রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

প্রকৃতির দান রাঙামাটির পর্যটন শিল্পে নেই উন্নয়নের ছোঁয়া

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাঙ্গামাটি থেকে সৈয়দ মাহাবুব আহামদ : শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের আগমন বাড়লেও স্থানীয় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ১৯৮৫ সালে নির্মিত রাঙ্গামাটির সিম্বল খ্যাত ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে ঝুলন্ত সেতুটি দিয়ে কোনোরকমে চলছে জেলার পর্যটন ব্যবস্থাপনা। ঝুলন্ত সেতুটি বছরের অর্ধেক সময় কাপ্তাই হ্রদে তলিয়ে থাকে। সেতুটি ডুবে থাকার কারণে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। যে রাজস্ব আয় হয়, তা থেকে সেতুটি সংস্কার করতে হয়। এ নিয়ে জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ও পর্যটকদের অভিমত, কাপ্তাই হ্রদে না ডুবার জন্য সেতুটিকে সংস্কার করে আরো উঁচু করা দরকার।
পর্যটকদের থাকার জন্য ২০০৫ সালের পর থেকে জেলায় কিছু হোটেল-মোটেল বেসরকারি মালিকানায় গড়ে ওঠে। এসব হোটেল-মোটেল গড়ে উঠলেও বিশেষ কোনো রিসোর্ট না থাকায় পর্যটকেরা হতাশা ব্যক্ত করেন। পর্যটকদের দীর্ঘ দিনের দাবি, পাহাড়-হ্রদের মিতালী শহরে নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য রিসোর্ট গড়ে তোলা।
এ জেলার আরেকটি সমস্যা, ভালো মানের রেস্তোরাঁ নেই। এ অঞ্চলের বিশেষ খাবার কিংবা পিঠাপুলির দোকান খুঁজতে খুঁজতে পর্যটকেরা হতাশা ব্যক্ত করেন। যেসব খাবার হোটেল রয়েছে, তা গতানুগতিক।
কাপ্তাই হ্রদে ঘুরার জন্য ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন ইঞ্জিনচালিত বোট থাকলেও অত্যাধুনিক কোনো ওয়াটার বাইক না থাকায় এ সুন্দর মনোরম পরিবেশে অনেক পর্যটক মন খারাপ করেন। এ ছাড়া খালি পাহাড়গুলোতে ক্যাবল কারের দাবি পর্যটকদের দীর্ঘদিনের। পর্যটকদের অভিমত, উপরওয়ালা এ অঞ্চলকে স্বর্গ হিসেবে দান করেছেন। শুধু ম্যানেজমেন্ট করতে জানলে এ জেলা গড়ে উঠবে বাংলাদেশের সর্বশেষ্ঠ পর্যটন শিল্প।
কিন্তু দুর্ভাগ্য এ অঞ্চলকে ছাড়ে না। বিভিন্ন আঞ্চলিক সশস্ত্র দলের কোন্দল, এলাকা দখল করে প্রভাব বিস্তার, খুন, গুম, হত্যা, চাঁদাবাজির কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলে বিনোয়াগ করতে ভয় পাচ্ছেন। সরকার তাদের যদি পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে পর্যটক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এ জেলায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিনিয়োগ করবেন বলে জানান। জেলা শহরের পর্যটকদের চলাচলে বিশেষ কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। শহরে চলতে হলে অটোরিকশা (সিএনজি) একমাত্র ব্যবস্থা। পর্যটকদের সাথে এসব সিএনজি চালকেদের রূঢ় আচরণ এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অনেক পর্যটক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ জেলা শহরে বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী আসাদ জানান, সময় পেলে রাঙ্গামাটিতে ছুটে আসি। এ পর্যটক বলেন, এখানে পর্যটকদের জন্য স্থানীয় সমৃদ্ধ খাবার হোটেল, প্রাকৃতিক পরিবেশে রিসোর্ট এবং শহরে যদি সিএনজির বিকল্প হিসেবে গাড়ি নামানো যায়, তাহলে এ জেলায় যেমন পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী জানান, সময় পেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরার জন্য চলে আসি রাঙ্গামাটিতে। এ ব্যবসায়ী বলেন, হ্রদ এবং পাহাড়কে পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজানো গেলে এ জেলা পর্যটন খাতে অভ‚তপূর্ব উন্নতি করবে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করার সাথে সাথে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে। আশাকরি ভ‚মিধসের পর পর্যটন করপোরেশন যে পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। সেতু সংস্কারে এ ব্যস্থাপক জানান, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছি।
রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দীন সেলিম জানান, পর্যটকরা রাঙ্গামাটিতে এলে প্রথমে প্রাকৃতিক পরিবেশে রাত্রীযাপনের জন্য রিসোর্ট খোঁজেন। এ জেলায় পর্যটকদের জন্য রিসোর্টের চাহিদা থাকলেও সরকারের যথাযথ সহযোগিতা, জায়গা সঙ্কুলান এবং ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে রিসোর্ট গড়ে তোলা যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলেও তিনি হতাশ প্রকাশ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন