বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

শীতে কাবু জনজীবন শৈতপ্রবাহ-কুয়াশার দাপট

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন : পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর আজ থেকে শুরু মাঘের শীতে জীবনযাত্রা কাবু হয়ে পড়বে- এমন আশঙ্কাই করছেন কুমিল্লাবাসী। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়া আকাশে সুর্যের দেখা মিলছে সকাল ১০টা-১১টার পর। পৌষের শেষ সপ্তাহ জুড়ে শৈতপ্রবাহের কারণে ঠান্ডার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। শীতের কুয়াশামোড়া প্রতিদিনের সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে আগুনের কুন্ডু জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা চলছে কুমিল্লার গ্রাম-গঞ্জ এমনকি শহরের মানুষজনও। অন্যদিকে শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুন কষ্টে রাত-দিন কাটছে ছিন্নমূল ও বস্তিবাসীদের।
কুমিল্লাতে শীত এতোটাই জেঁকে বসেছে যে- ভোরবেলা ও সন্ধ্যা নামলেই নগরীর রাস্তা-ঘাট আর গ্রামাঞ্চলের পথে-প্রান্তরে আগুনের কুন্ডুলী জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করেন হতদরিদ্র, ছিন্নমুল, রিকশাচালক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র পেশা ও বস্তির লোকজন। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশায় ভোরের সূর্যের দেখা মেলে সকাল ১১টার পর। সড়ক মহাসড়কে কুয়াশা মোড়া দিনে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পৌষের শেষ সপ্তাহ ঘিরে শৈতপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে সকাল ১১টার পর মার্কেট, দোকানপাট খোলা হচ্ছে। আবার শীতের প্রকোপে আর ঘন কুয়াশায় রাত আটটার মধ্যেই বেচাবিক্রি গুটিয়ে দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়িরা বাড়ি ফিরছেন। আজ থেকে শুরু হয়েছে মাঘ মাস। মাঘের শীত বাঘের গায়েও লাগে- এমন প্রবাদ এবারের মৌসুমে বাস্তবতা এনে দিবে। পৌষের শেষ সপ্তাহ জুড়ে কুমিল্লায় তাপমাত্রা কমার ঘটনা গত দুই যুগেও ঘটেনি। এখনো তাপমাত্রা আটের ঘরে রয়েছে। মাঘ মাসের অর্ধেক সময় পর্যন্ত শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা গেছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, এবারে মাঘ মাসের অর্ধেক জুড়ে শীতের বেশ দাপট থাকবে। কুমিল্লার বিভিন্ন পেশার লোকজন বলছেন পৌষের শীতে যেভাবে মানুষ নাস্তানাবুদ হয়েছে, মাঘের শীত মানুষজনকে পুরোদমে কাবু করে ছাড়বে। এদিকে শীতের তীব্রতায় ও ঘন কুয়াশায় কুমিল্লার কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা চান্দিনা, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার, বুড়িচং, সদরের পাঁচথুবিসহ অন্যান্য এলাকায় কৃষকরা আলু ও বোরোর বীজতলা নিয়ে হিমশিম পোহাচ্ছেন। কুয়াশা আর প্রচন্ড ঠান্ডায় নগরীতে ভাড়ায় খাটা দিনমজুরের সংখ্যাও কমে গেছে। স্কুলগুলোতে প্রভাতী শাখায় ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি কম হচ্ছে। হাসপাতালে শিশু রোগী ভর্তির পাশাপাশি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তন ও শীতে ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ায় শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডাইরিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রিকশাচালক, যানবাহনের চালক, মটর সাইকেল চালকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মাফলার ও কান বন্ধনী টুপি বিক্রির দোকানগুলোতে। শীতের তিব্রতা ঘিরেনগরীর মার্কেট ও ফুটপাতে গরম কাপড়ের বেচাবিক্রি জমে ওঠেছে।
কুমিল্লা রেলষ্টেশনে দেখা গেছে অনেকেই ছেড়া কাঁথা মুড়িয়ে প্রচন্ড শীতে থর থর করে কাঁপছে। নগরীর শাসনগাছা বস্তি এলাকায়, বাগিচাগাঁও, ধর্মপুর, মোগলটুলি, গর্জনখোলা, চকবাজার, তেলিকোনা, সংরাইশ, টিক্কাচর বস্তি, সুজানগর চকবাজার বাসটার্মিনাল এলাকায়, আশ্রাফপুর বাস টার্মিনাল এলাকায়, শুভপুর, সদরের গোমতী নদীর উত্তরপাড়ের পাঁচথুবি ও আমড়াতলীর বিভিন্ন এলাকায় এবং চান্দিনা, মাধাইয়া, দেবিদ্বার, নিমসার, কংশনগর, কোম্পানীগঞ্জ, লাকসাম উপজেলাগুলোর হাট বাজারেও সন্ধ্যার পর অসহায় গরীব দুখী ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো ও কাগজ কুড়িয়ে এনে তা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। হাড় কাঁপানো শীতে সকালে কাজে বের হওয়া নি¤œআয়ের লোকজনও রাস্তার পাশে আগুন জালিয়ে শরীরে তাপ নিয়ে শীত নিবারনের কাজটা সাময়িক সেরে নিচ্ছে। শীতের হিমেল বাতাসের কারণে কুমিল্লা নগরীসহ আশপাশের উপজেলা সদরে মানুষের কোলাহল কমে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া লোকজন মনে হচ্ছে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। আজ থেকে শুরু হওয়া মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়বে কুমিল্লার মানুষের জীবনযাত্রা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন