পাহাড় কাটার ফলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে আর ছাড় দেয়া হবে না। পাহাড় কর্তনকারী মূল হোতা যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর লেলিঙ্গা টিলা-পাহাড় কাটার সময় সম্প্রতি মাটিচাপায় শিশুসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান এ কথাগুলো বলেন।
পাহাড় কাটার সাথে জড়িত মো. বাঁচা (২৫) নামের এ যুবককে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় আটক করে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ ভ‚ঁইয়া, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যার মোহাম্মদ আলী শাহ্, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন, রাঙ্গুনিয়া সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) পূর্বিতা চাকমা, রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভ‚ঁইয়া, ইছামতি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হামিদ প্রমুখ। এরপর চট্টগ্রাম পরিচালক মোখলেছুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেনসহ আরেকটি টিম পাহাড় কাটা এলাকা পরিদর্শন করেন।
ইছামতি রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, পাহাড় কাটার মাটিচাপায় মর্মান্তিক মৃত্যুতে মো. দুদু মিয়া (২৫), মো. মোরশেদ (৩০), মো. রফু (২৫), মো. জাহাঙ্গীর (২৫), মো. আজাদ (২৫), মো. বাঁচাকে (২৬) আসামি করে মামলা করেছে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ।
পাহাড় কাটার সাথে জড়িত মূল হোতাদের অনেকের নাম মামলার এজাহারে অর্ন্তভুক্ত হয়নি বলে দক্ষিণ রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান আহম্মদ সৈয়দ তালুকদার অভিযোগ করে জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২০১৭ সালে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। এ অঞ্চলে ২০১৭ সালে প্রথম পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে ১৩ জুন। এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। সর্বশেষ ঘটনায় ৩০ ডিসেম্বর শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু জায়গায় পাহাড় কাটা চলছে। একাধিক সূত্রে জানা যায়, শাসকদলের নাম ভাঙিয়ে পাহাড়দস্যুদের একটি সিন্ডিকেট পাহাড় কেটে এসব মাটি দিয়ে ভিটেবাড়ি ভরাট করার জন্য, কখনো ডোবা ভরাট করে বাড়ি তৈরির জায়গা সমতল করা। যাদের ডোবা, জায়গা-জমি, জলাশয়সহ বিভিন্ন স্থানে যেসব জায়গা ভরাট করা হয় জায়গার মালিকগণ পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্ত নেই। এইসব অপরাধ মুলক কাজে সংযুক্ত স্থানীয় রাজনীতি পরিচয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। তাদের কাছ থেকে জমি, ভিটা ও ডোবার মালিকগণ মাটি কিনে নেন। ইট পোড়ানো কাজে দেদার পাহাড় নিধন করে মাটি সরবরাহ হচ্ছে। জনৈক একজন স্থানীয় জন প্রতিনিধি বলেন, যেসব সংরক্ষিত সরকারি পাহাড় নিধন করা হচ্ছে, মনে হয় এসব পাহাড় যেন তাদের বাবার কিনা সম্পত্তির মতো মাটি কাটা কাজে অব্যাহত আছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ রাজা নগর, রাজা নগর, লালা নগর, পারুয়া, হোছেনাবাদ, ইসলামপুর, চন্দ্রঘোনা, কোদালা, বেতাগী, পোমরা, পেীরসভার ইছাখালী সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। এসব জায়গায় সরেজমিন গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি সাথে কথা বললে তারা জানান, পাহাড়খেকোদের ব্যাপারে প্রশাসনের মধ্যে বনবিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা কিংবা থানা প্রশাসন প্রত্যেকের মুখে কুলুপ আটা। কেউই যেন জানে না এসব পাহাড় কারা কাটছে। কোন কারনে বন বিভাগ নেহায়েত দায়ে পড়ে কোনো মামলা করলেও সেখানে পরিচিত কোনো ব্যক্তির নাম মোটেই আনে না। যাদের নাম আসে, তাদের নাম পুলিশ খুঁজে পায় না। আবার কিছু প্রকৃত আসামি তাদেরকে পুলিশ খুঁজতে গেলে স্থানীয়ভাবে তাদের থাকা সোর্স ও গ্রাম্যপুলিশগণ আগাম বার্তা পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, যেন তারা পালিয়ে যায়। এসব ব্যক্তিদের দিয়ে যেসব অপরাধমূলক কাজে নিয়োজিত রেখেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ শাসক দলের নেতৃবৃন্দ। এসব কারণে স্থানীয় সাধারণ জনগণ মিথ্যা মামলার ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। আর তাদের বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ না থাকাতে কারো যেন করার নেই। এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে শাস্তি দিয়ে চলেছি। তিনি আরো বলেন, এসব অপরাধমূলক কাজে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী ও একইদিনে পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক চট্টগ্রাম মোখলেছুর রহমান মহোদয় রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় কাটার পরিদর্শনে এলে তারা নির্দেশ প্রধান করেছেন পাহাড় কাটার ব্যাপারে যে কোনো ব্যক্তি হোক তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রধান করার জন্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন