সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য বলে অভিমত দিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করে সংগঠনটি জানিয়েছে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ইতিবাচক। তবে গুরুতর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে আগামী দিনের জন্য। এগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, দক্ষ মানব সম্পদের অভাব, প্রবাসী আয়ে ধীর প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়ে ধীরগতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নাজুক বিনিয়োগ পরিবেশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সংগঠনটির মতে, ২০২১ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক লক্ষ্যপূরণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হবে, রফতানিতে গতি আনতে হবে, আরো বেশি করে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, অবকাঠামো সংকট দূর করতে হবে, গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং বাড়াতে হবে দক্ষ জনশক্তির যোগান। সংকটগুলোর সমাধান হলে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব হবে না। বলা বাহুল্য, এমন এক সময় এই পর্যালোচনাটি প্রকাশিত হয়েছে যখন দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিয়েছে সরকারি দল। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশিত হলেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল ইতোমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, এমনকি সংঘাতমূলক পরিস্থিতিও দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রধান পূর্বশর্ত। অন্যান্য পূর্বশর্ত অনুকূল থাকলেও প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতির লক্ষ্য অপূর্ণ থেকে যেতে পারে যদি রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানমূলক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা না থাকে। উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ গতিময় করতে হলে একটি নির্ভয় ও শান্ত পরিবেশ থাকতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি কিংবা অবকাঠামো উন্নয়নেও অনুকূল পরিবেশ দরকার। রাজনৈতিক পরিবেশ যদি অস্থির, অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় হয়ে উঠে তবে কোনো কিছুই যথাযথভাবে হবে না।
প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন লক্ষ্যপূরণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সেটা করতে হলে সর্বাগ্রে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, সরকারি দল ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। অথচ তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার অবস্থায় নেই। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, এই মামলা ও সাজার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবাদ নিশ্চিত ভূমিকা রেখেছে। দেশের বিভিন্ন মহলসহ বিদেশি মহলগুলোও প্রায় এ রকমই ধারণা পোষণ করে। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার ডিভিশন দেয়া নিয়ে কিংবা মামলার রায়ের নথিপত্রের নকল সরবরাহ করা নিয়ে যে রকম আচরণ ও টালবাহানা প্রদর্শিত হয়েছে তাতে এই ধারণা আরো মজবুত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির চেয়ারপার্সনকে কারাগারে রেখে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিয়ে কিংবা নিপীড়ন করে কি নির্বাচনের কাক্সিক্ষত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? সম্ভব কি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা? বিএনপি দেশের বৃহৎ দুটি দলের একটি। তাকে বাইরে রেখে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলে গণ্য হতে পারে না, যেমন ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন হয়নি। স্মরণ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির ওপর নজিরবিহীন দমন-পীড়ন হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এ সরকারের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৭৮ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আছে ৩৬টি মামলা। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে। এহেন বাস্তবতায় দলটির পক্ষে কীভাবে নির্বাচনে আসা সম্ভব, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে বা নির্বাচন করতে না পারে, তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও তা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। আর সে রকম হলে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা তো হবেই না, বরং তা আরো জটিল ও সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে।
এমসিসিআই’র পর্যালোচনায় যথার্থভাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। এ কথা আমরা উপযুক্ত উপলক্ষে বহুবার বলেছি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা কিংবা তার আশঙ্কা উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরাায়। এ পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি যতটুকু হয়েছে, যদি রাজনৈতিক সংকট না হতো, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহাবস্থানমূলক পরিবেশ বিদ্যমান থাকতো, গণতন্ত্রের চর্চা সঠিকভাবে হতো, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদল নিশ্চিত হতো তাহলে আরো অনেক বেশি উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হতো। প্রতিহিংসামূলক ও সংঘাতের রাজনীতি দেশ ও জাতিকে পিছিয়ে দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা রাজনৈতিক সংকটের দ্রæত অবসান, রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতি এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কামনা করি। সব কিছুর জন্যই একটা অনুকূল সময় থাকে। দেশের জন্য এখন অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠার সময়। এই সময়টাকে আমরা কাজে লাগাতে না পারলে দেশেরই সমূহ ক্ষতি হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে, জনগণের প্রত্যাশিত কল্যাণের প্রয়োজনে রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একান্তভাবেই অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। সরকার চাইলে সহজেই এটা হতে পারে। আমরা সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা কামনা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন