দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের হারাতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ দলীয় সাধারণ নেতাকর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নৌকা প্রতীকের বিজয় নিয়ে তারা চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের মনোনীত করে তাদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়া হয়। এরা হচ্ছেন চিলমারী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। অথচ তাকে পরাজিত করার জন্য দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শেলি দেওয়ান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। আর তাকে সমর্থন দিচ্ছেন দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ ও তার কর্মী-সমর্থকরা। তবে ফিলিপনগর ইউনিয়নে অর্থের বিনিময়ে জনবিচ্ছিন্ন ও দলীয় পরিচয়হীন একেএম ফজলুল হক ওরফে ফজু কবিরাজ নামে এক ব্যক্তিকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকার সাধারণ নেতাকর্মীরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে এবং নৌকা প্রতীক প্রার্থী ফজু কবিরাজকে হরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন শামসুল আলম নামে আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থী। আর তাকে পরোক্ষভাবে ইন্ধন যোগাচ্ছেন সংসদ সদস্যের লোকজন। মরিচা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রদিদ্বন্দ্বিতা করছেন শাহ আলমগীর। আর তাকে হারানোর জন্য দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ তার মনোনিত প্রার্থী জোয়াদুর রহমান জজকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাড় করিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিয়েছেন। পিয়ারপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন আবু ইউসুফ লালু। আর তাকে পরাজিত করার জন্য নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম। রিফায়েতপুর ইউনিয়নে জামিরুল ইসলাম বাবু’র হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হলেও তাকে পরাজিত করার জন্য দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আফাজ উদ্দিন আহমেদ তার মনোনিত আব্দুর রশীদ বাবলুকে নির্বাচনে নামিয়েছেন। আড়িয়া ইউনিয়নে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আত্মীয় হওয়ার সুবাদে রাজাকার শাহ আজিজের একান্ত সচিব প্রয়াত আব্দুস সাত্তারের ভাই বিএনপি পরিবারের সন্তান সাইদ আনছারী বিপ্লবকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলে এলাকার আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারন ভোটাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা তারিক আল মামুনকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনের মাঠে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বোয়ালিয়া ইউনিয়নে মহিউদ্দিন বিশ্বাস মহি নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও তাকে হারাতে আবু আফফানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল হোসেনকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও তাকে যে কোন মূল্যে হারানোর জন্য দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদের আশীর্বাদপুষ্ট গোলাম জাকারিয়া ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। আর তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে প্রতারণা করে ইন্স্যুরেন্সের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা উড়াচ্ছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। মথুরাপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের নির্যাতিত প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সরদার হাসিমুদ্দিন হাসু নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হলেও তাকে হারানোর জন্য দেওয়ান হাফিজুর রহমানকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। দৌলতপুর সদর ইউনিয়নে মহিউল ইসলাম মহি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করলেও তাকে হরাতে মাঠে রয়েছে সাবেক সাংসদ আফাজ উদ্দিন আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলা মামলার প্রধান আসামী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। প্রাগপুর ইউনিয়নে আশরাফুজ্জামান মুকুল মাষ্টার নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করলেও তার মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে সিরাজ মন্ডল নৌকার প্রার্থী হলেও সেখানে সীমান্ত এলাকার কুখ্যাত মাদক ও হুন্ডি ব্যবসায়ী বিএনপির ডোনার মনিরুল ইসলাম কালো টাকা ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সিরাজ মন্ডল। তবে রামকৃষ্ণপুর, হোগলবাড়িয়া ও খলিশাকুন্ডি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় ওইসব ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরী তার সোনাইকুন্ডিস্থ বাসভবন চত্বরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ডেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ ও নির্দেশ প্রদান করলেও বিদ্রোহী প্রার্থীরা অজানা ইশারায় নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীক পাওয়া চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ আহমেদ জানান, দল তাকে নৌকা প্রতীক হাতে তুলে দিয়েছেন। অথচ দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করেন আফাজ উদ্দিন আহমেদ তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে শেলি দেওয়ানকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তবে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। রিফায়েতপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক প্রার্থী জামিরুল ইসলাম বাবুও একই মন্তব্য করে বলেন, নৌকার বিজয় ঠেকাতে আফাজ উদ্দিন আহমেদ আব্দুর রশীদ বাবলুকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করলেও সাধারন ভোটার ও নেতা-কর্মীরা তাকে প্রত্যাখান করেছে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে আগামী ৩১ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও দলের প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন