শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আগের মতো নেই সেই যশোরের যশ খেজুরের রস

প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

যশোর থেকে রেবা রহমান : এক সময় শীতের ঝিরঝিরে বাতাসে যশোরের গ্রামাঞ্চল থেকে ভেসে আসতো মিষ্টি গন্ধ। এখনও গন্ধ আসে। তবে সে গন্ধ আর আগের গন্ধের মধ্যে বিরাট পার্থক্য। যশোরের যশ খেজুরের রস। এটি ছিল যশোরের অন্যতম ঐতিহ্য। এখন আছে তবে আগের তুলনায় একেবারেই কম। নামকাওয়াস্তে কোনরকমে খেজুরের রস থেকে গুড়, পাটালি উৎপাদন হয়। যা বলা যায় ঘ্রাণেই অর্ধভোজন অবস্থার মতো। নলেন গুড়ের ঘ্রাণই ছিল আলাদা। পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেই। যা ছিল তাও আস্তে আস্তে জ্বালানিসহ বিভিন্ন কাজে কেটে নেয়ার কারণে গ্রাগে গ্রামে হাতে গোনা খেজুর গাছ দেখা যায়। যশোরের খেজুরের গুড়, পাটালির নামে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ঢাকা চালান যায় নকল ও ভেজাল গুড় পাটালি। খেজুরের গুড়ের নামে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাট বাজার থেকে ক্রয় করে আমরা কী খাচ্ছি এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ। যশোর অঞ্চলে খেজুর গাছকে বলা হয় মধুবৃক্ষ। শীতের আগমনী বার্তায় থেকে মধুবৃক্ষ পরিষ্কার করা, ডালপালা কেটে দফায় দফায় চাচ দেয়া, কঞ্চির নলি বসানো, মাটির ভাড় ঝুলানো, ভোরে রসের ভাড় পাড়া, রস জ্বারিয়ে পাটালি ও গুড় তৈরিসহ গাছিদের ব্যবস্ততা থাকে শীতবাল জুড়ে। শীতকালে মধুবৃক্ষকে ঘিরে চলছে গ্রামীণ উৎসব। গ্রামে গ্রামে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড় ও পাটালি। রস জ্বালিয়ে ভিজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম চলছে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির কদর প্রতিবছরই বাড়ছে। রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায় গুড় ও পাটালি নিয়ে। বিশেষত্ব হচ্ছে যত শীত তত মিষ্টি ও সুস্বাদু হয় খেজুরের রস। ঠকঠকে শীতের গুড় ও পাটালির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অসময়ে হাজারো চেষ্টা করেও শীত মৌসুমের আসল গুড় পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও তা হবে ভেজাল কিংবা চিনি মিশানো। কিন্তু শীত মৌসুমেও ভেজাল খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির রমরমা ব্যবসা চলছে। গ্রামীণ পরিবেশই আলাদা শীতকালে। গাছিরা ধারালো দা হাতে ছুটছেন খেজুর গাছের কাছে। মোটা দড়ি কোমরে বেঁধে পাখির মতো ঝুলে গাছি দা দিয়ে গাছ কেটে তাতে মাটির ভাড় ঝুলানো হচ্ছে। ডাকাতিয়া গ্রামের গাছি ময়না জানালেন, আগের মতো খুশী হতে পারি না। কয়েকবছর আগেও আমি গাছ কাটতাম অন্তত ৪০/৫০টি। এখন কাটি ৪/৫টি। আমার পেশা গাঝে ঝুলে নিজের ও পরের খেজুর গাছ কাটা। গাছ একবারেই কমে গেছে। আগে বাড়ি বাড়ি মাঠে মাঠে খেজুর গাছ দো যেত এখন আর দেখা যায় না। তাছাড়া রস, গুড় ও পাটালির উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় গাছিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আগের মতো বিরাট লাভজনক না হলেও মৌসুমী আনান্দ কিছু গাছীর নতুন এক গতি সৃষ্টি করে থাকে। গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে জমির আইলে কিংবা বাগানে অযতœ অবহেলায় ও সম্পূর্ণ বিনা খরচে বেড়ে ওঠা ‘মধুবৃক্ষ’ খেজুর গাছ। প্রতিবছর শীত মৌসুমে মানুষের রসনা তৃপ্তির যোগান দিয়ে আসছে। খেজুরের রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা গুড়, নলেন গুড়, মিছরি দানার গুড় ও পাটালি তৈরির দৃশ্য অনেকটাই অভিনব মনে হয়। পুরো শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক এই উৎসব চলে আসছে আবহমানকাল ধরে। এর পেছনে লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিরাট সম্ভাবনা। কিন্তু সরকারিভাবে কখনোই কাজে লাগানো হচ্ছে না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের চাহিদা পূরণ ছাড়াও প্রতিবছর বিদেশে গুড় ও পাটালি রফতানি করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করা সম্ভব বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন