নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা ও উদসীনতার ফলে দামুড়হুদার দর্শনা শহর এখন দুর্গন্ধময় অস্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত হয়েছে। কেরু চিনিকলের বর্জ্যসহ নোংরা পানি, শহরের আবাসিক এলাকায় মুরগী খামার, অপরিষ্কার ড্রেন ও ডাস্টবিনের অভাবে খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে গোটা শহরই এখন ডাস্টবিনে পরিণত হয়ে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শহরে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও ভ্রুক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। সমস্যা সমাধানে আশু হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীর। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী দর্শনা পৌর শহরটি নানা দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল, ডিস্টিলারি, রেল বন্দর, অন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, পাইকারি কাঁচাবাজর, পশুহাট, সরকারি কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ ডজন খানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি অফিস। এছাড়াও শহরের পুরাতনবাজার, রেল বাজার, বাসস্ট্যান্ডসহ গোটা শহর জুড়েই রয়েছে কয়েক হাজার দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ শহরটিতে বর্তমানে লক্ষাধিক লোকের বসবাস। দীর্ঘদিন থেকে কেরু চিনিকলের বর্জ্যসহ পানি, আবাসিক এলাকায় মুরগী খামার, অপরিস্কার ড্রেন ও ডাস্টবিনের অভাবে খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে গোটা শহরই এখন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। কেরু চিনিকলটি প্রতিষ্ঠার সময় মিলের তরল বর্জ্য ও যন্ত্রপাতি ধোয়ামোছাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত আবাসিক এলাকার নোংরা পানি নিষ্কাশনের জন্য চিনিকল থেকে মাথাভাঙা নদী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাইপ লাইন বসানো হয়। এ পাইপ লাইনটি দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় প্রায় এ যুগ ধরে পাইপের বিভিন্ন অংশ ফেটে ও ভেঙে গিয়ে মিলের তরল বর্জ্যসহ নোংরা পানি বের হয়ে রেলবাজার সংলগ্ন বদের মা’র গর্ত, দক্ষিণ দিকের আশুর গর্র্ত, মোছাদ্দারুল মিয়ার পুকুর ভর্তি হয়ে ও পুরাতন বাজার হিন্দু পাড়ার রাস্তাসহ বসতবাড়ির উঠানে ভর্তি হয়ে গোটা এলাকায় মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এতে এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ পৌরসভা ও কেরু কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে নোংরা পানির দুর্গন্ধ দূর করতে এতে চুন ও ব্লিচিং পাওডার ছিটিয়ে দায়সারাগোছের কাজ করতে থাকে। সবশেষ এ অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করলে বছর খানেক আগে কেরু চিনিকল কর্তৃপক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে পাইপ লাইনটি মেরামত করে। কিন্তু চিনিকলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুর্নীতির সুযোগে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে পাইপলাইনটির সংস্কার কাজ শেষ করে বিল উত্তোলন করে। ফলে সংস্কারের কিছুদিনের মাথায় আবারোও পাইপ লাইনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে আগের অবস্থায় ফিরে গিয়ে অসহনীয় দুর্গন্ধে দর্শনা শহরবাসীকে অতিষ্ট করে তুলেছে। পাইপ ফেটে নোংরা পানি বের হয়ে পুকুর ভরে যাওয়ায় বেশ ক’বছর পুকুরে মাছ চাষ করতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পুকুর মালিক। এলাকার মানুষের গোসলসহ নানা প্রকার ধোয়া মোছার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কয়েক বছর আগে কেরু চিনিকল কর্তৃপক্ষ মিল এরিয়ায় বড় আকারের দুইটি খোলা জলাধার নির্মাণ করে সেখানে জৈব সারের কাঁচামাল মিলের বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা করে। খোলা অবস্থায় থাকার কারণে এ বর্জ্যের দুর্গন্ধে রাতদিন এলাকার বাতাস ভারি হয়ে থাকে। দিনের বেলা যত রোদ পড়ে এর পানি শুকিয়ে দুর্গন্ধের মাত্রা তত বাড়তে থাকে। এ দুর্গন্ধের কারণে কেরু আবাসিক এলাকা ছাড়াও শহরের আনোয়ারপুর, শান্তিপাড়া, পাঠানপাড়া, মোবারকপাড়া, ইসলামবাজার, পুনাতনবাজার, মহম্মদপুর, আজমপুর মহল্লাসহ গোটা শহর জুড়ে মারাত্মকভাবে বায়ু দুষণ ঘটছে। ফলে বায়ু দুষণজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকায় বসবাসকারী মানুষ। বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারে পৌরসভা ও কেরু চিনিকল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন ফল হয়নি বলে অভিযোগ অনেকের। বর্তমানে গোটা শহরের বিভিন্ন্ আবাসিক এলাকায় খোলা জায়গা ও বসতবাড়ীর ছাদে মুরগী খামার স্থাপন করে ব্যবসা শুরু করেছে অনেকে। অপরিকল্পিতভাবে এসব মুরগি খামার স্থাপনের ফলে এর দুর্গন্ধে খামার সংলগ্ন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মক বায়ুদুষণ ঘটছে। খামারের পার্শ¦বর্তী এলাকার বাসিন্দারা নিদারুন অসুবিধা ভোগ করলেও এসব প্রভাবশালী খামারীদের উদাসীনতার কাছে অনেকটাই নিরুপায়। এছাড়া শহরের আবাসিক এলাকাসহ হাটবাজার সংলগ্ন স্থানে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাকারীরা ও পথচারীরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তাই দুর্গন্ধময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। দর্শনা পৌরসভার মেয়র মহিদুল ইসলাম বলেন, কেরু চিনিকলের পাইপ ফেটে দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানি বের হয়ে ও খোলা ট্যাংকে রাখা বর্জের দুর্গন্ধে এলাকা দুষিত হওয়ার ব্যাপারে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলার পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি আরোও বলেন, অল্পদিনে যদি কেরু কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয় তবে পৌরসভার পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন