২৫ জানুয়ারি ভোলায় এক জনসভায় মহামান্য প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘দেশের চলমান উন্নয়নকে টেকসই ও মজবুত করতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ গণতন্ত্র জনগণের মৌলিক অধিকার। গণতন্ত্রকে অব্যাহত রাখা ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে সকলের একসাথে কাজ করতে হবে।’ কথাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক ও মূল্যবান। একটি বিষয় অষ্পষ্ট, দেশে গণতন্ত্র কি আদৌ আছে? দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতা ও বিনা ভোটে নির্বাচিত, যা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট। ৩০০ আসনের সংসদে ১৫৩ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় সরকার গঠনে কোন অসুবিধা ছিল না। বাকী ১৪৭ আসনেও নামকাওয়াস্তে ভোট হয়েছে। ৫-৭% ভোটার উপস্থিতি বাংলাদেশের নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছে। বহু কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। মানুষের বদলে কুকুর মাঠে শুয়ে অলস সময় কাটিয়েছে। মিডিয়ার কল্যাণে দেশের মানুষ ওসব দেখে হা-হুতাশ করেছে- হায়রে দেশ, হায়রে নির্বাচন, হায়রে গণতন্ত্র! মহামান্য প্রেসিডেন্ট সত্যিই বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য আবশ্যকীয় শর্ত হলো, প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ, বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মানুষের ভোটদানের নিশ্চয়তা। মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারে, ভয়ভীতি ও চাপের মধ্যে থাকে, ভোটের আগের রাতে ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করা হয়, পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে থাকতে না পারে, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি হয় ভোটকেন্দ্রে ভীতিকর পরিস্থিতি থাকে, প্রিসাইডিং ও পুলিং অফিসার নিজেরা যদি সিল মারে, প্রার্থীরা নির্ভয়ে ভোট চাইতে না পারে, সেক্ষেত্রে গণতন্ত্র খোঁড়া, নাঙ্গা ও বিকল হয়ে পড়ে। এরকম অবস্থায় প্রার্থী বা প্রতিদ্ব›দ্বী পাওয়া যায় না। ভোটারহীন প্রতিদ্ব›দ্বীতাহীন একতরফা একদলীয় নির্বাচন করতে হয়। এরূপ নির্বাচনী প্রহসন দেখা গেছে পরে উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন ও ইউপি নির্বাচনেও। দেশে ৪২টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে মাত্র মহাজোটভুক্ত ১২টি দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল সংসদ নির্বাচনে যা হবার হয়েছে অন্তত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে মানুষ স্বাধীনভাবে প্রার্থী হতে ও নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দু’ধাপে মোটামুটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হলেও পরবর্তী ধাপগুলোতে বিরোধীদল বিশেষত বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়। পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে ভোটের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ভোট ডাকাতি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, আগের রাতে ভোট সম্পন্ন, কোথাও কোথাও বেলা ১০টার মধ্যে ভোট পূর্ব শেষ, পুলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া প্রভৃতি কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে দেখা যায়। সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ, কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। ভোট ডাকাতির কথা বলে বহু প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা পর্যন্ত ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলে ও অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। বাংলাদেশের ভোটের সময় উৎসব শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উৎসবের বদলে মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত্র ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। দেশে এত রাজনৈতিক দল রয়েছে। অথচ এসব নির্বাচনে প্রার্থী পাওয়া যায়নি। অনেক ইউপিতে একক প্রার্থী থাকায় নির্বাচন করতে হয়নি। ক্ষমতাবানরা বিনাভোটে নির্বাচিত হয়ে বগল বাজাচ্ছে। বিরোধীদলের অল্প সংখ্যক মেয়র, চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও তারা কাজ করতে পারছে না। মামলায় জর্জরিত হয়ে অনেকে অফিস করতে পারছে না। জেলখানা, কোর্ট ও অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে করতে তাদের সময় পার হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার বদলে থমকে দাঁড়াচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বিএনপির মতো দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত না করে ছলে বলে কৌশলে বাইরে রাখা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের নামে বেনামী হাজার হাজার মামলা ও লক্ষ লক্ষ আসামী করা হচ্ছে। সরকারি দল সারাবছর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালালেও বিএনপির জন্য সভা-সমিতি, মিছিল, প্রতিবাদ সভা, মানব বন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রভৃতি গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, গ্রেফতার, রিমান্ড, জেল-জুলুম, গুম, খুন প্রভৃতি আতংক নিয়ে কোর্ট কাচারীতে দৌড়াদৌড়ি করছে। মামলা, হামলা, হুমকী, ধামকী ও ভয়ভীতি মোকাবেলা করে রাজনীতি করতে হচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকতে ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অনেক জায়গায় প্রার্থী দিতে পারে নাই। এভাবে কি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, না দাবী করা যায়?
স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও আমরা স্থায়ী নির্বাচনী ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারিনি। সরকারি দল সবসময় কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে। ’৯০ এ স্বৈরাচার পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে একটি সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করে দেশ বিদেশের প্রশংসা লাভ করেন। ’৯৬ সালে বিধিবদ্ধ তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতির সরকার দুটো নির্বাচন অনুষ্ঠান করে যাতে কোন বড় রকমের অভিযোগ ওঠেনি। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত সরকার যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে তাতে প্রশ্ন থাকলেও সেটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। পরপর চারটি নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকারি দল পরাজিত হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় সরকারি দল জয়লাভ করে। ২০১১ সালে ৫ মে বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে রায় দেন। পর্যবেক্ষণে দেশের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ২ টার্ম উক্ত ব্যবস্থায় নির্বাচনের কথা বলা হয়। সরকার সেদিকে না গিয়ে তড়িঘড়ি করে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা তুলে দিয়ে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে। সরকার তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থার নানারকম দোষত্রæটি উল্লেখ করে কিন্তু সেসব দোষ সংশোধন না করে ব্যবস্থাটি বাতিল করে জনদুর্ভোগ বাড়ায়ে দেয়। এ যেন মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলার সামিল। যা হবার তাই হলো। অনেক জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করে যে বিধানটি আওয়ামী লীগ সংবিধানে সংযুক্ত করতে বাধ্য করেছিল, সুযোগ পেয়ে তারা সেটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে ও জনদাবী ছাড়াই বাতিল করে। ফলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আগে পরে দেশে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। অনেক জীবন ও সম্পদ বিনষ্ট হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পালাক্রমে দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকার কথা কিন্তু তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ ২য় বার ক্ষমতায় থেকে যায়। বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে মেনে নিতে পারেনি। তারা এখনও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অটল রয়েছে। দেশে অশান্তি ও নৈরাজ্যকর অবস্থা ফিরে আসার আশাংকায় দেশের মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত্র ও উদ্বিগ্ন। দেশের মানুষ একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশা করছে। মানুষ আর রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত দেখতে চায় না। সরকার ও বিরোধীদল উভয়ের কাছে মানুষের আকুল আবেদন তারা একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে সকলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। সমঝোতা ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অগ্রসর হলে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য। মানুষ আর সংঘাত-সংঘর্ষ দেখতে চায় না। স্বাধীনতার বয়স কম হয়নি। সুবর্ণ জয়ন্তি আমাদের দরজায় করাঘাত করছে। নির্বাচন এলে মানুষ আতংকের মধ্যে থাকে। তারা শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে প্রতিনিধি নির্বাচনে আগ্রহী। রাজনীতিকদের জন্য তারা জীবন ও সম্পদ ধ্বংস দেখতে চায় না। তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতিতে নির্বাচনে একটি মানুষকে জীবন দিতে হয়নি বা কোন সম্পদও ধ্বংস হয়নি। অথচ ইউপি নির্বাচনে শতাধিক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির জীবন হানিতে অনেক পরিবারে অমানিশার অন্ধকার নেমে এসেছে। রাজনীতিকদের জন্য সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আর জীবন দিতে চায় না। তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতির দোষত্রæটি থাকতেই পারে। সেসব দোষ নিরসন করে ব্যবস্থাটিকে আরও সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করা যেতে পারে। মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কাটতে কেউ চায় না। মাথা ব্যাথার কারণ অনুসন্ধান করে কারণকে দূরীভূত করতে পারলে মাথা ব্যাথা সারতে বাধ্য। তেমনি তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থার ত্রæটিগুলো দূর করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
একাদশ জাতীয় সংসদ অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হোক এ প্রত্যাশা কেবল দেশের মানুষের নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও। বিভিন্ন দেশ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে বারবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দেয়া হয়েছে ও হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সংলাপের তাগিদ অব্যাহত ভাবে দেয়া হচ্ছে। দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি দল ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজনের পক্ষে। দেখা যাচ্ছে, সরকারি দল সংলাপের ঘোরতর বিরোধী। তারা সংবিধান নিজের মত করে সংশোধন করে এখন সংবিধানের বাইরে একপাও নড়তে চায় না। প্রশ্ন হলো সংবিধান কোন ধর্মগ্রন্থ নয় যে সংশোধন করা যাবে না। ইতোমধ্যে ষোলবার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। আর একবার সংশোধন করলে দেশ বাঁচবে। দোহাই দিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গেলে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য। উভয়ের মধ্যে সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক অঙ্গন অশান্ত হবে। বলা হয় বিরোধীদলের আন্দোলন করার ক্ষমতা নাই। আন্দোলন করে তারা দাবী আদায় করতে পারেনি, আগামীতেও পারবে না। রাজনৈতিক অঙ্গন তো শান্তই রয়েছে। দেশে একপক্ষীয় রাজনীতি চলছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ফাঁকা মাঠে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। নিজেদের মধ্যে প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করতে নানারকম কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, বিবাদ ও কোন্দলে জড়িয়ে অনেকে জীবন দিচ্ছে। বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, গ্রেফতার রিমান্ড জেল, জুলুম মোকাবেলা করে কোনরকমে টিকে আছে। এতে জনগণের সহানুভূতি ষোলআনা বিরোধীদলের দিকে যাচ্ছে। জনগণ সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, পক্ষপাতিত্ব, জুলুম, নির্যাতন প্রত্যক্ষ করে নিজেদের মৌলিক অধিকার হারিয়ে সরকারের উপর ক্ষুব্ধ ও বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র হারায়ে দেশ কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। অন্যায়-অবিচার দেখে জনগণ ফুঁসে উঠছে। এবার যদি আন্দোলন করতে হয় সেক্ষেত্রে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের সাথে জনগণ রাস্তায় নেমে এলে সামাল দেয়া সহজ হবে না। আবার দেশে সংঘাত, সংঘর্ষ, মারামারী, হানাহানি শুরু হবে যা কারও জন্যই শুভ ও সুখকর হবে না। সরকার উন্নয়নের কথা যতই বলুক গণতন্ত্র ছাড়া সে উন্নয়ন অর্থহীন। মানুষ উন্নয়ন যেমন চায়, সুশাসনও তেমনি প্রত্যাশা করে। নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে মানুষ উন্নয়ন চাইবে না। কারণ সেটি প্রকৃত টেকসই উন্নয়ন নয়। টেকসই উন্নয়নের আবশ্যকীয় শর্ত হলো, প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও বিশুদ্ধ গণতন্ত্র চর্চা। একপক্ষ আদালতে দৌড়ঝাঁপ করবে ও আর একপক্ষ রাজনীতি করবে, বিষয়টি অনৈতিক যেমন তেমনি দৃষ্টিকটুও বটে। মানুষ বিষয়টিকে খুব খারাপ চোখে দেখে।
মহামান্য প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত মূল্যবান কথা বলেছেন, টেকসই ও মজবুত করতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। তবে সে গণতন্ত্র একপক্ষীয়, একদলীয় ও একজোটের হলে চলবে না। দেশে আরও অনেক দল, পক্ষ ও জোট রয়েছে। তাদের সাথে দেশের সিংহভাগ মানুষ আছে। জনগণের মৌলিক অধিকার হলো স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মত প্রকাশ করা। আগেই বলেছি রাজনৈতিক দলগুলো, সুশীল সমাজ ও দেশের মানুষ গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটোকেই প্রাধান্য দেয়। উন্নয়ন আগে পরে গণতন্ত্র, এটি বিপদজনক। দুটোকে একসাথে সমান্তরালভাবে চলতে দিতে হবে। তার জন্য আবশ্যক হলো, একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক সুষ্ঠু সমাধান। অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ শুরু হওয়া আবশ্যক। রাজনীতিকরা একত্রে বসে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে পারেন। দেশে অনেক জ্ঞানী, গুণী রাজনীতিক আছেন তাছাড়া সুশীল সমাজও রয়েছে। সুশীল সমাজ মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে সমাধানের পথ দেখাতে পারবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। ৫ জানুয়ারির মতো একদলীয়, একপক্ষীয় নির্বাচন করে দেশের ও গণতন্ত্রের সর্বনাশ করবেন না। সরকারি দল স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে এমনকি ঢাকা ও চিটাগাং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পারেনি। দেশবাসী সাক্ষী ওসব নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে। তেঁতো জিনিসকে মিষ্টি বানায়ে নিয়ে তাকে তেঁতো করে খেতে বললে কেউ খাবে না। সকলে মিষ্টি জিনিসই চাইবে।
আমাদের কথা হলো ক্ষমতা কারো চিরস্থায়ী নয়। দমন-পীড়ন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যায় না। গণতন্ত্রে তো একেবারেই অসম্ভব। ইরানের রেজাশাহ পাহলভী, মিশরের হোসনি মোবারক, তিউনিশিয়ার বেন আলী, পাকিস্তানের আয়ূব খান প্রভৃতি স্বৈরশাসক-একনায়করা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারেননি। অনেকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রধানরা নন্দিত কিন্তু স্বৈরশাসকরা নিন্দিত ও ঘৃণিত হতে বাধ্য। কর্তৃত্ববাদী শাসককে বর্তমান বিশ্বে মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। শক্তিশালী বিরোধীদল গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। গণতন্ত্রকে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করতে সংলাপ আয়োজন জরুরি হয়ে পড়েছে।
লেখক: প্রফেসর, দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন