বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হুমকি ও বাধার মুখে বিএনপি সংঘাতের আশঙ্কায় ভোটাররা আতঙ্কে

প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আব্দুল গনি, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) থেকে

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১১ ইউনিয়নে আগামী ৩১ মার্চ ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তে হলেও নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত অবধি তারা পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের দিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে এই নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বীর দর্পে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারলেও বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও থানা পুলিশের বিভিন্ন বাধার সম্মুুখীন হতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হায়াত আলী ভা-ারী ও তার সমর্থকদের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকবাল হোসেনের সমর্থকরা মারধর করে এবং গোলাগুলির ঘটনাও ঘটায়। এই ঘটনায় উল্টো বিএনপির প্রার্থী হায়াত আলী ভা-ারী ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা এখন তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না। কালিন্দী ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল হক লিটন এবার জেলখানা থেকে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানা থেকে বের হতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার ছোট ভাই নাজমুল হক লিপা বলেন তার ভাই সামসুল হক লিটন গত ইউপি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আমার ভাইয়ের বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। এবারো আমার ভাইয়ের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার ভাই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ। জেলখানা থেকে সামসুল হক লিটনের লেখা একটি লিফলেট সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সামসুল হক লিটন গত বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্ত হয়ে জেলখানা থেকে বের হয়েছেন। তিনি এখন স্বশরীরে তার নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক সাহস ও মনোবল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাস্তা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সামছুল হক এই মুহূর্তে দক্ষিণ থানা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে কোথায়ও গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না। তিনি বলেন গত বৃহস্পতিবার রাতে বাঘাপুরের পিছলাকান্দী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। এসময় মিছিলকারীরা কৌশলে হঠাৎ ধানের শীষের শ্লোগান দিয়ে বোমা ফাটিয়ে নাটক সাজিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, বাস্তা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ফিরোজ মিয়া, বিএনপি নেতা মো. আব্দুর রহিমসহ একাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশকর আলীর পক্ষ নিয়ে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। রাজাবাড়ি এলাকায় তার এক সমর্থক পোস্টার সাঁটাতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে বাস্তা ইউনিয়নে সাধারণ ভোটাররা চরম আতঙ্কে রয়েছে। তারানগর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন মিনু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন ফারক নিজের পোস্টার ব্যানার আগুনে পুড়ে আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারানগর ইউনিয়ন বিএনপির ঘাঁটি। আমি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমি নিশ্চিত বিজয় লাভ করবো। কলাতিয়া ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মো. দাউদ সিকদার বলেন, আমার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহের আলী ও তার লোকজন নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাহের আলীর লোকজন আমার নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করেছে। আমি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে চাই। কিন্তু এখন সেই পরিবেশ নেই। তাহের আলী এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে যে, সে এক ভোট পেলেই পাস। এই হুমকিতে আমার পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাই। কলাতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির ঘাঁটি। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমার বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারবে না ইন্শাল্লাহ। হযরতপুর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল হক হিরুর ছেলে নুরুল হক রিপন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কাসেম এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন আয়নালের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এই ইউনিয়নেও বিএনপির প্রার্থী ও তার সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বিএনপির প্রার্থী নুরুল হক রিপন বলেন, কয়েক দিন আগে কানার চরে নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার ও আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে ৫/৬ জনকে আহত করে। আওয়ামী লীগের লোকজন আমার সমর্থকদের কোথাও পোস্টার সাঁটাতে দিচ্ছে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত। জিনজিরা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়ারিশ উদ্দিন, বিএনপির প্রার্থী হাজী ওমর শাহনেওয়াজ এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাজী সাকুর হোসেন সাকুর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। ব্যতিক্রম ধর্মী এই ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জন জরিপে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র ও বিএনপি প্রার্থী ভাল অবস্থানে রয়েছে। আগানগর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী আরশাদ রহমান সপু ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ খুশীর মধ্যে লড়াই হবে। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে কয়েক দিন আগে আগানগর ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক হাজী আসাদ খান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের ভয়ে বিনপির প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা তেমন উৎসাহ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারছে না। উপজেলার বৃহত্তম ইউনিয়ন শুভাঢ্যায় বিএনপির প্রার্থী হায়াত আলী ভা-ারী গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পারগে-ারিয়ার নিজ বাসায় সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সে তা এড়িয়ে যান। রোহিতপুর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মালেকের সাথে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো. আব্দুল আলীর সাথে লড়াই হবে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে তেঘরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাজী জজ মিয়া ও কোন্ডা ইউনিয়নে সাইদুর রহমান ফারুক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শুভাঢ্যা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী হায়াত আলী ভা-ারী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সাক্তা ইউয়িন পরিষদের নির্বাচন সীমানা জটিলতার কারণে এই মুহূর্তে স্থগিত রয়েছে ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন