বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সালথায় মিলাদের খাবার থানায় ওসির তান্ডবে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুর জেলার সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন এর তাÐবে অতিষ্ঠ সালথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা । কোনো এক বিশেষ ব্যক্তির রাজনৈতিক মিশন বাস্তবায়নের একটি পক্ষকে উসকে দিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ওসি মো. দেলোয়ার। এমনি আলোচনা এখন সালথা উপজেলার বিভিন্ন বাজার, পাড়া, মহাল্লায় ও চায়ের দোকানে। ওসি দেলোয়ার হোসেন সরকারি দায়িত্ব পালন না করে একটি পক্ষের রাজনীতি হাসিলের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ওসি একটি গ্রæপের নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বলে এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে।
সরেজমিন জানা গেছে, গতকাল উপজেলার জয়ঝাপ গ্রামের মৃত হাকিম মোল্লার ছেলে আতিক মোল্লা তার বাবার দোয়া মাহফিলের আয়োজন উপলক্ষ্যে অতিথিদের জন্য রান্নাবান্নার কাজ চলছিল। এ খবর জানা জানি হলে দুপুর দেড়টার দিকে সালথা থানার ওসির ইন্ধনে মিলাদের খাবারের ড্যাগসহ খাবারের প্লেট মুসল্লিদের বসার চেয়ার আটক করে থানায় নিয়ে আসে ওসিসহ পুলিশের ৯ সদস্য। এ সময় রান্নার কাজে থাকে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে ওসি নিজেই লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। গ্রামবাসী জানায়, ওসি আচারনে আমরা হতবাক আমরা যতই অনুরোধ করি তিনি ততোই রেগে আমাদের মা বোন তুলে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে। এটা কি কোন ওসির আচরণ হতে পারে ? সে কি মানুষ না অমানুষ? আমরা এই ওসি দেলোয়ারের বিচার চাই। মিলাদের আয়োজক স্থানীয় আতিক মোল্লা সাংবাদিকদের জানায়, আমার বাবার জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করি এবং কিছু আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোক দাওয়াত করি এবং খাবারের রান্নার আয়োজন করি। হঠাৎ দুপুর দেড়টার সময় সালথা থানার ওসিসহ ৮-৯ জন পুলিশ এসে খাবারের ড্যাক কিছু প্লেট ও চেয়ার টেবিল আটক করে নিয়ে যায়। রান্না কাজে ব্যস্ত মুরব্বি লোকটাকে ওসি নিজেই লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মিলাদে দাওয়াতি মেহবান মাওলানা আসমত আলীকে গ্রেফতার করে এবং পরে ছেড়ে দেয়। এসব কি অবস্থা? কোন পাগল ছাড়া সুস্থ্য মানুষের আচরণ এমন হতে পারে না। স্থানীয় খোরশেদ মাতুব্বর জানায়, আমার আত্মীয় আতিক মাতুব্বর বাড়িতে তার বাবার দোয়া মাহফিলে দাওয়াত ছিল। সেখানে এসে দেখি সালথা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন সাহেব ৮-৯ জন পুলিশ নিয়ে মিলাদের খাবার নষ্ট করে দেয় এবং রান্নাকৃত খাবার আটক করে নিয়ে যায়।
উপজেলার রমেকান্তপুর গ্রামের কামাল বিশ^াস জানায় ওসি দেলোয়ার হোসেন সরকারি দায়িত্ব পালন না করে রাজনীতি করছে তিনি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তার বাহিনী গঠন করছে। তার বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা থাকছে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। অপরদিকে, অভিযোগ এই ওসির ইন্ধনেই প্রতিপক্ষের হাঁতুড়িপেটায় আহত হান্নু শেখ (৫০) প্রায় দুই মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুরে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। জানা যায় , গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে হান্নু শেখকে হাঁতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু ভেবে রাস্তায় পাশে ফেলে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। সেখান থেকে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে। সে সময় প্রতিপক্ষের হুমকি ও নির্দেশের কারনে হান্নু শেখকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাড়িতেই চিকিৎসা করানো বাধ্য করানো হয়। পরবর্তিতে হান্নুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে দ্রæত ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থা মেডিক্যালেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় কয়েক জন ব্যক্তি জানান, হান্নুর মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষের ভয়ে গোপনে মিমাংসা করে তার পরিবার। পরে ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতের লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় থানায় কোন মামলাও হয়নি। হাতুড়িপেটায় মৃত্যুর বিষয় থামাচাপা দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে হান্নু শেখকে হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখে প্রতিপক্ষ। এ বিষয় তখন সালথা থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা নেয়নি। বরং হামলার পর হান্নুর ছেলেকেই আটক করে নিয়ে আসে ওসি। পরে বাবলু চৌধুরী বিরোধী থাকা যাবে না এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে আটককৃতদেও ছেড়ে দেয়া হয়। হান্নুর মৃত্যুর পরও পুলিশ নীরব। তাই নিহতের পরিবারের লোকজন ভয়ে এ ঘটনায় মামলা করতে সাহস পায়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদেও আরো জানায় সালথার ওসি দেলোয়ার হোসেন সর্বোপরি সরকারি দায়িত্ব বাদ দিয়ে এক বিশেষ ব্যক্তির রাজনীতি করছেন। ওসি সরকারি দায়িত্ব পালন করছে না। জন প্রতিনিধি হিসাবে আমার দায়িত্ব আছে যেহেতু জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, জনস্বার্থে আমরা ওসির অবৈধ কার্যকলাপ এসপি মহোদয়কে অবগত করব। সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করে ড্যাগ আটকের কথা শিকার করেছেন, এ সময় তিনি আরো বলেন, হান্নুর কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তা আমার জানা নেই। তার উপর হামলার সময়ও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে কত জন কত কিছু কয়। অথচ এ বিষয় আমি কিছু জানিই না। আর হামলায় তার মৃত্যু হলে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত না করে লাশ হস্তান্তর করত না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন