আলী এরশাদ হোসেন আজাদ: মহান আল্লাহ্র কাছ থেকে বিশেষ কিছু পাওয়া ও চাওয়ার উপায় হলো দোয়া-মুনাজাত। দোয়া অর্থ ডাকা বা চাওয়া। অর্থাৎ নিরূপায়ভাবে মহান আল্লাহ্র কাছে নিজেকে নিবেদন করা এবং তাঁরই কাছে সাহায্য ও মঙ্গল কামনা করা। পারিভাষিক অর্থে দোয়া দু’প্রকার: ‘দোয়া-ই ইবাদাহ্’ অর্থাৎ সব ইবাদতই এক ধরনের দোয়া এবং ‘দোয়া-ই মাস্আলা’ অর্থাৎ কোন কিছু মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করা। পবিত্র হাদিসে দোয়াকে ‘মুখ্খুল ইবাদত’ বা ইবাদতের মগজ বলা হয়েছে (তিরমিযি)। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যার জন্য দোয়ার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে’ (তিরমিযি)। পবিত্র কুরআন, হাদিসের শিক্ষা ও বুজুর্গগণের বহুল চর্চিত-পরীক্ষিত আমল থেকে ‘দোয়ার শক্তি’ সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকেই বলে থাকেন দোয়ায় কী হয়, কী পেলাম? এ জিজ্ঞাসার উত্তর বুজুর্গানে দ্বীন বিভিন্নভাবে দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহামের (রহ.) এর বক্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রণিধানযোগ্য।
একদিন হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) বসরা শহরের এক বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন কিছু সাধারণ মানুষ এ মহান বুজুর্গের সান্নিধ্যে সমবেত হয়ে জানতে চাইলেন, হে ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহ.)! মহান আল্লাহ্র নির্দেশ, ‘তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব’ (মু’মিন: ৬০)। আমরা মহান আল্লাহ্কে ডাকি, তাঁর কাছে চাই- ‘দোয়া করি’ কিন্তু আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না...। তখন ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) বললেন: ‘দশটি বিষয়ে তোমাদের অন্তর মরে গেছে, সুতরাং তোমাদের দোয়া কীভাবে কবুল হবে? যথা- (১) তোমরা আল্লাহ্র সম্পর্কে জান অবগত, অথচ তাঁর বিধানসমূহ (তাঁর প্রদত্ত কর্তব্য) যথাযথভাবে পালন কর না। (২) তোমরা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াৎ কর (পড়) অথচ সে মোতাবেক আমল কর না। (৩) তোমরা তো দাবি কর যে তোমরা রাসুলকে (স.) ভালোবাস, অথচ তাঁর (স.) সুন্নাহ্কে মেনে চল না। (৪) তোমরা তো নিজেদেরকে শয়তানের শত্রু হিসেবে দাবি কর, অথচ তোমরা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ কর। (৫) তোমরা জান্নাতে যেতে উদগ্রীব-চরম উৎসাহী, অথচ তার জন্য সামান্য চেষ্টা-পরিশ্রম কর না। (৬) তোমরা তো জাহান্নামের ভয়ে অস্থির-আতঙ্কিত, অথচ পাপের কারণে প্রতিনিয়ত তোমরা জাহান্নামের কাছাকাছিই হচ্ছ। (৭) তোমরা তো স্বীকার কর (জানো, মানো) যে মৃত্যু অনিবার্য, অথচ তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখ না। (৮) তোমরা তো সব সময় অপরের দোষ বের করতে চেষ্টা কর, অথচ নিজেদের দোষত্রুটির বিষয়ে থাক চরম উদাসীন। (৯) তোমরা মহান আল্লাহ্র রহমত-অনুগ্রহ উপভোগ কর, অথচ তার জন্য শুকরিয়া আদায় কর না। (১০) আশ্চর্যজনক সত্য! তোমরা প্রত্যেক দিন অসংখ্য মৃতের দাফন সম্পন্ন কর, অথচ তা থেকে নিজেরা কোনো শিক্ষাই গ্রহণ কর না।’ (‘আল আদাবুল জাদিদ’, তাজকেরাতুল আওলিয়া ও অন্যান্য)।
বস্তুতঃ ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যই হলো নিজের নগণ্যতা প্রকাশ করে মহাপ্রভুর দরবারে হাজির হওয়া। এভাবে যতো বেশি নিজেকে নিবেদন করা সম্ভব ততই মহাপ্রভুর নৈকট্য পাওয়া সম্ভব। সুতরাং বেশি বেশি দোয়া-মুনাজাতে বেশি বেশি করে মহান আল্লাহ্র কাছে চাইলেই তো তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। মহান আল্লাহ্রই কথা, ‘যখন কোন প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দেই’ (বাকারা: ১৮৬)। অথচ হায়! আফসোস, আমরা তো অনেকেই মহান আল্লাহ্র কাছে চাওয়ার এবং তাঁকে ডাক দেওয়ার যোগ্যতা-ই হারিয়ে ফেলেছি।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ,
কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন