বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)’র সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল বারী বাবুকে গ্রেফতারে ডিবি পুলিশের বাড়াবাড়ির ঘটনা নাগরিক সমাজে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদাজিয়ার মুক্তির দাবীতে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা শফিউল বারী বাবুকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য সাদা পোশাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরী করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের মত একটি স্পর্শকাতর ও নিরপেক্ষ স্থান থেকে একজন রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে ডিবি পুলিশের এই লংকাকান্ড মেনে নেয়া যায়না। প্রথমত: বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সাইড লাইনে জাতীয় প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে সাদা পোশাকের ডিবি পুলিশের অস্ত্র উঁচিয়ে এমন সন্ত্রস্ত অবস্থা সৃষ্টির আদৌ কোন প্রয়োজন বা যৌক্তিক কারণ ছিলনা। একজন নিরস্ত্র রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করা গোয়েন্দা পুলিশের জন্য কোন কঠিন কাজ নয়। তাঁকে অনুসরণ করে যে কোন সময় তাকে গ্রেফতার করা যেত। সেখানে জাতীয় প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে অস্ত্র উঁচিয়ে একটি ত্রাসের বা আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে ডিবি পুলিশের এই সদস্যরা রীতিমত অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি চলার সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে সাংবাদিকদের পাশাপাশি শফিউল বারীসহ কিছু সংখ্যক বিএনপি নেতাও উপস্থিতি ছিলেন। হঠাৎ একদল সশস্ত্র ব্যক্তির প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং বাবুকে পাকড়াও করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যে সেখানে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরী হয়। ডিবি পুলিশের সদস্যরা সাদা পোশাকে অভিযান পরিচালনা করায় বোঝা যাচ্ছিলনা তারা পুলিশ না সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী। পরিচয় জানার আগেই কেউ একজন তাদের প্রতি মটরসাইকেলের হেলমেট ছুঁড়ে মেরেছিল বলে জানা যায়। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা প্রেসক্লাবের মত স্থান থেকে সন্ত্রাসী কায়দায় একজন রাজনৈতিক নেতাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে এভাবে বেশকিছ রাজনৈতিক নেতা অপহরণের শিকার হয়েছেন, যাদের কেউ কেউ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করেছে। বিরোধিদলীয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শফিউল বারী বাবু’র বিরুদ্ধে মামলা থাকতে পারে। তিনি কোন চিহ্নিত সন্ত্রাসী নন, নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হিসেবেই তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান করছিলেন। তাঁকে ধরতে ডিবি পুলিশের এমন সশস্ত্র কমান্ডো স্টাইলের অভিযানটি ছিল অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত।
প্রেসক্লাব নিরপেক্ষ ও স্পর্শকাতর স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে সাদা পোশাকধারি পুলিশের অস্ত্র উঁচিয়ে ছোটাছুটি করে অভিযান পরিচালনার ঘটনা নজিরবিহিন। সাদা পোশাকধারি পুলিশের অভিযান পরিচালনার নামে বিভিন্ন সময়ে অপহরণসহ নানাবিধ অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটনের অভিযোগ উঠায় ইতিপূর্বে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের অভিযান পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া এমনিতেই ওয়ারেন্টবিহীন গ্রেফতারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার আইনগত অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। সন্ত্রাস ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরীর মধ্য দিয়ে শফিউল বারী বাবুকে গ্রেফতার করা হলেও গত দুইদিনেও জানা যায়নি ঠিক কোন অভিযোগে বা কি মামলায় তাকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে। শাহবাগ ও রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে শাহবাগ থানা সুত্রে জানানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সচিত্র রিপোর্টে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন সাদা পোশাকের ব্যক্তি ফিল্মী স্টাইলে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রেসক্লাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং নিরস্ত্র ও বিচ্ছিন্ন শফিউল বারী বাবুকে পাকড়াও করে তার মাথায় ও শরীরে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে রেখেছে।জাতীয় প্রেসক্লাবের মত স্থানে দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতার প্রতি ডিবি পুলিশের এমন আচরণ কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশে কল্পনা করা যায়না। পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের নিরাপত্তার জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতনভাতা দেয়া হয়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে রেখে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাই তাদের দায়িত্ব। একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে আতঙ্কজনক অবস্থা তৈরী করা ডিবি পুলিশের কাজ হতে পারেনা। এমনিতেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা প্রবল। এ ধরনের ঘটনা পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষ এবং বিরোধি রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের আস্থাহীনতা আরো বাড়িয়ে দেবে। শফিউল বারী বাবুকে আটক করতে গিয়ে প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে ডিবি পুলিশের তুলকালাম কান্ড পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও ম্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি বলে জানা গেছে। নাগরিকের মানবাধিকার ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ডিবি পুলিশের এমন অভিযান বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আতঙ্ক সৃষ্টি নয়, গুম-অপহরণ, মনবাধিকার ও আইন লঙ্ঘনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল দায়িত্ব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন