ডাকবাক্সে তালা আছে তো তলা নেই। তাই হয়তো কর্তৃপক্ষ বাক্সটি মেরামত কিংবা প্রতিস্থাপন করতে অনীহা করছে। যেহেতু চিঠিই নেই, তাই বাক্স লাগিয়ে আর কি হবে! এমন কথা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা ডাকঘর ব্যবহার করা স্থানীয়দের। ডাক বিভাগ বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল হলে অবশ্যই চিঠির আদান-প্রদানের প্রবণতা থাকত। চাকরি, বিয়ে, জমি রেজিস্ট্রিসহ সর্বক্ষেত্রে ডাকঘর লেখার ব্যবহার থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই এলাকায় ডাকঘর নেই বলে স্থানীয়রা ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন। লোকবল না থাকার কারণে সাদ্রা মাদরাসা ডাকঘরটি চালু করা যাচ্ছে না আর এ নিয়ে ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলাখাল ডাকঘরের পোস্টমাস্টার রবিউল আলম জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার হাজীগঞ্জের ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন দেশে আগাম ঈদ পালনের প্রবক্তা সাদ্রা দরবার শরিফের পীর পরিবার। এই পীর পরিবারের উদ্যোগে সাদ্রা মাদরাসা ফাজিল মাদরাসা ক্যাম্পাসে ডাকঘর চালু করেন বহু বছর আগে। ডাক বিভাগের করুণ পরিণতির সাথে সাদ্রা মাদরাসা ডাকঘরটি অনেকটা বিলুপ্ত হয়ে যায়। যার কারণে এখানে এখন আর ডাকঘরের কোন অফিস সেই, কার্যক্রম নেই এমনকি লোকবল নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় রামচন্দ্রপুর বাজার থেকে সমেশপুর গুদাড়াঘাটে যাওয়ার পথেই সাদ্রা হামিদিয়া ফজিল মাদরাসা। মাদরাসা ভবনের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া মাটির রাস্তার পাশে এবং মাদরাসা ভবনের বাইরের দেয়ালে সাদ্রা ডাকঘরের ডাকবাক্সটি ঝুলছে। সড়কের বাইরের দেয়ালে পেরেক দিয়ে আটকানো বাক্সটি মাটি থেকে প্রায় দু’হাত ওপরে যার মধ্যে একটি আটকানো তালা ঝুলছে। তালার দিকে তাকালেই অনায়াসে বোঝা যায়, এটি কোনোভাবেই ব্যবহার হয় না। মাথা ন্যুইয়ে বাক্সটির নিচে তাকালে দেখা যায় বাক্সটি তলা একেবারেই নেই। এখানে যে একটি ডাকঘর রয়েছে বাক্সটি ছাড়া যার কোনো কিছুর অস্তিত্ব বহন করছেন না।
স্থানীয়রা জানান, আমরা বায়োডাটা, ঠিকানা, জমি রেজিস্ট্রি, চাকরি, বিয়ের কার্ডসহ সর্বক্ষেত্রে ডাকঘর লিখি, কিন্তু বাস্তবে আমাদের ডাকঘর নেই। সর্বক্ষেত্রে আমরা মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছি। স্থানীয়রা আরো জানান, বিদ্যুৎ সড়কসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ আমাদের এলাকাটি অনেক উন্নত হয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের ডাকঘর নেই।
সাদ্রা হামীদিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আবু বক্কর ইনকিলাবকে জানান, পীর সাহেব হুজুর কষ্ট করে ডাকঘরটি এনেছেন, অথচ আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে ডাকঘরটি ব্যবহার হতে দেখেনি। ডাকঘরটি চালু হলে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে।
সাদ্রা ডাকঘরের অবস্থার বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা পোস্টমাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) বিলকিস বেগম সাথে যোগাযোগ তিনি বলেন, ওই ডাকঘরটি দেখাশোনার দায়িত্ব বলাখাল ডাকঘর পোস্টমাস্টারের।
বলাখাল বাজার পোস্টমাস্টার রবিউল আলম এ বিষয়ে ইনকিলাবকে জানান, সাদ্রা মাদরাসা ডাকঘরের যিনি পোস্টমাস্টার ছিলেন তিনি আরো আগেই মারা গেছেন। আড়াই হাজার টাকা বেতনে কেউ চাকরি করতে আজকাল কেউ আসতে চায় না। ইতোমধ্যে আমি একজনকে ঠিক করেছি ওখানে দেয়ার জন্য। আর ওই অফিসের জন্য আমি এর মধ্যে চাহিদাপত্র দিয়েছি।
হাজীগঞ্জ প্রধান ডাকঘর পরিদর্শক (শিক্ষানবীশ) কাঞ্চন সাহা জানান, আমি এখানে অল্প কয়েকদিনের জন্য এসেছি, তাই আসলে বিষয়টি আমার জানা নেই । তবে বাক্স নষ্ট থাকলে চাহিদাপত্র দিলে আমরা বাক্স পরিবর্তন করে দেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন