) থেকে মো. খলিলুর রহমান : বৈরী আবহাওয়া, অকাল বন্যা, পাতা মরা রোগসহ নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও ধান চাষের এলাকা বলে পরিচিত ময়মনসিংহের ফুলপুরে চলতি মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিবছর ধান চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও তুলতে না পারায় হতাশ কৃষকরা এবার ধানের পাশাপাশি খড়ে মূল্যও বেশি পাওয়ায় তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে চাষ হয়েছে ২০ হাজার ৮৭০ হেক্টর। এর মধ্যে রয়েছে বিনা-৭, বিনা ১১, বিআর-১১, বিআর-৩৮, বিআর-৩৪, বিআর-৪১, বিআর-৪৬, বিআর-৪৯, বিআর-৫১ বিআর-৬২ জাত। এ ছাড়াও স্থানীয় বোরোহাজী, বিরই, মালঞ্চি, কালোজিরা, মালা, চিনিশাইল তুলশিমালা ও পাজাম জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।
ফুলপুরে এখন চলছে পাকা ধান কাটার ধুম। বাড়িতে বাড়িতে চলছে নতুন ধান মাড়াইয়ের কাজ। বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে যে দিকে চোখ গেছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দেখা গেছে সোনালি পাকা ধান। শ্রমিকরা দল বেঁধে পাকা ধান কাটছে। ক্ষেত থেকে কেটে আনা ধানে ভরে আছে কৃষকের বাড়ির আঙিনা। ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। মাড়াই ঝাড়াইয়ের কাজে অনেক কৃষক শ্রমিকদের সাথে স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার কাজে নেমে পড়েছেন। ঘরে ওঠছে নতুন ধান তাই কৃষাণীরাও মহাব্যস্ত। পরিবারের রকমারি জাতের পিঠা তৈরির আয়োজন চলছে সমান তালে। সম্প্রতি ফুলপুর অনার্স স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন জাঁকজমকের সাথে পিঠাউৎসব পালন করে। এতে রকমারি পিঠা প্রদর্শন ও পরিবেশনের তালে তালে জমে ওঠেছিল দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছিল, তা ধান ও খড়ে মূল্যে পুষিয়ে আমরা লাভবান হয়েছি। ফুলপুরের চরপাড়া গ্রামের আদর্শ সৌখিন কৃষক আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকবর আলী আহসান জানান, এবার ফলনও ভালো হয়েছে। তাছাড়া গত কয়েক বছর এক মণ ধানের মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮০০ টাকা, এবার মাড়াই মৌসুমেই ধানের মূল্য ১২ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। এতে চাষিরা খুবই খুশি। ইমাদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল হক জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে থেকে তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ পাওয়ায় পাতামরা রোগ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে পেরেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন