সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নেত্রকোনায় বাড়ছে বেকারত্ব নেই পর্যাপ্ত শিল্প-কারখানা

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ : স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নেত্রকোনা জেলায় অদ্যাবধি নেই শিল্প কল-কারখানা গড়ে তোলার কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ফলে বেকার লোকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নীল আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট-বড় অসংখ্য গারো পাহাড়, পাহাড়জুড়ে সবুজের সমারোহ, বনভ‚মি, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি, নদ-নদী খাল বিল ও হাওর বাঁওড় পরিবেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব প্রাকৃতিক লীলাভ‚মি নেত্রকোনা। নেত্রকোনা জেলা মূলত কৃষি উদ্ধৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রচুর ধান, পাট ও মৎস্য উৎপাদন হয়। জেলাবাসীর চাহিদা পূরণ করেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় উৎপাদিত পণ্য রফতানি করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে এ জেলায় রয়েছে দেশের একমাত্র হোয়াইট ক্লে (চিনা মাটির) খনি, সিলিকন বালি, কয়লা ও নুড়ি পাথর। নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্প, চিনা মাটি দিয়ে সিরামিক শিল্প, সিলিকন বালু দিয়ে কাঁচ শিল্পসহ এ সব প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে এখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কল-কারখানা গড়ে তোলার প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।
ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে। নেত্রকোনা জেলায় নতুন করে কোনো শিল্প কল-কারখানা গড়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকার সারা দেশে সুষম উন্নয়নের কথা বললেও চির অবহেলিত নেত্রকোনায় আজো কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছেÑ সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার ১১টি রাস্তার সবকটিই দীর্ঘদিন যাবৎ বেহাল দশা বিরাজ করলেও তা সংস্কারে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সুষ্ঠু বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাওরাঞ্চলে প্রচুর মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হলেও জেলায় অদ্যাবধি কোনো কোল্ডস্টোরেজ গড়ে না উঠায় প্রচুর মৎস্যসম্পদ শুধুমাত্র প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। জেলায় ভারী কোনো শিল্প কল-কারখানা গড়ে না ওঠায় বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কর্মসংস্থানের অভাব ও চাকরি না পাওয়ায় বেকার যুবক-যুবতীরা হতাশ হয়ে মাদকাসক্ত, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অসামাজিক অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। নেত্রকোনায় প্রতিনিয়ত উচ্চশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরি লাভের আশায় দিন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার চেষ্টা করলেও কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা তাতে সফল হতে পারছেন না। ফলে তাদের ঋণের বোঝা নিয়ে প্রতি নিয়ত হয়রানি হতে হচ্ছে।
সিপিবি নেত্রকোনা জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষিভিত্তিক কাঁচামালকে কাজে লাগিয়ে নেত্রকোনা জেলায় শিল্প কল-কারখানা গড়ে তোলার প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও শুধু উদ্যোক্তা ও দক্ষ জনবলের অভাবে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অকাল বন্যা, খড়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো বছর ফসলহানি ঘটলে তা এ অঞ্চলের কৃষকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ-দুর্দশায় পড়তে হয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, জেলায় শিল্প কল-কারখানা গড়ে তুলতে হলে সবার আগে সরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ, বিনিয়োগের পরিবেশ, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। তারপর শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই একদিকে যেমন অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে বেকার যুবক-যুবতীদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন