শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে তথ্য অভিযান ১ মার্চ রাতে -তারানা হালিম

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পিতা হিসেবে সন্তানের রুমে ঢুকতে পারছি না : সচিব
স্টাফ রিপোর্টার : মাদকের ভয়াল বিস্তার রোধে গণমাধ্যমের সঙ্গে সমন্বিতভাবে মাদকের বিরুদ্ধে তথ্য অভিযান শুরু করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আগামী ১ মার্চ রাত ৮টা ৫০ মিনিটে দেশের সব টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি বেতারে জীবনকে ভালোবাসুন, মাদক থেকে দূরে থাকুন, সেøাগানটি একযোগে প্রচারিত হবে।
গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মতবিনিময় সভা শেষে সভাপতির বক্তব্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ ঘোষণা দেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাদক শুধু মানুষের নিজের জীবন নয়, তার পারিবারিক জীবনকেও ধ্বংস করে দেয়, যা সমগ্র জাতির জন্য ক্ষতিকর। বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এমনকি কর্মক্ষেত্রগুলোকেও মাদকের প্রভাবমুক্ত রাখতে জনসচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সব সংস্থা, গণমাধ্যম ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করবে উল্লেখ করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ সময় সব জেলা তথ্য অফিসারদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে জেলার সর্বত্র মাদকবিরোধী তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, দেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। এর বিপরীতে সরকারি মাদকাসক্তি পুনর্বাসনকেন্দ্রে বেড রয়েছে ১১৫টি। সচিব বলেন, মাদকের ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কখন আমি, কখন আমার সন্তান, কখন আমার পরিবারÑ কে যুক্ত হয়ে যায় তা বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এ পর্যায়ে চলে গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সক্ষমতা অনেক কম। ফেনসিডিলের ব্যবসা কমে আসছে, কিন্তু ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে। ফরিদ উদ্দিন বলেন, দেখা যায় কক্সবাজারে ৩০-৫০ টাকায় পাওয়া যায় এক ধরনের জিনিস (ইয়াবা)। ঢাকায় এনে ৩০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে লাভজনক ব্যবসা আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, এটা বন্ধে পুলিশ চেষ্টা করছে না তা নয়। এর মধ্যে কিছু ভ‚ত নেই আমরা তাও বলব না। আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি, আমরা চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন মিডিয়ায় আসে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ, ৮০ লাখ, কেউ বলেন ৬০ লাখ। কিন্তু সঠিক তথ্য আমাদের কাছে থাকার কথা, কিন্তু আমাদের কাছে নেই। চেষ্টা করছি কীভাবে আনা যায়। মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বলেন, এ জন্য অপরাধের হারও বাড়ছে। এটাকে যদি চ্যালেঞ্জ হিসেবে না নেই তবে সরকার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। তিনি বলেন, মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ হলে একজনকে নিরাময় করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে। সাত মাস, ১০ মাসও লাগে। আমাদের সরকারি নিরাময় কেন্দ্রের অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। সরকারি পর্যায়ে ঢাকাতে ১০০ সিট, আর তিন বিভাগে ১৫ বেড, মানে সরকারি পর্যায়ে ১০৫টি বেড, যেখানে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত। আমরা বেসরকারি খাতকেও সম্পৃক্ত করেছি, ১৯৭টি হাসপাতালে দুই হাজার ৩০০ বেড আছে। সচিব বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সারা দেশে ৯২টি ইউনিট রয়েছে। অধিদফতরের ৫১টি গাড়ি, এর মধ্যে মোটরসাইকেলও আছে। মাদকদ্রব্যের ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত আমরা অনেকে তাদের চিনি বা ধারণা করতে পারি। তাদের গতির সঙ্গে আমাদের গতি কীভাবে মেলাবেন। আমরা সক্ষমতা বাড়ানোরও চেষ্টা করছি। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অন্যান্য এজেন্সিগুলোর সমন্বয় করা মোবাইল ট্র্যাকিং ও বিভিন্ন বিষয় আনার চেষ্টা করছি আমরা। সবাই মিলে একসঙ্গে মুভ না করলে এটা কোনোভাবেই কাভার করা যাবে না। ফরিদ উদ্দিন বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা সন্তানদের সঙ্গে অনেক জিনিস শেয়ার করছি না। পিতা হিসেবে সন্তানের রুমে ঢুকতে পারছি না। আমার বড় মেয়ের ঘরে অনেক সময় দেখি অসন্তুষ্ট হয়। এখন সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির একটা জায়গা হয়ে গেছে। সামাজিকভাবে এগোতে না পারলে আমরা সমস্যায় পড়ব। মাদকের ভয়াবহতার দিকগুলো মানুষের সামনে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা সভায় একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০১১ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ে ৩৭ হাজার ৩৯৫টি মামলা হয়েছিল। ২০১৭ সালে হয়েছে এক লাখ ছয় হাজার ৫৩৬টি মামলা হয়েছে। ২০১১ সালে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ১২৫টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে, ২০১৭ সালে উদ্ধার করা হয়েছে চার কোটি ৭৯ হাজার ৪৪৩টি।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনসহ তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন