রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের উত্তাল ইছামতি নদী ক্রমেই মরাখালে পরিণত হতে চলেছে। এ নদীতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করেছে অসংখ্য পালতোলা নৌকা। নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে অনেক জনপদ ও হাট-বাজারও গড়ে উঠেছিল এ ইছামতিকে কেন্দ্র করে। গড়ে ওঠা এসব জনপদসহ আশপাশের অসংখ্য মানুষ নদী কেন্দ্রীক ওইসব হাট-বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। সে সময় নদীটি ছিল ভরা যৌবনা। এ নদীর অথৈ পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের শত শত হেক্টর জমিতে ধান, গম, পাট ও আখসহ নানান তরিতরকারির ফসল ফলাতেন। প্রকৃতির অফুরন্ত রিজার্ভ পানিতে নানা ফল-ফসলে ভরে উঠেছিল মাইলের পর মাইল জুড়ে অবস্থিত ইছামতি নদীর দু’ধার। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছেরও অফুরন্ত উৎস ছিল এই ইছামতি। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর। জীবিকার জন্য জেলেরা রাত-দিন সমানে ডিঙ্গী-ছোট নৌকায় জাল-দড়ি নিয়ে নদীতে চষে বেড়াতেন। প্রচুর মাছ ধরা পড়তো জেলেদের জালে। সেই মাছ বিক্রি করেই জেলেরা সংসার চালাতেন। এসব এখন কালের স্বাক্ষী। সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা ইছামতি ক্রমেই মরাখালে পরিণত হতে চলায় নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ওইসব হাট-বাজার এখন হয়েছে বিরাণ অঞ্চল, কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধু-ধু প্রান্তরে, জেলে পাড়াগুলোও এলাকা থেকে হয়ে গেছে বিলীন। এক কথায়, থমকে গেছে নদী আর নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনাময় কর্মকাগু। ভৌগলিকভাবে এ নদীর প্রবাহমান এলাকাগুলো ছিল চমৎকার। চমৎকার অবস্থানের কারণেই নানা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল এ নদীকে ঘিরে। এসব সম্ভাবনা একদিনে নিভে যায়নি। সম্ভাবনাগুলো আস্তে আস্তে নিভে গেলেও কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এক সময়ের খরস্্েরাতা উত্তাল এ নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত মরাখালে পরিণত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যেতো ইছামতি। এ নদী কোনদিন খনন অথবা ড্রেজিং করা তো দূরে থাক, এর রক্ষণাবেক্ষণেরও কোন উদ্যোগে নেয়া হয়নি কোন সরকার আমলেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন