রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মীরসরাইয়ে পশুপালনে স্বনির্ভর

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে আমিনুল হক | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গরু-ছাগলের খামার করে স্বাবলম্বী মীরসরাইয়ের যুবক আসাদুজ্জামান। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বনির্ভর এখন আসাদ। দিনে দিনে শুধু পরিবার নয়, সমাজের অনন্য হয়ে দাঁড়িয়েছেন ওই যুবক। 

মীরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের স্বনির্ভরতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত মো. আসাদুজ্জামান (২৬)। চার বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন বাবা মুক্তিযোদ্ধা কবির হোসেন। তখন কলেজে পড়ছিলেন আসাদ। বাবার মৃত্যুর পর মা, ভাইবোন নিয়ে সংসারের হাল ধরতে পৈতৃক পুকুর পাড়ের জমি ভরাট করে একটি শেড নির্মাণ করেন। ১০টি ছাগল আর কয়েকটি গরু নিয়ে শুরু হয় একটি গবাদিপশুর খামার। সর্বসাকুল্যে দুই লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করা সেই খামারে এখন ১২ লক্ষাধিক টাকার গরু ও ছাগল রয়েছে। যাবতীয় ব্যয় সঙ্কুুলান করে ধীরে ধীরে খামারের শেড বৃদ্ধি, খাবার শেড, প্রহরী শেড, ব্যবস্থাপনা ও কবুতর এবং টার্কি মুরগি পালনেরও উদ্যোগ নিচ্ছেন। পাশাপাশি খামারের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে চারদিকে নিরাপত্তা প্রাচীরও গড়ে তুলেছেন। ধীরে ধীরে খামারের আয় থেকেই সব উন্নয়নের উদ্যোগ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে এলাকায় বড় কোনো উৎসব বা বিয়ে পার্টি হলে ছাগল সরবরাহ করছেন আসাদ। পরিবারের ছোট ভাইবোনের পড়ালেখাসহ সংসারের দুর্দিন কাটিয়ে সবার মুখে হাসি ফুটাতে আসাদের সংগ্রামী জীবন যেন আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি ওই যুবকের গল্প শুনে এই প্রতিবেদক সেখানে গিয়ে কথা বলেন আসাদের সাথে। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভরদ্দাজহাট বাজার থেকে আধা কিলোমিটার উত্তর পাশের উত্তর দুর্গাপুরে নিজ বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন এই খামার। আসাদ কেন এই খামার গড়ে তুললেন, এর লক্ষ্যই কী, জানতে চাইলে আসাদ বলেনÑ বাবার মৃত্যুর পর কিছুটা ভেঙে পড়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা বাবা বলতেন, কখনো কারো কাছে হাত পাতবে না। সবসময় নিজে কিছু করার চেষ্টা করবে। ঠিক সেই সময় পাশ্ববর্তী এলাকায় জনৈক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বারবার বিদেশ যেতে ব্যর্থ হওয়ার পর একটি গরুর খামার করে এখন সফল। আর তাই আমি ও তার মতো একজন শিক্ষিত লোক চাকরিও পেলেন না, বিদেশও না গিয়ে এভাবে খামার করছেন দেখে আমিও বেকারত্ব লাঘব করতে এবং পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে এই গরু-ছাগল পালন শুরু করি। এই খামারের বিষয়ে সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে আসাদ বলেন, পশুসম্পদ বিভাগ থেকে খোঁজখবর নেয়া হয়। এ ছাড়া কোনো সহযোগিতা চাইলে তারা সেবা দেন। তবে তিনি বলেন, সম্প্রতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে বিদ্যুৎ সংযোগ চাইতে গিয়ে ৭০ হাজার টাকার চাহিদাপত্র আমাকে আহত করে। আমার মতো যুবক এখনো প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় বিনিয়োগও করছি ধীরে ধীরে। সে ক্ষেত্রে আমাদের মতো বেকারদের কাছে খামারকে বাণিজ্যিক কোটায় ফেলার চেষ্টা অনেকটা নিরুৎসাহিত করার মতো। তিনি এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে গ্রামীণ সুবিধার দৃষ্টিতে দেখার আবেদন জানান।
মীরসরাই উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি পোদ্দার বলেন, এমন খামারি উদ্যোক্তাদের আমাদের বিভাগ সবসময়ই সচেতন। ওই খামারির সব প্রকার সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন