বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিচারক সঙ্কটে সাতক্ষীরা আদালতে ৫০ হাজার মামলার জট

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি : বিচারের আশায় বছরের পর বছর আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সাতক্ষীরা শহরের পারকুখরালী গ্রামের তাসলিমা খাতুন। কিন্তু বিচারক সংকটে তার দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলা নিষ্পত্তি হয়নি আজও। প্রতিনিয়ত আদালতে হাটতে হাটতে এখন তিনি নিঃস্ব প্রায়। শুধু তাসলিমা খাতুন নয়, এভাবে বছরের পর বছর বিচারের আশায় আদালতে হাটছেন জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। ফলশ্রæতিতে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বিচারের বাণী কাদছে নীরবে নিভৃতিতে। আর এর জন্য বিচারক সংকটকে দায়ী করছেন বিচারপ্রার্থী ভুক্তভোগী মানুষসহ আইনজীবীরা।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জজশিপে ১৪জন বিচারকের স্থলে কর্মরত আছেন ৯জন বিচারক। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, শ্যামনগর ও দেবহাটা সহকারী জজ এবং সহকারী জজের অতিরিক্ত আরও ১টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেসিতে ৯জন বিচারকের স্থলে কর্মরত রয়েছেন ৪জন বিচারক। এখানেও শূন্য রয়েছে ৫টি পদ। এর মধ্যে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ২টি এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। অপরদিকে, সাতক্ষীরা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে ৫০ হাজার ৩০৪টি মামলার জট লেগে আছে। বিচারক সংকটে এসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
সূত্র মতে, সাতক্ষীরা জজশিপে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৮ হাজার ৬৪০টি। এর মধ্যে দায়রা মামলা ৩ হাজার ১৮২টি, এসটিসি মামলা ২ হাজার ৮৮৪টি, বিশেষ মামলা ৩৫টি, ফৌজদারী আপিল মামলা ১ হাজার ১১টি, ফৌজদারী রিভিশন মামলা ১ হাজার ২৭৪টি, ফৌজদারি বিবিধ মামলা ১৬৮টি, এসিড অপরাধ মামলা ২৫টি, জননিরাপত্তা মামলা ২টি, সন্ত্রাস মামলা ২টি এবং শিশু মামলা রয়েছে ৫৭টি। এছাড়া সিভিল মামলা রয়েছে ২৫ হাজার ৩৪টি। এর মধ্যে আপিল মামালা ১ হাজার ২৫০টি, স্বত্ব/অন্যপ্রকার মামলা (দেওয়ানী) ৭ হাজার ৬৯৯টি, টাকার মামলা ১৬৫টি, এসসিসি মামলা ৮টি, পারিবারিক মামলা ৭৮৫টি, নির্বাচনী মামলা ১৭টি, মিস কেস ১ হাজার ১৪৬টি, জারী মামলা ৯২২টি, সিভিল রিভিশন মামলা ২৯৩টি, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ মামলা ৫ হাজার ৫৮টি এবং ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মামলা রয়েছে ৭ হাজার ৬৯১টি। অপরদিকে, সাতক্ষীরা ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৫টি এবং সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ২ হাজার ৮৪৫টি। ফলে, একদিকে যেমন মামলা জট লেগে আছে, অপরদিকে বিচারক সংকটে বিচার না পেয়ে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার উপর। বাড়ছে অপরাধ। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখিপুর গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, আমি ৮ বছর যাবত আদালতে হাটছি। এখন দেবহাটার সহকারী জজ পদই শূন্য। কবে নাগাদ মামলা নিষ্পত্তি হবে জানি না। মৃত্যুর আগে বিচার দেখে যেতে পারবো তো? প্রশ্নে করেন তিনি।
সাতক্ষীরা আদালতের অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বলেন, বিচারক সংকটের কারণে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিচারক নিয়োগ ব্যতীত এর কোন সমাধান আছে বলে মনে করি না। সাতক্ষীরা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) অ্যাডভোকেট ওসমান গণি বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারক সংকট এখন বড় সমস্যা। সাতটি উপজেলার চারটিতেই কোন বিচারক নেই। মানুষ বিচার না পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। তবে, সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একজন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করি কর্তৃপক্ষ অন্যান্য শূন্য পদগুলোও দ্রæত পূরণ করে দেবেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন