ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগের কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে নৌকার দুর্গ বলে পরিচিত দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে হানা দিতে চায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ মনজুরুল ইসলাম মনজু। এ লক্ষে পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন তিনি। বিগত ২০০১ সালে আ.লীগের কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরীকে পরাজিত করে চারদলীয় জোটের পক্ষে বিজয়ী হয়েছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রিয় নেতা অধ্যাপক আবদুল্লা-হেল-কাফী।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ তাদের আসন ধরে রাখতে বর্তমান সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ জাকারিয়া জাকা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. আবু হুসাইন বিপু বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার মধ্য দিয়ে নিজের গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি জামায়াতের পক্ষে জেলা কর্মপরিষদের সদস্য ও বীরগঞ্জ পৌরমেয়র মাওলানা মো. হানিফ এবং জাতীয় পার্টির পক্ষে জেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিনুর ইসলাম গণসংযোগ শুরু করেছেন।
জাতীয় সংসদের-৬, দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নৌকার ঘাঁটি হিসেবে সুপরিচিত। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মো. আনিসুল হক রিজু ও এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় কোন্দলে জামায়াত নেতা আবদুল্লা-হেল-কাফী জয়লাভ করেন। তা ছাড়া এ আসনটি বেশির ভাগ সময় আ.লীগের দখলে ছিল। বর্তমানে এমপি এবং আ.লীগের দলীয় কোন্দলে আবারো আ.লীগের হাতছাড়া হতে পারে এ আসনটি ধারণা নেতাকর্মী এবং এলাকার সাধারণ মানুষের।
এই আসনে ৬১৯ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৩৮টি গ্রামের ৩৪০টি মৌজার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার এক লাখ ৮১ হাজার ৪৬ জন পুরুষ ও এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৩৮ জন মহিলাসহ মোট তিন লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৪ জন ভোটার রয়েছেন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আ.লীগের জেলা সহ-সভাপতি মনোরঞ্জন শীল গোপাল দলীয় প্রার্থী হবেন। এ লক্ষে তিনি এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ-হেল-কাফী জয়লাভ করেন। পরে তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন মনোরঞ্জন শীল গোপাল। এরপর আ.লীগে যোগদান করে ২০০৮ সালে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তার ব্যক্তিগত ইমেজ এবং উন্নয়নের কারণে এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে।
এ দিকে রাজনীতিতে নজীর স্থাপন করেছেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ জাকারিয়া জাকা। দল ক্ষমতায় থাকলে নিজের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে স্বোচ্ছার থাকে প্রায় সব নেতাকর্মী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। তিনি নিজের জন্য নয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত স্বোচ্ছার ছিলেন। দলে কোন্দল থাকলেও সব সময় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। ছাত্রলীগ থেকে আ.লীগের সভাপতি এ পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তার শক্ররাও এমনটি বলবেন জানিয়েছেন এলাকাবাসী। দলের দুর্দিনের বন্ধু, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, সৎ ব্যক্তি হিসেবে সর্বত্রই তার সুনাম রয়েছে। দেশে বন্যা শুরু হয়েছে জানতে পেরে ভারতে চিকিৎসা সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে এসে ব্যক্তিগত অর্থায়নে বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। দলীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি নিজেকে আ.লীগের একজন নির্ভীক কর্মী হিসেবে পরিচিত করেছেন।
সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু হুসেইন বিপু। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি সব সময় এলাকার মানুষের পাশে থাকার কারণে এলাকায় সুপরিচিত মুখ। জাতীয়সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে গ্রামগঞ্জের ভোটাদের ও তরুণদের কাছে বেশ আস্থাভাজন। বন্যায় প্রথম দিনেই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এলাকায় ছুটে এসে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িছেন তিনি। ছাত্রলীগের বিশাল কর্মীবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বানভাসি মানুষের মাঝে গভীর রাত পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। সে সময় তার ত্রাণবাহী বহর বানভাসিদের শঙ্কিত বানভাসিদের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস যুগিয়েছিলেন। পাশাপাশি তার পরিচিত দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে এই এলাকায় ত্রাণ বিতরণে আহ্বান জানিয়েছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ছুটে এসেছিল বন্যার্তদের পাশে। দলীয় এবং সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে আ.লীগের একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এ আসনে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহিনুর ইসলাম। জাতীয় যুবসংহতির উপজেলা সভাপতির দায়ীত্ব পালনকালে ২০০৪ সালে জাপার ক্রান্তিকালে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অদ্যাবধি জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করার কাজ করে যাচ্ছেন। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জাপার দলীয় প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতির কারণে নির্বাচন করতে পারেননি। আগামী ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে তারই নাম মাঠে-ময়দানে।
বিশিষ্ট শিল্পপতি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মনজুর ইসলাম মনজু আ.লীগের জন্য বড় ফ্যাক্টর। বীরগঞ্জ-কাহারোলে তার শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের জনসমর্থন নিয়ে তিনি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। মানুষকে সহযোগিতার ব্যাপারে তিনি সবসময় অগ্রণী ভ‚মিকাও পালন করে থাকেন। বিশেষ করে এবারের বন্যায় তিনি এককভাবে নিজ অর্থায়নে হাজার হাজার দুর্গত মানুষকে সাহায্য করে আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। কেউ তার কাছে সহযোগিতা চাইলে তিনি খালি হাতে ফেরান না তার এমন সুনামও রয়েছে এলাকায়। শীতে হাজার হাজার কম্বল বিতরণ করেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষকে পাকা-বাড়ি করে দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন তিনি।
২০০১ সালে চারদলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামায়াতের কেন্দ্রিয় নেতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ-হেল-কাফী জয়লাভ করেন। এমপি থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ইমেজ সঙ্কটে পড়ে জামায়াত। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে হেরে যায় জামায়াত। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের পক্ষে জামায়াত নেতা মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তিনিও বিপুল ভোটে হেরে যান। বর্তমানে দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। তবে জামায়াত যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে আবারো মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ প্রার্থী হবে বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র অথবা জোটের প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে ভোট করতে পারেন।
এ আসনে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহিনুর ইসলাম। এর আগে তিনি জাতীয় যুব-সংহতির উপজেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন কারেন। বর্তমানে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন